যে কীর্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় সেরা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে ঘূর্ণিজাল পেতেছিলেন তাইজুল। ছবি: প্রথম আলো
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে ঘূর্ণিজাল পেতেছিলেন তাইজুল। ছবি: প্রথম আলো
>চট্টগ্রাম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ইনিংসে সবগুলো উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। আর পতন হওয়া ৪০ উইকেটের মধ্যে দুই দলের স্পিনাররা মিলে নিয়েছেন ৩৪ উইকেট। টেস্টে এমন ঘটনা ঘটেছে মোট কতবার?

ঘূর্ণি ভেলকির জয়? বলতেই হবে। গোটা ম্যাচে দুই দলের পেসাররা মিলে যদি মাত্র ১ উইকেট নিতেন? আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে ওয়েস্ট উইন্ডিজের পেসাররা যদি একটু খারাপ বোলিং করতেন তাহলেই তো বিশ্ব রেকর্ডটা হয়েই যেত! কল্পনাটা একটু বেশি হয়ে গেল? বোধ হয় না। চট্টগ্রামে পৌনে তিন দিনে শেষ হওয়া টেস্টে ৪০ উইকেটের মধ্যে পেসারদের শিকার মাত্র ৬ উইকেট। এই সংখ্যাটা ১ হলে আর বাকি ৫ উইকেট স্পিনাররা নিলেই বিশ্ব রেকর্ডটা হয়ে যায়।

ভাবতে পারেন, এ কল্পনাবিলাসী মনের বেগর বাই। এদিকে ক্রিকেটের ‘রোমান্টিক’ সমর্থকেরা যুক্তি দেবেন, সমস্যা কি? স্পিনের টেস্টে পেসাররা কেন উইকেট পাবে? না, পেলে ক্ষতি নেই বরং তা দলের জন্যই ভালো। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই উইকেট যেমন স্পিনবান্ধব ছিল, তাতে রোমান্টিক কিংবা কল্পনাবিলাসী সমর্থকেরা পেসারদের উইকেট পাওয়ার বিপক্ষে ব্যাট ধরতেই পারেন। হাজার হোক রেকর্ডটা ছুটে যাওয়া বলে কথা। তা কোন সে রেকর্ড?

বেশি দিন আগের কথা নয়। গত ১৪ নভেম্বর ক্যান্ডি টেস্টে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড। ক্যান্ডির বাইশ গজ স্পিনবান্ধব হলেও ম্যাচটা গড়িয়েছিল পঞ্চম দিন পর্যন্ত। আর সেই উইকেটে দুই দলের স্পিনাররা মিলে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে লাকমলের ১ উইকেট আর শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে করুণারত্নে রান আউট না হলে স্পিনাররা কিন্তু ‘চল্লিশে চল্লিশ’-ই পেতেন। মানে, দুই দলের মোট ৪০ উইকেটের সবগুলোই পেতেন স্পিনাররা! লাকমল আর করুণারত্নে তা ভেস্তে দিলেও ঠেকানো যায়নি বিশ্ব রেকর্ড। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এক ম্যাচে স্পিনারদের সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটি ক্যান্ডিতেই গড়েছেন পেরেরা-রশিদরা। সেই টেস্টে স্পিনাররা নিয়েছেন মোট ৩৮ উইকেট।

এবার নিশ্চয়ই দুয়ে দুয়ে চার মেলানো শেষ? মানে, ওই যে পেসাররা কেন ৬ উইকেট নিলেন—সেই প্রশ্নটি। চট্টগ্রাম টেস্টে দুই দলের স্পিনাররা নিয়েছেন মোট ৩৪ উইকেট। অর্থাৎ, স্পিনাররা আর ৫টি উইকেট নিলেই অল্প কদিনের ব্যবধানে রেকর্ডটা লেখানো যেত নতুন করে। সে ক্ষেত্রে পেসারদের ভাগে পড়ত ১ উইকেট। রান আউট কিংবা ক্রিকেটের অন্যান্য আউট ঊহ্য রেখেই এই আনুমানিক অঙ্ক।

