আম্পায়ার বাবার তর্জনীতে ছেলে আউট

সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনো আম্পায়ার বাবার হাতে ক্রিকেটার ছেলে আউট হয়েছে?

বাংলাদেশ দলের সেটিই সর্বশেষ কেনিয়া সফর। সেই যে ২০০৬ সালে, যেবার এক মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছেই হেরেছিল কেনিয়া। ওয়ানডে সিরিজে ১২ উইকেট সিরিজসেরা হয়েছিলেন বর্তমানে দেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। শুধু কী তাই? সেই সিরিজে মাশরাফি যে রেকর্ড গড়েছিলেন তা অটুট রয়েছে আজও। বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টানা তিন ওয়ানডেতে ম্যাচসেরা হওয়ার কীর্তি। সম্ভবত মাশরাফির অত্যুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের জন্যই সেই সিরিজে ‘মোদী’ পরিবারের সঙ্গে ক্রিকেটের ‘মজার’ কাণ্ড কেউ মনে রাখেনি।

না, ভুল করছেন। মোদী—নামটা শুনে ভারতের দিকে তাকানোর দরকার নেই। এই মোদী কেনিয়ান ক্রিকেট পরিবারের। কেনিয়ান ক্রিকেট তো এখন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ধুঁবছে। কিন্তু এক যুগ আগেও তাতে প্রাণের স্পন্দন ছিল। সেটি ওদুম্বে, ওদোয়ো, সুজি, মোদী কিংবা টিকোলোদের মতো কয়েকটি ক্রিকেট খেলুড়ে পরিবারের কল্যাণে। সে যাই হোক, মোদী পরিবারের সুভাষ মোদী তানজানিয়ায় জন্মালেও তাঁর জাতীয়তা কেনিয়ান আর দেশটির হয়ে খেলেছেন ১৯৬৯ সালে। কিন্তু খেলার চেয়ে আম্পায়ারিং করতেই বেশি পছন্দ করতেন সুভাষ। তাই বনে গেলেন আম্পায়ার। ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২২টি ওয়ানডে ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন তিনি। আচ্ছা, সুভাষ মোদীর নাম শুনে কি আর কারও কথা মনে পড়ছে?

কেনিয়ার সাবেক অধিনায়ক হিতেশ মোদী। ছবি: আইসিসি
কেনিয়ার সাবেক অধিনায়ক হিতেশ মোদী। ছবি: আইসিসি

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুরুটা যাঁরা দেখেছেন নামটা ঘাই মারতে পারে তাঁদের মনে। একসময় কেনিয়ার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বাংলাদেশ। তখন স্টিভ টিকোলো, মরিস ওদুম্বে, কেনেডি ওটিয়েনো, মার্টিন সুজি আর হিতেশ মোদীদের থামানোর অঙ্ক কষতে হতো আমিনুল-আকরামদের। ঠিকই ধরেছেন। এই হিতেশ মোদী হলেন সুভাষ মোদীর ছেলে। তাহলে প্রশ্নটা সংগত কারণেই ওঠে, বাপ আর ছেলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিচরণ তো মোটামুটি একই সময়ে। বাবা সুভাষ মোদীর আন্তর্জাতিক আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারে ৬ বছর (২০০১ থেকে ২০০৬) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন হিতেশ। আর তাই প্রশ্ন হলো, বাবার হাতে ছেলে কখনো আউট হয়েছেন?

কেমন অদ্ভুতুড়ে প্রশ্ন! আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাবা আম্পায়ার, ছেলে মাঠে তার ওপর ব্যাটিংয়ে—এই ভাবনাটাই তো মজার। এর সঙ্গে সোনায় সোহাগা হিসেবে যোগ হতে পারে বাবা আঙুল তুলে ছেলেকে আউট ঘোষণা করলে। নিশ্চয়ই দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ভাবছেন, মোদী পরিবারই তাহলে ক্রিকেটের এই রসিকতার শিকার, আর সেটি ২০০৬ সালের সেই ওয়ানডে সিরিজে? জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ ঠিক তাই। ক্রিকইনফোর ‘আস্ক স্টিভেন’ পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, আম্পায়ার বাবার হাতে ছেলের আউট হওয়ার দৃশ্যটা সুভাষ-হিতেশের সৌজন্যে দেখেছে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে। আর এই ‘নির্মম’ দৃশ্যের অবতারণা করেছিলেন মাশরাফি।

কেনিয়ার সাবেক আম্পায়ার সুভাষ মোদী। ছবি: ফেসবুক
কেনিয়ার সাবেক আম্পায়ার সুভাষ মোদী। ছবি: ফেসবুক

সেবার ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাশরাফির করা ১৪তম ওভারের পঞ্চম বলটি ব্যাটে খেলতে পারেননি মোদী। মাশরাফির ইনসুইংয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছিলেন হিতেশ। আর নন স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়ানো আম্পায়ার হিসেবে আঙুল তুলে আউটের রায় দিয়েছিলেন হিতেশের বাবা স্বয়ং সুভাষ মোদী। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৬৩তম ম্যাচে এসে আম্পায়ার হিসেবে বাবাকে পেয়েও বাঁচতে পারেননি হিতেশ। এবং এরপর আর কখনো তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যায়নি। দ্বিতীয় ওয়ানডেটাই হয়ে যায় কেনিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর শেষ ম্যাচ। অর্থাৎ হিতেশের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে বাবার দেওয়া ‘মৃত্যুদণ্ড’-র বিধান মাথা পেতে নিয়ে। যেখানে ‘বাদী’ ছিলেন মাশরাফি।

মাশরাফি ছিলেন সর্বশেষ ‘বাদী’। প্রথমজন কিন্তু সাকিব আল হাসান। সেটি প্রথম ওয়ানডেতে। সাকিবের ঘূর্ণি বল হিতেশের ব্যাট আর প্যাড ছুঁইয়ে আশ্রয় নিয়েছিল খালেদ মাসুদ পাইলটের গ্লাভসে। আর সুভাষ ওই দফায়ও ছেলেকে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দিয়েছেন সুভাষ। এ নিয়ে তাঁর কোনো আক্ষেপ নেই। বরং পেশাদার আম্পায়ারের মতোই গর্ব ঝরেছিল পিতার কণ্ঠে, ‘হ্যাঁ, নিজ ছেলেকে আউট দিয়েছি-প্রথম ম্যাচেও দিয়েছিলাম, ব্যাট আর প্যাড ছিল।’