প্রিয় দলের খেলা দেখতে খেলনার দোকান!

টিকিটের পয়সা জোগাড় করতে দোকান দিয়েছে রেনজো। ছবি: ফেসবুক
টিকিটের পয়সা জোগাড় করতে দোকান দিয়েছে রেনজো। ছবি: ফেসবুক
>

রেনজো জুনতোর বয়স মাত্র ছয় বছর। সে রিভারপ্লেটের সমর্থক। কোপা লিবার্তোদোরেস ফাইনালে গ্যালারিতে বসে প্রিয় দলের খেলার দেখার টিকিটের পয়সা জোগাড় করতে সে চমকপ্রদ এক কাজ করেছে

বোকা জুনিয়র্স-রিভারপ্লেট মুখোমুখি হলে আর্জেন্টিনা দেশটিই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে! এ যেন নিছক এক ফুটবল ম্যাচের চেয়েও বড় কিছু! পরতে পরতে উত্তেজনা। মর্যাদার প্রশ্ন। এই ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার ব্যাপারটি বিচার করতে কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে—এক জরিপে দেখা গেছে, এই দুটি ক্লাব আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বেশি জনসমর্থনপুষ্ট। পুরো জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ মানুষ সমর্থন করে বোকা জুনিয়র্সকে, ২৪ শতাংশ রিভারপ্লেটকে। অর্থাৎ জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই এই দুই ক্লাবের সমর্থন।
রেনজো জুনতোর বয়স ৬। সে রিভারপ্লেটের দারুণ সমর্থক। দলকে ভালোবেসে যে কাজ সে করেছে, সেটি চোখে জল এনে দেবে এমনকি বোকা-সমর্থকদেরও!
বোকা-রিভারপ্লেট দ্বৈরথে এত বেশি সংঘর্ষ হয় যে এখন বোকা জুনিয়র্সের মাঠে খেলা হলে রিভারপ্লেটের সমর্থকেরা সেটি দেখতে যেতে পারেন না। রিভারপ্লেটের মাঠে খেলা হলে একই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হয় বোকা জুনিয়র্স-সমর্থকদের ক্ষেত্রেও। শেষবার এই দুই দল কোপা লিবার্তোদোরেসে মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৫ সালে। পুরো ৯০ মিনিট খেলাই হতে পারেনি বিশৃঙ্খলার কারণে! এবার উত্তেজনাটা কোন পর্যায়ে, সেটি আরেকবার জানান দিয়েছে দুই দলের দুই সমর্থক। কোন দল ভালো, এই বিতর্কে আর্জেন্টিনার এক লোক তাঁর বন্ধুর বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে!


এবার কোপা লিবার্তোদোরেস ফাইনালের প্রথম লেগে বোকার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে রিভারপ্লেট। ফিরতি লেগ রিভারপ্লেটের মাঠ এস্তাদিও মনুমেন্টালে আগামী রোববার। রেনজো এই ম্যাচটা গ্যালারিতে বসে দেখতে মরিয়া। এ জন্য কিনতে হবে টিকিট। ওদিকে ফিরতি লেগের টিকিট যেন সোনার হরিণ! ফিরতি লেগের টিকিট ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি শেষ। অনলাইন কিংবা মনুমেন্টালের বুকিং অফিসেও টিকিট নেই। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মনুমেন্টালের বুকিং অফিসের সামনেই কয়েকটি অপরাধী চক্র (গ্যাং) বসে অপেক্ষা করে সমর্থকেরা কখন টিকিট কিনবেন। কেনা মাত্রই তাঁদের ওপর হামলে পড়ে টিকিট ছিনিয়ে নেয় তারা। টিকিট না পাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি—তা জেনেও রেনজো পিছপা হয়নি। এমনকি সে এ জন্য তার বাবা-মায়ের কাছেও কোনো সাহায্য প্রার্থনা করেনি!


পরিণত বয়সী সমর্থকদের কাণ্ডকারখানার সঙ্গে তুলনা করলে রেনজো আসলে তেমন কিছুই করেনি। কিন্তু রেনজোর বয়সী কেউ যখন গ্যালারিতে বসে প্রিয় দলের খেলা দেখার টিকিটের পয়সা জোগাড় করতে নিজের খেলনাপাতি সাজিয়ে দোকান দিয়ে বসে, তখন চমকে যেতেই হয়। হ্যাঁ, রেনজো ঠিক এ কাজই করেছে। পারানায় নিজের বাসার সামনেই দোকান বসিয়েছিল রেনজো। বেচাবিক্রির জিনিসপত্র বলতে তার নিজের খেলার সামগ্রী। ছোট্ট একটা টেবিলক্লথ দিয়ে মুড়িয়ে তার ওপর সে তার মালপত্র সাজিয়েছে। আর টেবিলের সঙ্গে একটি সাইনবোর্ড, ‘এল মনুমেন্টালে যাওয়ার চেষ্টা করতে আমি নিজের খেলনাগুলো বিক্রি করছি।’

রেনজোর বাবা-মা ছেলের এই কাণ্ড দেখে আবেগমথিত হয়ে পড়েন এবং ছেলের দোকানদারির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। ছবিটা ভাইরাল হতে মোটেও সময় লাগেনি এবং তা পারানার রিভারপ্লেট সমর্থকগোষ্ঠী সভাপতির চোখে পড়ে। রিভারপ্লেটের জার্সিতে রেনজোর দোকানদারির সেই ছবি দেখে পারানা সমর্থকগোষ্ঠীর সভাপতি এমানুয়েল হুলিয়ান বের্নাদও নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। দলের সমর্থকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তিনি দুটি টিকিট পাঠান রেনজোর বাড়িতে। একটি রেনজোর জন্য আরেকটি তাঁর মায়ের জন্য—যেন রেনজোকে সঙ্গে করে মাঠে নিয়ে যেতে পারেন তার মা।


চমকের এখানেই শেষ নয়, রেনজোর সেই ছবি দেখেছেন উরুগুয়ে কিংবদন্তি এবং রিভারপ্লেটের সাবেক ফরোয়ার্ড এনজো ফ্রান্সেসকোলি। তিনি রিভারপ্লেটের হ্যাট এবং নিজের সই করা একটি জার্সি এই খুদে ভক্তকে পাঠিয়ে বলেছেন, ‘ম্যাচের ফল ছাপিয়ে রিভারপ্লেট যে আমাদের আবেগের সঙ্গে বহমান, তা সব রিভার সমর্থককে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য রেনজো তোমাকে ধন্যবাদ।’