যে অর্জনে সাকিব টেন্ডুলকারের পাশে, মুরালিকে পেরিয়ে

>সাকিব আল হাসানকে চোটের কারণে আগের সিরিজে দর্শক হয়ে বসে থাকতে হয়েছিল। এই সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে চাইছিলেন না তিনি নিজেই। ফিরলেন, ফিরেই সিরিজ সেরা। এ নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫ বার সিরিজ সেরা হলেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২ বার
এই সিরিজে ফিরেই সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সাকিব আল হাসান। ছবি: প্রথম আলো
এই সিরিজে ফিরেই সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সাকিব আল হাসান। ছবি: প্রথম আলো

ক্রিকেটে রেকর্ডের একক কে কী নামে ডাকা হয়? উত্তরটা শচীন টেন্ডুলকার বললে ভুল বলা হবে না নিশ্চয়ই। অন্তত ব্যাটিংয়ের প্রায় সবগুলো রেকর্ডই তো তাঁর দখলে। যেকোনো রেকর্ডে হোক বা অর্জনে, টেন্ডুলকারের নামের পাশে বসা বিরাট গর্বের নিশ্চয়ই। সাকিব আল হাসান সেই গর্ব করতেই পারেন। এ নিয়ে টেস্টে পাঁচবার সিরিজ সেরা হলেন সাকিব। ২০০ টেস্টের ক্যারিয়ারে টেন্ডুলকারও পাঁচবার সিরিজ সেরা হয়েছেন। এই রেকর্ডে অবশ্য মুত্তিয়া মুরালিধরন প্রায় অমরত্ব পেয়ে গেছেন। তাঁর এই রেকর্ড কোনো দিন ভাঙবে কি না, কে জানে। সর্বকালের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি যে ১১ বার ম্যাচ সেরা হয়ে সবার ওপরে।

টেস্টে মুরালি এখনো অনেক দূরের পথ। তবে এখনই মুরালিকে সাকিব পেরিয়ে গেছেন, তাও বলা যায়। যদি তিন ধরনের ক্রিকেটকেই বিবেচনায় আনা হয়। মুরালি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওই ১১ বারই সিরিজ সেরা হয়েছেন। এতদিন তিন ধরনের ফরম্যাট মিলিয়ে সাকিব মুরালির পাশে ছিলেন। আজ পেরিয়ে গেলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে সাকিব এ নিয়ে ১২ বার সিরিজ সেরা হলেন। এদিক দিয়ে সাকিব উঠে এলেন সেরা পাঁচে। ১৯ বার সিরিজ সেরা হয়ে সবার ওপরে আছেন টেন্ডুলকারই। সাকিবের ওপরে থাকা বাকি তিনজন হলেন জ্যাক ক্যালিস (১৪), সনাৎ জয়াসুরিয়া (১৩) ও বিরাট কোহলি (১৩)।তবে সাকিব টেস্টেও এখনই যতটা পথ পাড়ি দিলেন, তা নিয়েই যথেষ্ট গর্ব করতে পারেন। সিরিজ সেরার এই মাইলফলকে সাকিবের আশপাশের নামগুলোও অনেক রথী-মহারথীর। গ্লেন ম্যাকগ্রা, ওয়াকার ইউনিস, ডেল স্টেইন, রঙ্গনা হেরাথ, জেমস অ্যান্ডারসনের মতো বোলিং গ্রেটরাও সাকিবের মতো ৫ বার সিরিজ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ৫ বার করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন গ্রাহাম গুচ, মাইকেল ক্লার্ক, বীরেন্দর শেবাগ, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস।

আজ সাকিব বলছিলেন, 'বুড়ো হয়ে গেছি।' তবে সামনের দিনগুলোতে পথচলার জন্য তাঁর বাড়তি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে এই তথ্য। টেস্টেও যেমন আরেকবার সিরিজ সেরা হতে পারলেই কার্টলি অ্যামব্রোস, ম্যালকম মার্শাল, স্টিভ ওয়াহ্‌র মতো আইসিসির তিন হল অব ফেমের কিংবদন্তির পাশে বসবেন।

টেস্টে সাত ও আটবার সিরিজ সেরা হয়েছেন তিনজন করে ছয় ক্রিকেটার। সাকিবের জন্য বাতিঘর হতে পারেন জ্যাক ক্যালিস। যিনি নয়বার সিরিজ সেরা হয়েছেন। তবে সেসব পরের হিসাব। কাজটাও সহজ নয়। তবে ইদানীং বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ যত নিয়মিত টেস্টে মুখোমুখি হচ্ছে, সাকিব তরতর করে এগিয়ে যাওয়ার আশা করতেই পারেন। যে পাঁচবার সিরিজ সেরা হয়েছেন, তিনবারই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে!

২০০৯ সালের সেই আলোচিত সিরিজে প্রথম সেরা হয়েছিলেন। আজ যে সফরের কথা স্মরণ করে সাকিব বলছিলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন ধাপে নিয়ে গিয়েছিল সেটি অর্জন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় সারির দল খেলালেও তাদের মাটিতে গিয়ে ২-০তে জিতে আসা বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল, আমরাও পারি।

২০১১ সালের ফিরতি সিরিজে ঘরের মাঠেও সাকিব সিরিজ সেরা হন। তৃতীয়বার সিরিজ সেরার স্বাদ পান ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে। এবারের আগে সাকিব সর্বশেষ সিরিজ সেরা হয়েছিলেন গত বছর শ্রীলঙ্কা সফরে। যে সফরে বাংলাদেশ শততম টেস্টটা জিতেছিল নাটকীয়ভাবে।

এখানে আরেকটি কথা বলে রাখা দরকার। কমপক্ষে পাঁচবার সিরিজ সেরা হয়েছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে সাকিবই সবচেয়ে কম ম্যাচ (৫৫ টেস্ট) খেলেছেন। ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন অবশ্য ৬৭ টেস্টে ৭ বার সিরিজ সেরা হয়েছেন। দ্রুততম সময়ে সাতবার সিরিজ সেরা হওয়ার কীর্তি সেটি। সাকিব সেটিকেও পাখির চোখ করতে পারেন। অশ্বিন অবশ্য এখনো খেললেন। সাকিবের সঙ্গে একটা অলক্ষ্য লড়াই তাঁর এমনিতেই চলছে টেস্টের সেরা অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে।