পেইনদের ভালো ছেলে হতে নিষেধ করলেন ক্লার্ক

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। ছবি: টুইটার
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। ছবি: টুইটার
>অস্ট্রেলিয়ায় বেশ আগেই পা রেখেছে ভারতীয় দল। ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। এই সিরিজ সামনে রেখে অস্ট্রেলিয়া দলকে পুরোনো আগ্রাসী মানসিকতা ফিরিয়ে আনার টোটকা দিলেন সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণের লোকও আছেন। তিনি আবার এক সময় ক্লার্কের জাতীয় দল সতীর্থ ছিলেন। এই সিরিজ নিয়ে সবার আলোচনায় তাই প্রশ্নটা উঠছেই—অস্ট্রেলিয়া দলকে কি সেই পুরোনো আগ্রাসী মেজাজে দেখা যাবে?

বিরাট কোহলির দল অস্ট্রেলিয়ায় পা রেখেছে বেশ আগেই। এখন শুধু ময়দানি লড়াই শুরুর অপেক্ষা। ভারতের সাবেকেরা অবশ্য ‘লড়াই’ দেখছেন না। ভিভিএস লক্ষণ তো বলেই দিয়েছেন, তাঁর দেখা অস্ট্রেলিয়ার দলগুলোর মধ্যে টিম পেইনের দলটাই দুর্বলতম। ফারুক ইঞ্জিনিয়ারও এই অস্ট্রেলিয়াকে দেখছেন ‘সাধারণ দল’ হিসেবে। আর অস্ট্রেলিয়ানরা কি ভাবছেন টেস্ট সিরিজ নিয়ে?

ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ মানেই তো ময়দানি লড়াইয়ের আগেই বাগ যুদ্ধের শুরু। যদিও এবার ভারতের সাবেকেরা যখন পেইনের দলকে পাত্তা দিচ্ছেন না অস্ট্রেলিয়ার সাবেকেরা তখন উত্তরসূরিদের বাতলে দিচ্ছেন সিরিজ জয়ের পথ। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক যেমন সোজাসাপ্টাই বলেছেন, আগ্রাসী ও নাছোড় মানসিকতা শিকেয় তুলে ভালো ছেলেটি হয়ে খেললে সিরিজ জয়ের কোনো সুযোগ নেই।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে আজ চার দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল ভারতের। বৃষ্টি হানা দেওয়ায় টসও করতে পারেননি দুই দলের অধিনায়ক। প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে ৬ ডিসেম্বর প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে কোহলির দল। চার ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজ নিয়েই বাগ্‌যুদ্ধ শুরুর আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। তবে ক্লার্ক আপাতত পেইনদের নিয়েই ব্যস্ত। ফিঞ্চ-পেইনদের মধ্যে আগ্রাসনের আগুনে ভরা পুরোনো অস্ট্রেলিয়া দেখতে চান সাবেক এই অধিনায়ক, ‘পছন্দের দল হয়ে ওঠা নিয়ে দুশ্চিন্তা বন্ধ করা উচিত অস্ট্রেলিয়ার। ওরা কঠোর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটই খেলুক। কেউ পছন্দ করুক আর না করুক, এটা আমাদের রক্তে।’

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট আগ্রাসী মনোভাবের জন্য পরিচিত। তবে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে এই আগ্রাসন আর বিতর্কে জড়িয়ে বেশ ভালো ঝামেলায় পড়েছিল স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়া। কেপটাউন টেস্টে বল বিকৃতি–কাণ্ডের জন্য ডেভিড ওয়ার্নার, স্মিথ আর ক্যামেরন ব্যানক্রফট নিষিদ্ধ হয়েছেন। ওই ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের মানসিকতা খোলনলচে পাল্টানোর চেষ্টা করছে বোর্ড। ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলানো, সততা আর ভদ্র হওয়ার টোটকা দেওয়া হয়েছে খেলোয়াড়দের। কিন্তু ক্লার্ক মনে করেন সিরিজ জয়ের জন্য পুরোনো পথটাই সেরা, ‘এটা (আগ্রাসী মানসিকতা) ছাড়লে আমরা হয়তো বিশ্বে সবার পছন্দের দল হতে পারব। কিন্তু কিছু জিততে হবে না। ম্যাচ জিততে পারব না। ছেলেরা কিংবা মেয়েরা কিন্তু জিততে চায়।’

একটি রেডিও স্টেশনে বলা ক্লার্কের এসব কথার সঙ্গে মোটেও একমত হতে পারেননি তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের সতীর্থ সাইমন ক্যাটিচ। সতীর্থ? সেটি হয়তো শুধু কাগজে-কলমেই। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার দলীয় সংগীত গাওয়া নিয়ে ক্লার্কের সঙ্গে বচসা হয়েছিল ক্যাটিচের। এরপর থেকে দুজনের আর বনিবনা হয়নি। যেমন এবারও হলো না। ক্লার্কের এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন সাবেক এই টেস্ট ওপেনার, ‘আরও একবার আমরা দেখলাম কেউ একজন বিষয়টি বুঝতে পারেনি। এত কিছুর মধ্যে সবাই যেটি ভুলে বসে আছে, আমরা প্রতারণা করেছি। আর প্রতারণা করে ধরাও পড়েছি। তাই মনোভাব পরিশোধন করে যত দ্রুত সম্ভব দলের সম্মান ফেরানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমরা কিন্তু কয়েক বছর ধরেই মাঠে আচার-ব্যবহারের দিক থেকে সবচেয়ে অপছন্দের দল। আর কেপটাউন তার শীর্ষে।’

অস্ট্রেলিয়া এ বছর সাত টেস্টের মধ্যে চারটিতেই হেরেছে। পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ দুটি সিরিজ হেরেছে দলটি। গত মার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি বলেছিলেন, ‘ওদের (অস্ট্রেলিয়া) সেই চেনা আগ্রাসী মেজাজে দেখতে না পেয়ে ভালো লাগেনি। আগের অস্ট্রেলিয়াই ভালো ছিল বোধ হয়।’