লড়াই নাকি প্রতিশোধ

>গত ক্যারিবীয় সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ভালো করলেও টেস্ট সিরিজটা হারে যাচ্ছেতাই ভাবে। চার মাস পরে নিজেদের আঙিনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাকিবরা পারবেন প্রতিশোধ নিতে?

স্টিভ রোডসকে কথাটা যতবার জিজ্ঞেস করা হয় ততবারই বলেন, 'আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন সকাল খুব কম কোচের আসে!' সে এক সকাল বটে। রাত হলে বলা যেত 'কাল রাত'। অ্যান্টিগার সেই সকালকে বাংলাদেশ কী বলবে? হতাশার সকাল, দুঃসহ সকাল, বিপর্যয়ের সকাল, ভুলে যাওয়ার সকাল। যা ইচ্ছে বলা যায়, তবে বাংলাদেশ কখনো চাইবে না, অ্যান্টিগার সকালটা ফিরে আসুক।

অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম সেশন পুরোটাও খেলতে পারেনি, চোখের পলকে গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। পেতে হয় ৪৩ রানে অলআউটের লজ্জা। কোচ হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম সকালটা এমনই যন্ত্রণায় কেটেছে রোডসের। সেই জ্বালা জুড়োবে কি তাঁর, অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম সেশনের 'ট্রমা' থেকে বাংলাদেশ পুরো সফরে বেরই হতে পারেনি। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুটি টেস্টেই হেরেছে বড় ব্যবধানে।

চার মাসের মধ্যে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলাদেশ পেয়েছে আঙিনায়। উইন্ডিজের বিপক্ষে শুধু লড়াই নয়, কাল চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ খেলতে নামবে 'প্রতিশোধে'’র লক্ষ্যে। ক্রিকেটীয় সৌজন্য মেনে আজ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সরাসরি প্রতিশোধ বলতে চান না। তবে ক্যারিবীয়দের সঙ্গে এবার দুর্দান্ত একটা লড়াইয়ের অপেক্ষায় তিনি, ‘আমাদের যেহেতু র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই দল কাছাকাছি। স্বাভাবিকভাবে ওরা যেমন ওদের দেশের মাঠে ভালো করতে পেরেছে। আমাদেরও লক্ষ্য থাকবে এখানে আমরা একরকমই ভালো করি ।'

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি শেষ, এবার লড়াইয়ের অপেক্ষা। ছবি: প্রথম আলো
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি শেষ, এবার লড়াইয়ের অপেক্ষা। ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ সকালে অবশ্য দুই দলের 'সহাবস্থান' দেখা গেল। একই সময়ে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অতিথি সৎকার করতে গিয়ে নেটের সংকুলান হয়নি, বাংলাদেশ দলের কাউকে কাউকে স্টেডিয়ামের পেছনে বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে ছুটতে দেখা গেল। প্রস্তুতির কোনো খামতি রাখা যাবে না। যদিও অধিনায়ক সাকিবকে সেভাবে অনুশীলন করতে দেখা যায়নি। গত চার দিন অনুশীলন করার পর আজ যেন একটু দম নিলেন প্রায় তিন মাস পর মাঠে ফেরা সাকিব। কী মিল, নতুন করে টেস্ট অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর সাকিব ফিরেছিলেন গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়েই। ফের চোটে পড়ার পর বাঁহাতি অলরাউন্ডার আবারও ফিরছেন সেই উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে। ক্যারিবীয় সফরে সেই ফেরা সুখকর হয়নি অধিনায়ক সাকিবের। এবার ফেরাটা তিনি স্মরণীয় করে রাখতে চান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকাতে বাংলাদেশ চেনা পথেই হাঁটছে। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের স্পিন জালে আটকাতে চায় বাংলাদেশ। সাকিবকে নিয়ে সামান্য যে অনিশ্চয়তার মেঘটা আছে, সেটি সরে গেলে কাল বাংলাদেশ স্কোয়াডে চার বিশেষজ্ঞ স্পিনার দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সাকিবের সঙ্গে তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ আর থাকতে পারেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা নাঈম হাসান। দলীয় সূত্র বলছে, উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের যদি স্পিন আক্রমণে কাবু করতে হয়, তবে বাংলাদেশের এক পেসার নিয়ে নামার সম্ভাবনা বেশি। কৌশলগত কারণে চট্টগ্রাম টেস্টে মোস্তাফিজুর রহমানের একাদশের বাইরে রাখার কথা শোনা যাচ্ছে। একাদশে সুযোগ পেতে পারেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা সাদমান ইসলামও।

বোলিং আক্রমণে স্পিনই যদি মূল ভরসা হয়, চট্টগ্রামের উইকেটের চরিত্র কী হতে পারে, আঁচ করা কঠিন নয়। সাকিবের কথাতেও সেটির ইঙ্গিত রয়েছে, 'আমার মনে হয় কিউরেটররা ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করছেন। উইকেট নিয়ে আসলে খুব বেশি কথা বলার নেই। দুই দলের সমান সুযোগ থাকবে। আমার কাছে (এখন পর্যন্ত) মনে হচ্ছে উইকেটে বল ঘুরতে পারে। যত দিন যায় অনেক সময় আস্তে আস্তে আরও ভালো হতে থাকে উইকেট। আশা করি তেমন কিছু হবে না।'

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেটের কথায় সাকিবের কথারই পুনরাবৃত্তি, 'যেটা ভেবেছিলাম তেমনই উইকেট তৈরি করা হয়েছে। প্রথম ঘণ্টায় কিছুটা মুভমেন্ট থাকতে পারে। তবে চিরাচরিত বাংলাদেশের উইকেট যেমন হয়, তেমনই হবে।'

উইকেট যেমনই হোক, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে বড় চ্যালেঞ্জ জানাতেই বাংলাদেশে এসেছে, সেটি মানছেন সাকিব, 'আমরা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে প্রথম টেস্টে খুব ভালো করিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে আরও চ্যালেঞ্জিং হবে, শতভাগ নিশ্চিত। তবে আমরা এই চ্যালেঞ্জ নিতে অভ্যস্ত।'

শীত আসি আসি করছি। সাগরিকার বাতাসে কেমন হিম হিম ভাব। আকাশে মেঘের আনাগোনা নেই। উপভোগ্য এই আবহাওয়ায় বাংলাদেশ নিশ্চয়ই অ্যান্টিগার সকালটা ফিরিয়ে আনবে না। বাংলাদেশের দর্শকেরা আশায় থাকবেন, জহুর আহমেদে সাকিবরা উপহার দেবেন অনিন্দ্য সুন্দর এক সকাল। যে সকাল শুধু এ বার্তাটাই দেবে, ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রতিশোধ নেওয়ার অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশ।