অপ্রিয় প্রশ্নগুলোরও মুখোমুখি হলেন মাশরাফি

আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন মাশরাফি। ফাইল ছবি
আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন মাশরাফি। ফাইল ছবি
>ম্যাচ হারলে, কোনো সিদ্ধান্ত কাজে না লাগলে, অপ্রিয় প্রশ্নের মুখে অধিনায়ককে পড়তেই হয়। আজ মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে দলনেতা মাশরাফি নয়; নেতা মাশরাফি মুখোমুখি হয়েছিলেন বলেই রাজনীতির কিছু অপ্রিয় প্রশ্ন ধেয়ে গেল তাঁর দিকে

এমন সংবাদ সম্মেলন নিশ্চিতভাবেই তাঁর ‘নতুন ক্যারিয়ার’-এ প্রথম। রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর এটাই যে মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রথম সংবাদ সম্মেলন! এত দিন ম্যাচের আগে বা পরে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক যত প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন, সব ছিল ক্রিকেট নিয়ে। অপ্রিয় প্রশ্ন হয়তো সেসব সংবাদ সম্মেলনেও ছিল। কিন্তু আজকের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নগুলো ছিল মাশরাফির রাজনৈতিক জ্ঞান, ভবিষ্যৎ ও লক্ষ্য যাচাইয়ের। মাশরাফির কাছে এমন অনেক প্রশ্নই আজ ধেয়ে গেল, যেগুলো তাঁর জন্য ছিল অস্বস্তিকর।

রাজনীতিতে নামার ব্যাপারে মাশরাফির মূল যুক্তি দেশের জন্য কাজ করা। এর পাল্টা হিসেবে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, দেশের মানুষের জন্য কাজ তো তিনি এমনিতেই করছিলেন। রাজনীতিতে নামা না–নামা এতে কতটা পার্থক্য তৈরি হবে? জবাবে পাল্টা প্রশ্ন দিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমার ফাউন্ডেশনে কী কী কাজ হয়েছে বলতে পারবেন?’ প্রশ্নকর্তা কিছু কাজের কথা উল্লেখ করতেই মাশরাফি ব্যাখ্যা দিলেন, ‘একটাও কিন্তু ঠিক হয়নি। আমি রাস্তা কিন্তু করতে পারিনি। এটাই দেখেন, সবকিছু সবার কাছে পরিষ্কার না কিন্তু। ফাউন্ডেশন করে এটাই বুঝছি। অনেক কিছু করেছি কিন্তু মানুষ জানে না। নড়াইলেরই অনেকে কিছুই জানেন না। এটা সত্যি কথা। যেটা আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি করার চেষ্টা করেছি। আমার জায়গা থেকে। যে সুযোগটা আমাকে প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন আরেকটু বড় পরিসরে করার, সে জন্যই।’

মাশরাফির বেশির ভাগ কথায় উঠে এসেছে জনমানুষের উন্নয়ন। পাল্টা প্রশ্ন এসেছে, সাংসদদের কাজ তো আইন প্রণয়ন করা, এলাকার উন্নয়ন করেন তো সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা? উদাহরণ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের কথাও বলা হয়। মাশরাফির জবাব, ‘আসলে, আইন প্রণয়ন করাই তো জানি। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাজ উন্নয়ন করা অবশ্যই। আমি দেখেছি এ পর্যায়ে (সাংসদ) থেকে অনেক সাহায্য আসে, সরকারিভাবে অনেক সহযোগিতা আসে, এখান থেকে যাওয়ার পরে সেগুলো ঠিকভাবে বণ্টন করারও একটা ব্যাপার থেকে যায়। আমি চেষ্টা করব জিনিসগুলো ঠিকভাবে করার।’

সংবাদ সম্মেলনে এরপর উঠে এল নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রসঙ্গ। মাশরাফি উন্নয়ন করতে চান, নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরও তো একই চাওয়া। মাশরাফি তাহলে সেই প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে কোন দিক দিয়ে ভালো? মাশরাফির সোজা জবাব, ‘আমি তো এ কথা বলিনি একবারও।’ সংবাদকর্মীটি তখন বুঝিয়ে বললেন, না আপনি যখন ভোট চাইতে যাবেন তখন তো আপনাকে এ কথা বলতে হবে? অধিনায়কও পাল্টা বললেন, ‘আমি তো একবারের জন্যও বলি নাই আমি উনার (নির্বাচনে প্রতিপক্ষ) থেকে ভালো।’

বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ককে মুদ্রার উল্টোপিঠও দেখানো হয়। নির্বাচনে জিতলে মানুষের উন্নয়ন করাটা মাশরাফির জন্য সহজ হবে। কিন্তু জিততে না পারলে? দল যদি ক্ষমতায় না আসে? তখন মাশরাফির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী? এমনিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিহিংসার। মামলা, হয়রানি নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে কী করবেন? এই প্রশ্নও করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। মাশরাফির জবাব, ‘কাল আপনার জীবনে কী হবে সেটা আপনি জানেন না, আমার জীবনে কী ঘটবে সেটাও আমি জানি না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমি পরিষ্কার মন নিয়ে যাচ্ছি কি না। আমি শুধু আমাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, এর বাইরে কোনো কিছু আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আমি পুরো পরিষ্কার মনে আছি, আর আমি এখন শুধু এটাই ভাবছি। আর যেটা বললাম, কালকে আমার কী হবে সেটা আমি নিজেই জানি না। এত কিছু ভাবার সুযোগও নাই এখন আর।’

তাহলে ভোটাররা ঠিক কেন মাশরাফিকে ভোট দেবেন? মাশরাফির উত্তর, ‘দেখেন, ভোট তো সবার একটা একটা করে, আরেকজনের ভোটও একটা, আমার ভোটও একটা। যিনি ভোটটা দেবেন, তাঁর কাছে যদি আমার গ্রহণযোগ্যতা থাকে তবেই তিনি আমাকে ভোটটা দেবেন। আমার যতটুকু করণীয় থাকবে, অবশ্যই আমি ততটুকুই করব, বাদবাকিটা তাঁদের ব্যাপার, তাঁরা আমাকে ভোট দেবেন নাকি দেবেন না। সেটার নিয়ন্ত্রণ তো আমার কাছে নাই। আমি শুধু আমার বার্তা দিতে পারি, কিন্তু বাকিটা তো আমার হাতে নাই।’

সেই বার্তাটা কী? মাশরাফি তা বলতে চাইলেন না। নির্বাচনী আচরণবিধির ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চাইলেন।