জুনিয়রকে আর 'ছোট' থাকতে দিলেন না নাঈম

প্রথম দিনে ব্যাটিংয়ে চমকে দিয়েছিলেন, তবে আসল চমকটা বল হাতেই দেখালেন নাঈম। ছবি: প্রথম আলো
প্রথম দিনে ব্যাটিংয়ে চমকে দিয়েছিলেন, তবে আসল চমকটা বল হাতেই দেখালেন নাঈম। ছবি: প্রথম আলো
>
  • সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে অভিষেকে ৫ উইকেট পেয়েছেন নাঈম
  • বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবেও ৫ উইকেটের রেকর্ড এখন নাঈমের
  • ৫ উইকেট পাওয়ায় বিশ্বে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ বোলার নাঈম

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেই আলোচনায় এসেছেন নাঈম হাসান। অভিষেক ইনিংস খেলছেন, কাগজে-কলমে টেলএন্ডার। তবু তাঁর ব্যাটিং থেকে যে আত্মবিশ্বাসী ছটা ঠিকরে বেরোচ্ছিল তাতে ভালো কিছুরই ইঙ্গিত মিলছিল। প্রথম দিনের সে ইঙ্গিত যে ভুল ছিল না, সেট আজ রেকর্ড গড়েই বোঝালেন নাঈম। অষ্টম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে অভিষেক ম্যাচে ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড গড়েছেন এই অফ স্পিনার।

বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেকে ৫ উইকেট প্রাপ্তি যে নতুন কিছু নয় । বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টেই সে কীর্তি গড়েছেন নাঈমুর রহমান। পরের টেস্টেই সে কীর্তি গড়েছেন মঞ্জুরুল ইসলাম। বাংলাদেশি পেসারদের সবেধন নীলমণি হয়ে আছেন মঞ্জুরুল। নাঈমুর বহুদিন সঙ্গীহীন দিন কাটাতে হয়েছে। ২০০৯ সালে কিংস্টনে মাহমুদউল্লাহর সুবাদে সে গেরো কাটার পর থেকেই অবশ্য বাংলাদেশকে আর হতাশ হতে হচ্ছে না। কখনো ইলিয়াস সানি, সোহাগ গাজী, কখনো বা তাইজুল ইসলাম এসেই অভিষেকে ৫ উইকেট প্রাপ্তি করে দেখিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজের ৬ উইকেট প্রাপ্তি এক অনন্য রেকর্ড এনে দিয়েছে। গত ১০ বছরে অন্য কোনো দেশের অভিষিক্তরা বাংলাদেশের সমান ৫ উইকেট প্রাপ্তির ঘটনা ঘটাতে পারেনি।

তাই নাঈমের ৫ উইকেট প্রাপ্তি আনন্দ এনে দিলেও ঠিক বিস্ময় জাগায় না। যেটা বিস্ময় জাগায়, সেটা হলো তাঁর বয়স। ১৭ বছর ৩৫৫ দিনে অভিষিক্ত এই অফ স্পিনার টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বল হাতে নিয়েই আজ পেয়েছেন ৫ উইকেট। রোস্টন চেজকে ফিরিয়ে দিয়ে নেমেছিলেন উইকেট উৎসবে, থেমেছেন ওয়ারিক্যানকে বোল্ড করে। মাঝে শুধু শিমরন হেটমায়ারই মিরাজের বলে আউট হতে পেরেছেন, অন্য সবাই পরাস্ত নাঈমের স্পিনে। এতেই রেকর্ড বই থেকে ছিটকে গেছেন এনামুল হক জুনিয়র। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশকে প্রথম টেস্ট জিতিয়েছিলেন মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে। সেদিন এই বাঁ হাতি স্পিনারের বয়স ছিল ১৮ বছর ৩২ দিন। সর্বকনিষ্ঠ ৫ উইকেট পাওয়া বাংলাদেশি বোলার।

গত এক যুগে এ রেকর্ডে তাঁর ধারে কাছে যেতে পেরেছেন শুধু একজন। চট্টগ্রামেরই আরেক ভেন্যুতে অভিষেকে ৬ উইকেট প্রাপ্তির দিন মিরাজের বয়স ছিল ১৮ বছর ৩৬১ দিন। আজ এনামুলের রেকর্ড থেকে ৪১ দিন কমিয়ে দিয়েছেন নাঈম। মাত্র ১৭ বছর ৩৫৬ দিনে প্রথমবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়ার কীর্তি তাঁর। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট পেয়েছেনই মাত্র দুজন। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট পাওয়ার সময় মোহাম্মদ আমিরের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৫৭ দিন। আর রেকর্ডটাও আরেক পাকিস্তানির দখলে, নাসিম-উল-গনি। ১৯৫৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেট পাওয়ার সময় বাঁ হাতি স্পিনারের বয়স ছিল ১৬ বছর ৩০৩ দিন!

কিন্তু এ দুজনের কেউই অভিষেকেই আলো ছড়াতে পারেননি। অভিষেকে আলো ছড়ানোর সে রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্সের (১৮ বছর ১৯৩ দিন)। কিন্তু কামিন্সও নাঈমের চেয়ে এখন পিছিয়ে ২০২ দিন। সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে অভিষেকেই ৫ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড এখন তাই নাঈমের।

অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা যেভাবে আত্মাহুতির দৌড়ে নেমেছেন, তাতে এ রেকর্ড নিয়ে তৃপ্তি পাওয়ার সময় পাবেন বলে মনে হচ্ছে না নাঈম।