সে যাই হোক স্পিনারদের ৩৪ উইকেট নেওয়ার এই টেস্ট বিশ্ব রেকর্ড গড়তে না পারলেও ইতিহাসের পাতায় ওপরের দিকেই নাম লিখিয়েছে। এক টেস্টে স্পিনারদের সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার খাতায় এই টেস্ট যুগ্মভাবে চতুর্থ—২০১৫ সালে মোহালিতে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে ৩৪ উইকেট নিয়েছিলেন দুই দলের স্পিনাররা। বাকি দুটি নজিরের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম। সেটি আবার ঘরের মাঠেই। গত বছর ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে ৩৪ উইকেট নিয়েছিল স্পিনাররা। আর শেষ নজির হয়ে রইল চট্টগ্রাম টেস্ট।

তাইজুল-মিরাজদের পাশে নাঈম হাসানও দ্যুতি ছড়িয়েছেন তাঁর অভিষেক টেস্টে। ছবি: প্রথম আলো
তাইজুল-মিরাজদের পাশে নাঈম হাসানও দ্যুতি ছড়িয়েছেন তাঁর অভিষেক টেস্টে। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের মাটিতে এক টেস্টে স্পিনারদের এ দুটোই যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে মনে রাখার মতো আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ইনিংসে সবগুলো উইকেটই নিয়েছেন স্পিনাররা। অর্থাৎ ২০ উইকেট। বাংলাদেশ দলের ১১১ টেস্টের ক্যারিয়ারে এমন ঘটনা ঘটেছেই মাত্র দুবার। প্রথমটি খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। দুই বছর আগে শেরেবাংলার মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টেও দুই ইনিংস মিলিয়ে ২০ উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। প্রশ্ন হলো, টেস্টে এমন ঘটনা ঘটেছে মোট কতবার?

চোখটা উপমহাদেশের দলগুলোর দিকেই ঘোরার কথা। কারণ ঐতিহ্যগতভাবেই এখানকার দলগুলোর স্পিন প্রীতি অন্যান্য দলের চেয়ে বেশি। আর তাই এই পরিসংখ্যানে উপমহাদেশের দলগুলোরই রাজত্ব। টেস্ট ক্রিকেটে যে দশবার এমন ঘটনা ঘটেছে—স্পিনাররা প্রতিপক্ষের সব উইকেট নিয়েছেন—তার প্রায় সবই উপমহাদেশের দলগুলোর কল্যাণে। ভারতের স্পিনাররা এই নজির গড়েছেন একবার-দুবার নয় চারবার! পাকিস্তান ও বাংলাদেশের স্পিনাররা সমান অবস্থানে—দুবার করে। অর্থাৎ ভারতের পর স্পিন দিয়ে শাসন করার কাজটা বাংলাদেশই ভালো করে। আর শ্রীলঙ্কা একবার। কিন্তু সবার আগে এ কীর্তি দেখা গিয়েছিল সুইং আর সিমকে নির্ভর করে শাসন করা এক দল, ইংল্যান্ড। ১৯৫৬ সালে ম্যানচেস্টারে অস্ট্রেলিয়াকে ধসিয়ে দিতে জিম লেকার একাই নিয়েছিল ১৯ উইকেট। এই অফ স্পিনারকে অন্য উইকেটটি পেতে দেননি বাঁহাতি স্পিনার টনি লক।

ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোর পেসার নির্ভরতা বেশি। উপমহাদেশের দলগুলোয় বেশির ভাগ সময়েই যার উল্টোটা দেখা গেছে। সমীকরণটা তাই স্পিন ফাঁস বনাম আগুনে গতি—চট্টগ্রামে যে লড়াইয়ে জিতল বাংলাদেশই। ঘরের মাঠে আর দলের শক্তির জায়গা ভেবে বানানো বাইশ গজ কি তাহলে মিরপুরেও দেখা যাবে?