নিজেদের নির্বাচনের গল্প শোনালেন চুন্নু-বাদল রায়

বাদল রায়, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও আশরাফউদ্দিন চুন্নু। ফাইল ছবি
বাদল রায়, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও আশরাফউদ্দিন চুন্নু। ফাইল ছবি
>

ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নির্বাচনে আসতে দেখে নিজেদের নির্বাচন করার গল্প শোনালেন সাবেক তারকা দুই ফুটবলার বাদল রায় ও আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু।

ক্রীড়াঙ্গন থেকে রাজনীতিতে আসাটা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। তবে অবসরের আগেই নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র কিনে মাশরাফি একটু বাড়তি চমকই দিয়েছেন। আজ থেকে ২৭ বছর আগে, ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমনই চমক হয়ে এসেছিলেন দুই কিংবদন্তি ফুটবল-তারকা আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু আর বাদল রায়। খেলাপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় যেমন মাশরাফি মনোনয়নপত্র তুলেছেন, ঠিক তেমনি শেখ হাসিনাই ১৯৯১ সালের নির্বাচনে নিজের ইচ্ছায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তুলে দিয়েছিলেন আশরাফউদ্দিন চুন্নু ও বাদল রায়ের হাতে। তবে মাশরাফির সঙ্গে চুন্নু আর বাদল রায়ের পার্থক্য একটা জায়গায় থাকছেই। মাশরাফি রাজনীতির মাঠে একেবারে অনভিজ্ঞ হলেও চুন্নু আর বাদল রায়ের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে একটা সম্পর্ক আগে থেকেই ছিল। বাদল রায় লড়েছিলেন ডাকসু নির্বাচনেও।

১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল দারুণ উৎসবমুখর পরিবেশে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এরশাদ সরকারের পতনের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে একানব্বইয়ের ফেব্রুয়ারিতে। আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনের মনোনয়নে তারকাখ্যাতিকে কিছুটা প্রাধান্য দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে ফুটবলকে বিদায় জানান চুন্নু। বাদল অবসর নেন ১৯৯০ সালে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি, বিশেষ করে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এই দুই ফুটবলারের ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তাঁর ডাকেই আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেছিলেন এ দুজন। তবে চুন্নু নারায়ণগঞ্জ থেকে আর বাদল কুমিল্লার দাউদকান্দির আসনে হেরে গিয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত।

আগেই বলা হয়েছে চুন্নু আর বাদল, দুজনই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন চুন্নু। বাদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮০ সালে ডাকসু নির্বাচন করে ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। খেলোয়াড়ি জীবনেই ছাত্র রাজনীতির এই অভিজ্ঞতা দারুণ কাজে লেগেছিল এ দুজনের।

ছাত্ররাজনীতি করলও দুই ফুটবলারের কেউই ভাবেননি যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। বাদল স্মৃতি হাতরে বললেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে বেশ অবাকই হয়েছিলেন তিনি, ‘নির্বাচনের আগে একদিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ডাক পড়ল। আপা বললেন, নির্বাচন করতে হবে। আমি তো অবাক। তখন কেবল বিয়ে করেছি। স্ত্রীও অসুস্থ। আর সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতাই বা কোথায় আমার? আপা বললেন, মানুষ চেয়ে নমিনেশন পায় না, আর আমি তোকে দিচ্ছি। নির্বাচন তোকে করতেই হবে। দাউদকান্দিতে তুই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি গড়ে তোল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সব সময়ই বিশ্বাসী ছিলাম। আপার নির্দেশে রাজি হয়ে যাই। তবে দুর্ভাগ্য নির্বাচনে জিততে পারিনি। তবে এরপর আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হই।’

চুন্নুর গল্পটাও একই রকম, ‘আপার সঙ্গে খুব সম্পর্ক ছিল। আবাহনীতে খেলেছি বলেই হয়তো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির কথাটাও আপা জানতেন। দুইয়ে দুইয়ে মিলে যাওয়ায় নির্বাচন করি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন (বর্তমানে শামীম ওসমানের আসন)। কিন্তু নির্বাচনে জিততে পারিনি। আমি জিততে পারতাম। কিন্তু দলের মধ্যে কিছু বিদ্রোহী লোকজন আমাকে জিততে দেয়নি। তবে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী এই আসন থেকে যত ভোট পেয়েছিল, আমি হারার পরেও তার চেয়ে অনেক বেশি ভোট পাই।’

মাশরাফির নির্বাচন নিয়ে দুজনই জানিয়েছেন শুভ কামনা। তাঁরা দুজনই খুশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দলের হয়ে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই ক্রীড়া তারকা নির্বাচন করায়। তবে দুজনই মাশরাফিকে পরামর্শ দিয়েছেন মানুষের কাতারে হাঁটার। রাজনীতির মাঠটা যে অনেক বন্ধুর, সেটিও মাশরাফিকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে চুন্নুর পরামর্শ, ‘তারকারা সাধারণত সালাম আর বাহবা নিয়ে অভ্যস্ত। আমি মাশরাফিকে বলব মানুষের সঙ্গে মিশতে। মানুষের কাতারে হাঁটতে।’