ক্যারিবীয়দের 'কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সিরিজ' মুশফিকদের

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজেও ভরসার নাম মুশফিক। ছবি: প্রথম আলো
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজেও ভরসার নাম মুশফিক। ছবি: প্রথম আলো
>

গত জুলাইয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে দুটি টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। এবার ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেয়ে সাকিবের দল কি পারবে সেই হতাশা ভুলতে?

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটের হারটাকে এক পাশে রাখুন। ঘরের মাঠের টেস্টে বাংলাদেশ কি এখন খুব খারাপ দল? গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির সিরিজের প্রথম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ড্র, এর আগে গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ। আরেকটু পেছন ফিরে গেলে ২০১৬-এর অক্টোবরে ঢাকা টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারানো বা তারও আগের কিছু জয় আর ড্র বলে দিচ্ছে, নিজেদের জল-হাওয়ায় টেস্টেও বাংলাদেশ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর মতো দল হয়ে গেছে।

তবু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কাল থেকে শুরু হতে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের জন্য আত্মবিশ্বাসটা নিতে হচ্ছে পরোক্ষভাবে। যখন থেকে নিজেদের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটটাও একটু একটু ভালো খেলতে শুরু করল বাংলাদেশ দল, এরপর যে বাংলাদেশে টেস্ট খেলতেই আসেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ! বাংলাদেশে এসে খেলা তিনটি টেস্ট সিরিজের সর্বশেষটিও তারা খেলে গেছে ২০১২ সালের নভেম্বরে। ব্যাপারটা অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই সমস্যায় ফেলার কথা বেশি। ছয় বছর বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলতে এসে একটা দেশের উইকেট, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারাটাও তো একটা ব্যাপার।

চ্যালেঞ্জ থাকবে বাংলাদেশ দলের জন্যও। ঘরের মাঠের টেস্টে না হয় ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে নিকট অতীত নেই, কিন্তু বাংলাদেশ দল তো এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছে! ২০০৯ সালে দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-০-তে সিরিজ জিতে আসার পর এখন পর্যন্ত আরও দুবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। দুবারই ফিরতে হয়েছে হতাশার গভীর ক্ষত নিয়ে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের আগে বাংলাদেশ যে আটটি টেস্ট ইনিংসে ২০০ ছুঁতে পারেনি, তার চারটি ইনিংসই গত জুলাইয়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানে অলআউটের লজ্জা এলোমেলো করে দেয় পুরো সিরিজটাই। এর আগে হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়েছিল ২০১৪ সালের ক্যারিবীয় সফর থেকেও।

ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম তো তাই বলেই দিয়েছেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই সিরিজটা তাদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সিরিজ।’ তাতে যদি ক্যারিবীয় হতাশা কিছুটা ভোলা যায়। গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যে বাংলাদেশকে দেখা গেছে, সেটিই যে দলটার আসল চেহারা নয়, তা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাল মাঠে নামবে সাকিব আল হাসানের দল। সেই ক্ষতগুলোর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিততে না পারার ব্যর্থতা। মিরপুর টেস্টে জিতলেও সিলেটের শোচনীয় পরাজয় ভোলাতে তা যথেষ্ট নয় মোটেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে সেটিকে সাময়িক দুর্গতি হিসেবে প্রমাণ করার দায় আছে বাংলাদেশের। সঙ্গে থাকবে অন্তত ঘরের মাঠে যে বাংলাদেশ এখন রুখে দাঁড়ানোর মতো দল, সেটি প্রমাণের তাড়না।

হাতের চোট কাটিয়ে অধিনায়ক সাকিবের ফেরা নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস বাড়াবে বাংলাদেশ দলের। কিন্তু তামিম ইকবালের অভাব রয়ে যাচ্ছে এই সিরিজেও। হাতের চোট পুরোপুরি ভালো না হওয়ায় চট্টগ্রাম টেস্টের দলে রাখা হয়নি তাঁকে। ১৪তম সদস্য হিসেবে পরশু ডাকা হয়েছে সাদমান ইসলামকে। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই দৃষ্টিকাড়া ২৩ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ওপেনার ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফরমার। প্রস্তুতি ম্যাচের ৭৩ রানের ইনিংসটি দেখে তাঁকে দলে নিয়েছেন কোচ স্টিভ রোডস। তবে চট্টগ্রামেই সাদমানের টেস্ট অভিষেক হবে কি না, সেটি ঠিক করার আগে দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ওপেনিং জুটিতে দুটিই অনভিজ্ঞ মুখ রাখা হবে, নাকি একজন অনভিজ্ঞের সঙ্গে থাকবেন একজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানও?

বুঝতেই পারছেন গত বছর অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সর্বশেষ টেস্ট খেলা সৌম্য সরকারের ফেরাটা নিশ্চিত। কিন্তু ২০১৫ সালে টেস্ট অভিষেক হলেও সৌম্য এখন পর্যন্ত মোটে ১০টি টেস্ট খেলেছেন। তাঁর সঙ্গে সাদমানকে জুড়ে দিলে পুরো ওপেনিং জুটিটাই হয়ে পড়ে অনভিজ্ঞ। অভিজ্ঞতার ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে যায় ইমরুল কায়েস সৌম্যের সঙ্গী হলে। কিন্তু এই বাঁহাতির টেস্টের ফর্ম যে মোটেই ভালো যাচ্ছে না! ওপেনিং জুটিতে সৌম্যের সঙ্গী ইমরুল, না নবাগত সাদমান—এই প্রশ্নটি তাই কাল পর্যন্তও ঘুরপাক খাচ্ছিল বাংলাদেশ শিবিরে।