মেসির সেই ন্যাপকিন এখন কোথায়?

স্প্যানিশ লা লিগায় গত মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘আলফ্রেড ডি স্টেফানো’ ট্রফি হাতে মেসি। ছবি: এএফপি
স্প্যানিশ লা লিগায় গত মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘আলফ্রেড ডি স্টেফানো’ ট্রফি হাতে মেসি। ছবি: এএফপি
>বার্সেলোনার সঙ্গে লিওনেল মেসি প্রথম চুক্তি করেছিলেন একটি ন্যাপকিন কাগজে। সেই ন্যাপকিন এখন কোথায়?

গল্পটা প্রায় সবাই জানে। কিন্তু সেই চতুর্ভূজ আকৃতির ন্যাপকিনের খোঁজ কেউ রাখেনি। সেই ন্যাপকিন, যা এখন ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা রূপকথার ধারক—এক অনন্য দলিল।

২০০০ সালের কথা। লিওনেল মেসি তখন ১৩ বছরের বালক। সেই বছরের সেপ্টেম্বরে পরিবার নিয়ে বার্সেলোনায় আসেন মেসি। সঙ্গে ছিলেন দুই আর্জেন্টাইন প্রতিনিধি ফাবিয়ান সোলদিনি ও মার্টিন মনতেরো আর স্পেনে যাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল—হোরাশিও গ্যাগিওলি। বার্সার ট্রায়ালে মেসি যথারীতি চমকে দিলেন সবাইকে। তাঁর বাবা-মা চুক্তির আশা নিয়ে ফিরল রোজারিওতে। হুয়ান গাসপোর্ত তখন কাতালান ক্লাবটির সভাপতি। তিনি ভেবেছিলেন, ছেলেটির সঙ্গে সেই মুহূর্তে কোনো চুক্তিতে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কিন্তু মরিয়া গ্যাগিওলি হুমকি দিলেন, অন্য ক্লাব এই খুদে প্রতিভাকে নিয়ে নেবে। তা রিয়াল মাদ্রিদও হতে পারে!

সেই বছরের ১৪ ডিসেম্বর। বার্সার টেকনিক্যাল সেক্রেটারি কার্লোস রেক্সাসের সঙ্গে পম্পেইয়া দেল মন্তেইচ ক্লাবে টেনিস খেলছিলেন গ্যাগিওলি। খেলা শেষে দুজন ঢুঁ মারলেন ক্লাবের ক্যাফেটেরিয়ায়। মধ্যাহ্ন ভোজন করবেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন হোসে মারিয়া মিনগুয়েলা—পেশায় তিনি খেলোয়াড়দের এজেন্ট। বার্সাকে নিয়মিতই খেলোয়াড় জোগান দেন। মিনগুয়েলা আর গ্যাগিওলি মিলে চেপে ধরলেন রেক্সাসকে। মেসিকে সই করাও। ছেলেটির অমিত প্রতিভা!

এই সেই ন্যাপকিন, যেখানে বার্সার সঙ্গে মেসির প্রথম চুক্তিপত্র লেখা হয়েছিল। ছবি: টুইটার
এই সেই ন্যাপকিন, যেখানে বার্সার সঙ্গে মেসির প্রথম চুক্তিপত্র লেখা হয়েছিল। ছবি: টুইটার

রেক্সাস আর সহ্য করতে পারলেন না। নাচার হয়ে তিনি হাত মোছার একটি ন্যাপকিন পেপার তুলে নিয়ে লিখলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর, ২০০০ সালে বার্সেলোনায় মিনগুয়েলা, হোরাশিও আর বার্সার টেকনিক্যাল সেক্রেটারি কার্লোস রেক্সাসের উপস্থিতিতে পূর্ণ দায়িত্বের সঙ্গে কিছু অমত থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট অঙ্কে লিওনেল মেসিকে সই করানোর ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়া গেল।’ এই কথার নিচে সই করেছিলেন রেক্সাস, মিনগুয়েলা ও গ্যাগিওলি।

সপ্তাহখানেক পর সেই ন্যাপকিনকে নোটারির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করেন রেক্সাস। এরপরই বার্সার সঙ্গে মেসির পথচলার শুরু। রূপকথার মতো এই পথচলার প্রতিটি বাঁক, গলি-উপগলি আর তস্য গলি সমন্ধে আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু সেই ন্যাপকিনটা কোথায়, কার কাছে, তা জানেন কজন?

আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘ইনফোয়াবে’ জানিয়েছে ন্যাপকিনের খবর। ওটা এখন গ্যাগিওলির কাছে সংরক্ষিত আছে। অ্যান্ডোরায় বসবাস করা গ্যাগিওলি দেশটির ক্রেডিট ব্যাংকে তা জমা রেখেছেন। তিনি এখনো ফুটবলারদের প্রতিনিধি। আপাতত মার্কো এসেনসিও সহ আরও কয়েকজন ফুটবলারের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। মেসির প্রথম পেশাদার চুক্তি ধারণ করা সেই ন্যাপকিনটি গ্যাগিওলির কাছে থেকে নেওয়ার জন্য অনেকে লাখ লাখ ইউরো দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু গ্যাগিওলি হাতছাড়া করেননি। তাঁর মতে, ‘বার্সার জাদুঘরে এই ন্যাপকিন সংরক্ষণ করা উচিত। ক্লাবটির আধুনিক ইতিহাস পাল্টেছে ওই এক টুকরো ন্যাপকিন।’

কয়েক বছর আগে গ্যাগিওলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বার্সা। ক্লাবটির যুক্তি ছিল, মেসির প্রথম চুক্তিপত্রটি ‘গোপনীয়’। এটা প্রদর্শনের জন্য না। অন্তত মেসি অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত তা গোপন থাকাই ভালো। গ্যাগিওলি তারপর থেকে ন্যাপকিনটি সযত্নে তুলে রেখেছেন। মেসি তো একদিন অবসর নেবেন। সেদিন না হয় ব্যাংকের ভল্ট খুলে ন্যাপকিনটি বের করা যাবে...।