ভাগ্যিস, মিরাজকে তামিম ফোনটা দিয়েছিলেন!

হেটমায়ারকে ফিরিয়ে মিরাজের উল্লাস। তামিমের ফোনে ভালো করার প্রেরণা পেয়েছেন মিরাজ। ছবি: প্রথম আলো
হেটমায়ারকে ফিরিয়ে মিরাজের উল্লাস। তামিমের ফোনে ভালো করার প্রেরণা পেয়েছেন মিরাজ। ছবি: প্রথম আলো
>টেস্টে ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটা তাঁরই ছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৯ রানে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। এই টেস্টেও ১২ উইকেট নিলেন ১১৭ রান খরচে

মজার এক দৃশ্য দেখা গেল মিরপুর টেস্টের শেষ মুহূর্তে। শেরমন লুইসকে এলবিডব্লু করে স্টাম্প নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের! মুহূর্তেই দুই প্রান্তে কয়েকটি স্টাম্প উধাও! ঠিক এ সময়ে ‘বেরসিক’ লুইস রিভিউ নিয়ে বসলেন। খানিকটা অস্বস্তিকর সময় কাটল বাংলাদেশ খেলোয়াড়দের।

তুলে নেওয়া স্টাম্প অবশ্য ফেরত দিতে হয়নি। হাতে স্টাম্প নিয়ে যখন ম্যাচ শেষে ক্রিকেটীয় সৌজন্য মেনে দুই দলের খেলোয়াড়েরা সারিবদ্ধ হয়ে করমর্দন করছেন, মিরাজ সারি থেকে বেরিয়ে ছুটে এলেন তামিম ইকবালের কাছে। তামিম মাত্রই অনুশীলন করতে মাঠে ঢুকেছেন। বাঁহাতি ওপেনারে সঙ্গে করমর্দন করে আবার ফিরে গেলেন। তামিমকে একটা ধন্যবাদ দেওয়ার ছিল মিরাজের।

তামিমকে কেন বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন, পরে বলা হচ্ছে। নাঈম হাসানের আবির্ভাব মিরাজ কীভাবে দেখছেন, সেটি আগে শোনা যেতে পারে। গত দুই বছরে অফ স্পিনার হিসেবে দলে জায়গা পোক্ত করেছেন। চট্টগ্রাম টেস্টে নাঈমের রঙিন অভিষেকের পর বার্তা পেলেন, তাঁর একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এসে গেছে। মিরাজ অবশ্য সংবাদ সম্মেলন শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে দাবি করলেন তিনি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন না, ‘আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবি না। ও ভালো করবে, আমিও ভালো করব। চারজন তো এক সঙ্গে খেললামই। সে যদি ভালো করে আমার জন্য কাজটা সহজ হয়ে যাবে। আমার ওপর যে চাপটা থাকে, একটু হলেও কমবে। ও ভালো করলে দলের জন্যই ভালো। এখন আমি ব্যাটিংয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারব। সবাই বলে, আমি শুধু বোলিং করি।’

চট্টগ্রাম টেস্টে নাঈম দুর্দান্ত বোলিং করেছেন, সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে ৫ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। তাঁকে নিয়ে ভীষণ হইচই হয়েছে। বিপরীতে মিরাজকে একটু সাদামাটাই দেখা গেছে, পেয়েছেন ৩ উইকেট। চট্টগ্রামে নাঈমের অসাধারণ বোলিংয়ের বিপরীতে একটু অনুজ্জ্বল থাকাটা যখন ভাবিয়েছে, তখনই পেলেন তামিমের ফোন। দেশসেরা ওপেনার মিরাজকে বললেন, কিছু অনুপ্রেরণাদায়ী কথা। সেটিতে অনুপ্রাণিত হয়ে মিরপুর টেস্টে ঘূর্ণি বিষে বিবশ করে দিলেন ক্যারিবীয়দের। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করলেন, দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচে পেলেন ১০ উইকেট। ১২ উইকেট নিয়ে হলেন ম্যাচসেরা। এখন তো বলতে হয়, ভাগ্যিস, মিরাজকে তামিম ফোনটা দিয়েছিলেন!

ম্যাচশেষে তামিমের প্রতি মিরাজের তাই কৃতজ্ঞতার শেষে নেই, ‘চট্টগ্রাম টেস্ট শেষ হলে তামিম ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন। সিনিয়র খেলোয়াড়েরা আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেন, উৎসাহ দেন, এটা অসাধারণ ব্যাপার। বললেন, “মিরাজ তুই কী ধরনের বোলার আমরা জানি। এই টেস্টে ভালো বোলিং হয়নি, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নাঈম ভালো করেছে, তুই খুশি থাক। কপালে থাকলে তুইও উইকেট পাবি। যদি বেশি চিন্তা করিস, নাঈম ভালো বোলিং করছে, তুই করিসনি, তাহলে কখনো ভালো করতে পারবি না, ভালো বোলার হতে পারবি না। তুই প্রমাণিত বোলার। সব জায়গায় ভালো করেছিস, তোর ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য আছে।” ওই রাতে তিনি আমাকে অনেক সমর্থন দিয়েছেন। তাঁর এই সমর্থন আমার কাছে বিশেষ কিছু। ম্যাচের পর দেখেছেন আমি তামিম ভাইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসেছি।’

তামিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হাত মিলিয়েছেন। মিরাজ নিশ্চয়ই আনন্দ পেয়েছেন শিমরন হেটমায়ারের সঙ্গে হাত মিলিয়েও। এই সিরিজে তো ক্যারিবীয় বন্ধুকে ‘বানি’ই বানিয়ে ফেলেছেন! বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে একে অপরের বিপক্ষে খেলছেন। একটা চিন-পরিচয় তো আছেই। আর সেই সুযোগে বারবার বন্ধুর হন্তারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন মিরাজ। গত জুলাইয়ে সেন্ট কিটসে সিরিজের শেষ ওয়ানডে থেকে আজ পর্যন্ত মিরাজকে যে পাঁচটি ইনিংস খেলেছেন, প্রতিটিতে গায়ানিজ মারকুটে ব্যাটসম্যান শিকার হয়েছেন বাংলাদেশি অফ স্পিনারের। আগ থেকে চেনাজানাটা যে মিরাজকে সহায়তা করে হেটমায়ারকে আউট করতে, বললেন সংবাদ সম্মেলনে, ‘ওর সঙ্গে (বিপক্ষে) অনেক দিন ধরে খেলছি। দুটি যুব বিশ্বকাপ খেলেছি, তারপর জাতীয় দলে এসেও খেললাম। ওর সম্পর্কে অনেক কিছুই আমি জানি। কাজেই ওকে আউট করার পরিকল্পনা করা সহজ হয়েছে।’

এই টেস্ট সিরিজ দিয়েই শেষ নয়। হেটমায়ার আরও বড় পরীক্ষা নেবেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। নিলে নেবেন, সব সময়ই ইতিবাচক ও আত্মবিশ্বাসী মিরাজও তৈরি ‘প্রিয় শত্রু’কে চ্যালেঞ্জ জানাতে।