দেশের মাটিতে টেস্টে কেন দর্শকখরা?

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টেও খাঁ খাঁ করেছে গ্যালারি। বাংলাদেশের মাটিতে টেস্টে দর্শকশূন্যতা কাটছে না। ছবি: প্রথম আলো
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টেও খাঁ খাঁ করেছে গ্যালারি। বাংলাদেশের মাটিতে টেস্টে দর্শকশূন্যতা কাটছে না। ছবি: প্রথম আলো
দেশের মাঠে বাংলাদেশ টেস্টেও ধারাবাহিক ভালো করতে শুরু করেছে। ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে। ঐতিহাসিক এই জয়ের সাক্ষী হতে মাঠে কজন দর্শক এসেছেন? চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের জয় মাঠে বসে দেখেছে বড়জোড় হাজার পাঁচেক দর্শক। টেস্টে বাংলাদেশ উন্নতি করছে, কিন্তু দর্শকশূন্যতা কেন কাটছে না?


দেশের মাঠে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সেই জয়ের সাক্ষী হলেন মাত্র সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার দর্শক! অথচ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা হলে কী দেখা যেত? গ্যালারিতে তিল ঠাঁই আর নাহি রে!

ইংলিশ কিংবা অস্ট্রেলিয়ান দর্শকদের কাছে টেস্টের মর্যাদাই আলাদা। টেস্ট হচ্ছে আসল ক্রিকেট—তাদের ভাবনা এমনই। টেস্টে তাই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় গ্যালারি ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায় না। কিন্তু উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে চিত্র অন্য,রকম। মাঠে এসে ক্রিকেটের কুলীন সংস্করণে সাকিব-তামিম-মুশফিকদের অনুপ্রাণিত করতে দর্শকদের বেশ অনীহা! দেশের মাঠে বেশির ভাগ টেস্টেই তো গ্যালারির অর্ধেকও ভরে না। বিসিবি অনেক সময় গ্যালারি একেবারে ফাঁকা না রেখে স্কুলছাত্রদের ঢোকার সুযোগ করে দেয়। এই টেস্ট থেকে সেটিও বন্ধ হওয়ায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারির তিনটা দিনই খাঁ খাঁ করল।

ফাঁকা গ্যালারি টেস্ট ক্রিকেটের জন্য মোটেও ভালো বিজ্ঞাপন নয়। ছবি: প্রথম আলো
ফাঁকা গ্যালারি টেস্ট ক্রিকেটের জন্য মোটেও ভালো বিজ্ঞাপন নয়। ছবি: প্রথম আলো

টেস্টের প্রতি দর্শকদের কেন এ অনীহা, তার অনেক কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু সাকিব আল হাসান যেটি বললেন, সেটি অবশ্যই ভাববার মতো, ‘এমসিসির ক্রিকেট কমিটির সদস্য হিসেবে কিছু ভালো নিবন্ধ দেখেছি। টেস্টে দর্শক না হওয়ার একটা বড় কারণ খুবই কম প্রচার হওয়া। একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের যে প্রচার-প্রচারণা হয়, টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে তার এক–চতুর্থাংশও হয় না। দর্শক মাঠে আনতে প্রচার-প্রচারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এটা শুধু বাংলাদেশে না, সারা বিশ্বেই কমবেশি হচ্ছে। ভারতে পর্যন্ত টেস্টে গ্যালারি পূর্ণ হয় না। আমার মনে হয়, এটা নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা কাজ করতে পারে। আর্থিক দিকও একটা ব্যাপার। একটা সুবিধা আপনার থাকতে হবে, সেটা না থাকলে আপনি কেন এটা করবেন। আর পাঁচ দিন ধরে একজন মানুষের টেস্ট দেখাও কষ্টের। টেস্ট জনপ্রিয় করতে এখন অনেক রকমের চেষ্টা হচ্ছে, তবে আমার মনে হয়, এই ব্যাপারে আমাদের অনেক বেশি প্রচার-প্রচারণা করা দরকার।’

দিবারাত্রির টেস্ট হচ্ছে। গোলাপি বলে খেলা হচ্ছে। নিত্যনতুন নিয়ম করা হচ্ছে। তবুও টেস্টের দর্শকশূন্যতা দূর হচ্ছে না। দর্শকই হচ্ছে খেলার প্রাণ। সেই দর্শকই যদি না থাকে, রোমাঞ্চকর ম্যাচও অনেক সময় প্রাণহীন মনে হয়।