চাপেই দেখা দিলেন সেরা মাশরাফি

দুর্দান্ত বোলিং করেছেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো
দুর্দান্ত বোলিং করেছেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো
মাঠে তাঁর প্রতিটি বল, প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত থাকবে আতশকাচের নিচে। এমন চাপের মুখে ক্যারিয়ারে খুব একটা পড়েননি মাশরাফি। আর চাপটাই তো তিনি ভালোবাসেন! এশিয়া কাপ, জিম্বাবুয়ে সিরিজে ভালো করতে পারেননি। আজ দিনের সেরা বোলার হিসেবে দেখা দিলেন সেই মাশরাফিই


মাশরাফি বিন মুর্তজা বোলিং করতে এসেই একটা ধাক্কা খেলেন। তাঁর প্রথম বলটা কাভার দিয়ে বাউন্ডারি মেরে দিলেন ড্যারেন ব্রাভো। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ককে বাউন্ডারি মেরে কি ভুলই করলেন ক্যারিবীয় টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান?

ওই একটা চারের ‘খেসারত’ হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টানা ৮২ বল আর বাউন্ডারিই মারতে দিল না বাংলাদেশ। ডট বল খেলতে খেলতে চাপটা যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে, তখনই ঝুঁকি নিতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানদের। আর সেটির সুযোগ নিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। ‘বাংলাদেশের বোলার’রা না বলে মাশরাফিই বলা উচিত। ১৫তম ওভারে প্রথম বোলিং করতে এসেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ওই স্পেলে টানা ৭ ওভারে বোলিং করেছেন। ৪২ বলের ৩৪টিই ডট। গতি ঘণ্টায় ১২০-১২৫ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও প্রতিটি বল করেছেন মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ ব্যবহারে। প্রায় ৫০ শতাংশ বল ফেলেন গুড লেংথে, অধিকাংশ বলের লাইন পঞ্চম স্টাম্পে।

মাশরাফিকে হাত খুলে খেলতে না পেরে রানের গতি স্লথ হয়ে যাওয়ায় দুবার জীবন পাওয়া ব্রাভো অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ঝুঁকি নিতে গিয়ে তামিম ইকবালের হাতে ধরা পড়েছেন এক্সট্রা কাভারে। অবশ্য যেভাবে লং অফ থেকে ছুটে গিয়ে ক্যাচটা শূন্য ভেসে লুফেছেন বাঁহাতি ওপেনার, মাশরাফি বলতে পারেন এই উইকেটটা তামিমেরই! থিতু হয়ে যাওয়া শাই হোপকেও একই ফাঁদে ফেলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের ক্যাচে পরিণত করে ফিরিয়েছেন মাশরাফি। প্রথম স্পেলে টানা ৭ ওভার বোলিং করে ১৪ রানে তুলে নিয়েছেন ২ উইকেট। মাশরাফি-ধাক্কা সামলে খুব একটা স্বচ্ছন্দে এগোতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজ অবশ্য রুবেল হোসেন বাদে বাংলাদেশের সব বোলারই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। আর এই বোলিং আক্রমণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি।

মাশরাফি দ্বিতীয় স্পেল বোলিং করতে এসেছেন ৩৭তম ওভারে। বাংলাদেশ অধিনায়ক এসেই মিড অফে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়েছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে। এই স্পেলে করা ২ ওভারে ৫ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। ৯ ওভারে ১৯ রান দেওয়া মাশরাফির ব্যয়বহুল ওভারটা হয়েছে নিজের শেষ ওভারে এসে। দিয়েছেন ১১ রান। বাউন্ডারি দিয়ে শুরু হয়েছিল, শেষ হলো ছক্কা দিয়ে। এর মাঝে যেটি হয়েছে তাতে বাংলাদেশের আজ বোলিং আক্রমণে সত্যিকারের নেতাই হয়ে থেকেছেন মাশরাফি।

৩ উইকেট দেখেই সফল বোলারের সনদটা তাঁকে দেওয়া যায়। কিন্তু উইকেটের চেয়ে অধিনায়ক বেশি বাহাবা পাবেন ৬০ বলের ৪১টি ডট দেওয়ায়। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিয়ন্ত্রণ বোলিংয়ের সংজ্ঞা কী, মাশরাফির বোলিংয়ের ভিডিও দেখানো যেতে পারে শিক্ষানবিশ পেসারদের।

গত জিম্বাবুয়ে সিরিজ ভালো যায়নি। ৩ ম্যাচে পেয়েছিলেন মাত্র ১ উইকেট, ইকোনমি ৬ ছুঁই ছুঁই। পুরোপুরি ফিট ছিলেন না, হয়তো সেটির প্রভাব পড়েছে পারফরম্যান্সেও। মাশরাফির ভালো যায়নি সবশেষ এশিয়া কাপও। কদিন আগে নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে। সেটি নিয়ে ইতিবাচক-নেতিবাচক কত আলোচনাই হচ্ছে। আজ মাশরাফি খারাপ করলে নিশ্চিত তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হতো। পান থেকে চুন খসার সুযোগ ছিল না।

মাশরাফি নিজেও কি আর তা জানেন না। মাঠে তাঁর প্রতিটি বল, প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত থাকবে আতশকাচের নিচে। এমন চাপের মুখে ক্যারিয়ারে খুব একটা পড়েননি মাশরাফি। আর চাপটাই তো তিনি ভালোবাসেন! অধিনায়ক নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই স্মরণীয় করে রেখেছেন ২০০তম ওয়ানডে। দলের সেরা বোলার কে? আরও একবার এই প্রশ্নের উত্তরে কোরাস তুলতে হবে: মাশরাফি, মাশরাফি!