হেলায় হারানো সাকিবের আরেকটি 'সেঞ্চুরি'

সেঞ্চুরিটা ফেলে এসেছেন সাকিব। ছবি: প্রথম আলো
সেঞ্চুরিটা ফেলে এসেছেন সাকিব। ছবি: প্রথম আলো
>

মিরপুর টেস্টে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও পারলেন না সাকিব। এ নিয়ে গত দুই বছরে তিনবার ৮০-র ঘরে ফিরলেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক।

সাকিব আল হাসান আজ সকালটা স্বাগত জানালেন ‘ঝাড়ু মেরে’! রোস্টন চেজকে প্রথম যখন সুইপ করলেন, সেটি লাগল শর্ট লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডারের গায়ে। বাউন্ডারিটা হলো না। তবু বোলারের জন্য ডিপ মিডউইকেট বা স্কয়ারে কোনো সুরক্ষা আনলেন না ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাফেট। সাকিব সুযোগটা কাজে লাগাতে এক বল পর আবার সুইপ করলেন। এবার বাউন্ডারি।

পরের বলে আগের শটেরই ‘রিপ্লে’, আবারও সুইপে বাউন্ডারি। সাকিবের মতিগতি বুঝতে পারে এবার ডিপে ‘প্রটেকশন’ আনলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। তবু মাফ নেই! আবারও বাউন্ডারি, এবার প্যাডল সুইপে করে। দিনের চতুর্থ ওভারে সাকিবের ‘হ্যাটট্রিক’ বাউন্ডারি দেখে যদি প্রশ্ন তোলেন, তাঁর আক্রমণাত্মক হওয়া নিয়ে, বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক কিন্তু সেটির উত্তর দিয়ে রেখেছেন মিরপুর টেস্ট শুরু হওয়ার আগেই, ‘বীরেন্দর শেবাগ টেস্ট ম্যাচের প্রথম বলে যদি চার মারার সুযোগ পায় তাহলে সে চার মারত। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডেতেও একই ছিল। আমার কাছে মনে হয়, এই মনোভাব থাকাটা খুবই জরুরি। যে ব্যাটসম্যানটা টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডেতে প্রথম বলে চার মারতে পারে, কখনোই চাইব না টেস্ট ম্যাচে সে প্রথম বল রক্ষণাত্মক খেলুক বা ছেড়ে দিক। চাইব, প্রথম বলে ওরকম মানসিকতা নিয়েই যাক যে সে মারার বল পেলে চার মেরে দেবে।’

সাকিব সেভাবেই মেরেছেন, তাঁর স্বাভাবিক খেলাটা খেলেই সেঞ্চুরির দিকে দ্রুত এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ইনিংসটার পূর্ণতা পায়নি রোচকে ড্রাইভ করতে গিয়ে। ব্যাটের কানায় লেগে গালিতে শাই হোপের ক্যাচ হলেন ৮০ রান করে। সকালেই বাংলাদেশ দেখল অধিনায়কের আরেকটি সেঞ্চুরি-সম্ভাবনার অপমৃত্যু। সম্ভাবনা জাগিয়ে এমন কত সেঞ্চুরি তিনি ফেলে এসেছেন, পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে টেস্টে সাকিব যে সাতবার ৫০ পেরিয়েছেন, তার মাত্র দুটি রূপ দিতে পেরেছেন তিন অঙ্কে। এর একটি আবার ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ ২১৭। পরেরটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে, গত বছর মার্চে পি সারা ওভালে বাংলাদেশের শততম টেস্টে করেছেন অতিপ্রয়োজনীয় সেঞ্চুরি করায়। যে পাঁচটি ফিফটি সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি, এর তিনটিই থেমেছে ৮০-র ঘরে গিয়ে। টেস্ট ক্যারিয়ারে যে ২৪টি ফিফটি করেছেন, এর ১৫টিই ৭০ পেরোনো। ৯৬-৯৭ রানেই আউট হয়েছেন তিনবার। ৮০-এর ঘরে তো ছয়বার।

থিতু হয়েও অনেক সেঞ্চুরির অপমৃত্যু না হলে ৫৫ টেস্টে সেঞ্চুরি সংখ্যা পাঁচটি নয়, সেটি দশটিও হতো পারত সাকিবের। তিনি শট খেলবেন, একের পর এক বাউন্ডারি মারবেন, ঝুঁকি নেবেন—এটাই তাঁর ‘ন্যাচারাল’ খেলা। এভাবে খেলে সেঞ্চুরি এলে আসবে, না এলে নেই—এটিই যেন সাকিবের নীতি! স্বাভাবিক খেলতে গিয়ে সাকিবের আত্মহত্যার ঘটনা নেহাত কম নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ২১৯ করার আগে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল তাঁর। মনে রাখার মতো ইনিংসও তো কম খেলেননি। তারপরও সাকিবের বাজে আউট বড় চোখে লাগে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার বলেই তাঁর ‘আত্মহত্যা’ মেনে নেওয়া কঠিন। তাঁর রেকর্ড-পরিসংখ্যান যথেষ্ট উজ্জ্বল, যদি আরেকটু সংযম-ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারতেন, সেটি আরও কত উজ্জ্বল হতে পারত, ভাবা যায়!