ফলোঅন, ইনিংস ব্যবধানে জয় শব্দগুলো কতই না মধুর!

এই প্রথম বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করিয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
এই প্রথম বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করিয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
>প্রতিপক্ষকে ফলোঅন কিংবা ইনিংস ব্যবধানে হারানো আগে কখনোই এর স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। আজ জোড়া উপহার হিসেবে এল এই দুই অর্জন। সাকিব আল হাসানের কাছে এই জয় তাই স্পেশাল

ফলোঅন আর ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় শব্দগুলো যে কী লজ্জার! এক সময় বাংলাদেশের জন্য নিয়মিত সঙ্গী ছিল এ দুই শব্দ । প্রতিপক্ষ দলের এক ইনিংসই বাংলাদেশ পেরিয়ে যেতে পারত না দুই ইনিংস মিলিয়ে। হারতে হতো ইনিংস ব্যবধানে। পড়তে হতো লজ্জায়। অবশেষে টেস্ট ক্রিকেটে দেড় যুগ পেরিয়ে এসে অপমানের শোধ নিল বাংলাদেশ। এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করাল বাংলাদেশ, হারাল ইনিংস ব্যবধানে। আজ সংবাদ সম্মেলনে সাকিব ঘুরে ফিরে বেশ কয়বার এই শব্দগুলো উচ্চারণ করলেন। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতেই। কিন্তু তবু তাতে কী তৃপ্তি আর গর্ব যেন মিশে থাকল!

সাকিবের জন্য আলাদা তৃপ্তির কারণ তা হতেই পারে। ক্যারিয়ারের শুরুতেও বাংলাদেশ দলকে টেস্টের উত্তাল সমুদ্রে খাবি খেতে দেখেছেন। সাকিবের প্রথম ১০ টেস্টের ৬টিতেই বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। ফলোঅনের লজ্জাতেও পড়তে হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ফলোঅনের সুযোগ এর আগে একবারই পেয়েছিল। এই তো আগের সিরিজেই, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। কিন্তু সেবার নিজেরাই ব্যাটিংয়ে নেমে পড়েছিল চতুর্থ ইনিংসের ঝুঁকি এড়াতে। কিন্তু আজ লিডের আকার আর সাতসকালে ক্যারিবীয়দের গুঁড়িয়ে দেওয়ায় সাকিব দুবার ভাবেননি। প্রতিপক্ষকে আবার ব্যাট হাতে নামতে বাধ্য করিয়েছেন।

সাকিব ম্যাচ শেষে বললেন, এটি তাঁর কাছে কতটা স্পেশাল, ‘দেখুন আমরা এক শর ওপরে টেস্ট ম্যাচ খেলেছি। এই প্রথম এমন কিছু করলাম। অবশ্যই স্পেশাল কিছু, ১৮ বছর ধরে টেস্ট খেলেছি, এক শর বেশি টেস্ট খেলে ফেলেছি। এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করিয়ে ইনিংস ব্যবধানে জিততে পারলাম। এর মধ্যে আমরা কিন্তু ছোট দলের বিপক্ষেও খেলেছি, তারপরও তখন এমন কিছু করতে পারিনি। তাই এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন বলে আমি মনে করি।’

সাকিবের কাছে আরও একটি কারণে এই সিরিজ বিশেষ কিছু হয়ে থাকবে, ‘এর আগে আমাদের ওপরের (র‍্যাঙ্কিংয়ে) কোনো দলকে হোম কন্ডিশনে হোয়াইটওয়াশ করিনি। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের জন্য সিরিজটি অনেক বড় পাওয়ার সিরিজ ছিল।’

বাংলাদেশ এর আগে একবারই র‍্যাঙ্কিংয়ের ওপরে থাকা দলকে ধবলধোলাই করেছিল। সেটিও প্রতিপক্ষের মাটিতে। কিন্তু সেই জয়ে একটু ফাঁক আছে। ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ পেয়েছিল দুর্বল প্রতিপক্ষ। বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় সেই সিরিজে স্বাগতিকদের মূল একাদশের খেলোয়াড়দের প্রায় কেউই খেলেননি। সাকিব সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন, ‘এই অর্জনটা অনেক বড়। এর বেশ কয়েকটা কারণ আছে। প্রথমত, আমরা কাউকে ফলোঅনে ফেলতে পারলাম। যেকোনো দেশের সঙ্গেই যেকোনো অবস্থায় জয়টা অনেক বড় ব্যাপার। তারপরও আমাদের ওপরের র‍্যাঙ্কিংয়ের কোনো দেশের সঙ্গে এমন ফলাফল (ইনিংস ব্যবধানে জয়) পাইনি। সেই দিক থেকে এটা অনেক বেশি স্পেশাল।’

সাকিব মানছেন, ২০০৯ সালের সেই সিরিজটা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটি ধাপে নিয়ে যাওয়া। আর এবারের এই জয়টা বাংলাদেশকে আরেক ধাপে নিয়ে যাবে বলেও মনে করেন টেস্ট অধিনায়ক, ‘ওটা ছিল আমাদের কোনো কিছুর শুরু, আর এটা আমাদের উন্নতির যে ধারা, সেটা যে অব্যাহত আছে, তার উদাহরণ। সেখানে যখন শুরুটা করেছি, ওই সিরিজটি আমাদের ক্রিকেটের টার্নিং পয়েন্ট ছিল। তা ছাড়া আমরা যখন নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করি (ওয়ানডেতে) প্রথমবারের মতো, সেটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের বিশ্বাস তৈরি হওয়ার জন্য বড় ভিত তৈরি করে দিয়েছে এই দুইটা সিরিজ।’