ওয়েস্ট ইন্ডিজের হারে খুশি উইন্ডিজ কিংবদন্তি

খালেদকে কী যেন বোঝাচ্ছেন ওয়ালশ, কিন্তু মিরপুর টেস্টে ফাস্ট বোলারদের ব্যবহার হলো কোথায়! ছবি: প্রথম আলো
খালেদকে কী যেন বোঝাচ্ছেন ওয়ালশ, কিন্তু মিরপুর টেস্টে ফাস্ট বোলারদের ব্যবহার হলো কোথায়! ছবি: প্রথম আলো
>মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ খেলেছে কোনো পেসার ছাড়াই। এ নিয়ে অনেক কথাও হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জেতার পরও যেটি নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। বাংলাদেশ পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের অনেকটা ‘অবসর’ সময়ই কাটল এই সিরিজে। দলে পেসার নেই, অন্যদিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিবীয়দের ভরাডুবি—আজ বিকেলে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এসব নিয়েই কথা বললেন ওয়ালশ।

সহকারী কোচ রায়ান কুককে নিয়ে বিকেল চারটার দিকে টিম হোটেলে ফিরলেন কোর্টনি ওয়ালশ। আজ পুরো দলের ছুটি। ছুটি কালও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট পৌনে তিন দিনে শেষ হওয়ায় বাড়তি দুই দিন ছুটি মিলেছে। ওয়ালশ তো আগ থেকেই ‘ছুটি’তে আছেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা রসিকতা করে নাকি বলেছেন, ‘মাস্টার আপনি তো এ মাসের বেতন পাবেন না!’ বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ব্যবস্থাপক সাব্বির খান সংশোধনী দিয়েছেন, ‘চট্টগ্রাম টেস্টে মোস্তাফিজ ৪ ওভার বোলিং করেছে, ২ শতাংশ বেতন পাবেন!’

বাংলাদেশ দল যখন মিরপুর টেস্টে স্পিন বিষে বিবশ করছে ক্যারিবীয়দের, ওয়ালশকে তখন দেখা গেছে বিসিবি একাডেমি মাঠে ফিটনেস ঠিক রাখতে হাঁটছেন, দৌড়াচ্ছেন। কেউ কেউ সেটি দেখে রসিকতা করছেন, বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচের এ ছাড়া আর কীই-বা করার আছে! মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছে কোনো পেসার ছাড়াই। এমন ঘটনা দ্বিতীয়বারের মতো দেখল টেস্ট ক্রিকেট। দলে একজন খণ্ডকালীন পেসার ছিলেন—সৌম্য সরকার। তাঁকেও কাজে লাগানোর দরকার হয়নি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। পেস বোলারদের ন্যূনতম সহায়তা ছাড়াই একটা দল জিতেছে ইনিংস ব্যবধানে, টেস্ট ক্রিকেটে এমন উদাহরণ দ্বিতীয়টি নেই।

একজন কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার হিসেবে পেসারশূন্য একাদশ দেখতে কেমন লেগেছে ওয়ালশের? বাংলাদেশ পেস বোলিং কোচের কাছে জয়টাই বড় মনে হয়েছে, ‘আমরা টেস্ট জিততে খেলতে নেমেছি। যে উইকেটেই খেলি না কেন, টেস্ট জিততে সেরা সমন্বয় নিয়েই খেলতে নামে বাংলাদেশ। আমি সব সময়ই খুশি এটা নিয়ে। একটা সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ চারটা পেসার নিয়ে দাপট দেখিয়েছে। এখন বাংলাদেশ দাপট দেখাচ্ছে চার স্পিনার নিয়ে। এটা শুধুই একটা রীতি। এই উইকেটে ফাস্ট বোলারদের কিছু ছিল না। আমরা ভেবেছি স্পিনাররাই মূল ভূমিকা রাখবে। সেটাই প্রমাণ হয়েছে।’

এই যে দেশের মাঠে উইকেটে পেসারদের জন্য কিছু থাকে না, বাংলাদেশ দল নামে কোনো পেসার ছাড়া—একজন উঠতি পেসারের কাছে কী বার্তা পৌঁছায়? কীভাবে তাঁরা অনুপ্রাণিত হবে দেশের মাঠে টেস্ট খেলার? ভারতও যেখানে দেশের মাঠে খেলে তিন ফাস্ট বোলার নিয়ে। ওয়ালশ মনে করেন না, এটা কোনো ভুল বার্তা দেবে তরুণ পেসারদের, ‘এই একটা টেস্টেই শুধু কোনো ফাস্ট বোলার খেলেনি। ফিজ (মোস্তাফিজুর রহমান) একটা টেস্টে খেলেছে। খালেদ ও ফিজ খেলেছে আরেকটা টেস্টে (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট)। এই টেস্টে আমরা খেলেছি সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। আমার মনে হয় এটা কোনো ভুল বার্তা নয়। একটা ফাস্ট বোলার ছাড়া জেতা যাবে কৌশলগতভাবে এটাই সেরা মনে হয়েছে আমাদের কাছে। ফলই সব। সিরিজ জেতার অনুভূতিই অন্য রকম। অধিনায়ক-কোচের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব হয়েছে। আর সামনে অনেক খেলা আছে। ওয়ানডে আছে, টি-টোয়েন্টি আছে, সেখানে অনেক পেসার খেলবে। তরুণেরা সেটা দেখবে এবং অনুপ্রাণিত হবে। একটা ম্যাচে ফাস্ট বোলার খেলেনি বলে তরুণেরা অনুপ্রাণিত হবে না, তা নয়।’

হতে পারেন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ। তবে তাঁর বড় পরিচয় তিনি একজন ক্যারিবীয়। একজন সাবেক ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দুর্দশা দেখে কতটা ব্যথিত? ওয়ালশ যে উত্তরটা দিলেন, চমকেই যাবেন, ‘দলের সবারই ভালো লাগছে। আমারও ভালো লাগছে। (গত জুলাইয়ে ক্যারিবীয়দের কাছে টেস্টে ধবলধোলাইয়ের পর) স্বদেশিদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েছিলাম। মিয়ামিতে যেয়েও আমাকে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। তেমন কিছু বলতে পারিনি। যখন (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে) ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলাম তখন প্রশ্ন কমেছে। এবার তো টেস্ট সিরিজও জিতলাম। খুব ভালো লাগছে। এই দলের অংশ হতে অনেক অনেক খুশি। ছেলেরা ভালো খেলেছে, অনেক খুশি। অনেক গর্বিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরেছে বলে বলতে পারতাম কিছুটা হতাশ। তবে আমি বাংলাদেশের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পেরে ভীষণ খুশি।’