উইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে দিয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

দলের জয় নিশ্চিত করে এসেছেন মুশফিক। ছবি: শামসুল হক
দলের জয় নিশ্চিত করে এসেছেন মুশফিক। ছবি: শামসুল হক

টেস্ট সিরিজের ফর্ম ওয়ানডেতেও টেনে নিল বাংলাদেশ দল। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাত্তাই দেয়নি মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ক্যারিবীয়দের দুই শ-র নিচে থামিয়ে পরে সেই রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ জিতেছে ৫ উইকেটে, ৮৯ বল হাতে রেখে। স্কোরকার্ড বলছে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ১৯৫ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর বাংলাদেশ এই রান তাড়া করেছে ৩৫ ওভারের মধ্যে। এটাই হওয়ার কথা, ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপট ছিল শুধুই বাংলাদেশের।

প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করে বড় কিছুর আভাস দিয়েছিলেন চোট কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরা তামিম ইকবাল। আজ তাঁর ফেরার এই ম্যাচে ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১২ রান। জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুর্দান্ত খেলা ইমরুল কায়েসও ভালো করতে পারেননি। এই ম্যাচে এটুকুই যা আক্ষেপ। বিশ্বকাপ সামনে রেখে বাকি সব জায়গায় ‘ফাইন টিউনিং’ করে নেওয়ার এই সিরিজের শুরুটা ভালোই হয়েছে বাংলাদেশের। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা সাকিব ২৬ বলে ৩০ করে ওয়ানডেতে বেশ কিছুদিন না থাকার খামতিটুকু কাটিয়ে নিলেন। সাকিব আর কিছুক্ষণ উইকেটে থাকলে জয়টা আরও আগেই পেত বাংলাদেশ।

সাকিব থাকতে পারেননি। থেকেছেন মুশফিক। জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন ‘মি. ডিপেন্ডেবল’। ৭০ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। অন্য প্রান্তে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ (১৪)। মাঝে সৌম্য সরকার একটু ঝড় তুলেছিলেন। কিন্তু রোস্টন চেজকে মুফতে একটা উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন এই ম্যাচে বাংলাদেশের চতুর্থ ওপেনার (১৩ বলে ১৯)। এই কৌশল যে বিশ্বকাপ সামনে রেখে সবাইকে বাজিয়ে দেখার তা বলাই বাহুল্য।

বাজিয়ে দেখার এই পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি বাজিয়েছেন অধিনায়ক নিজেই—মাশরাফি বিন মুর্তজা। ক্যারিয়ারের ২০০তম ওয়ানডেতে তাঁর বোলিং ফিগার ১০-৩-৩০-৩। তিন পেসার খেলানোর কৌশল ভালোই কাজে লাগিয়েছেন মাশরাফি। তাঁর মতোই ৩ উইকেট নিয়েছেন আরেক পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। বাকি ৩ উইকেটেও ‘এক’ ভাগ রয়েছে আরেক পেসার রুবেল হোসেনের।

স্বল্প সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের শুরুটা ছিল ধীরস্থির। প্রথম ৬ ওভারে এসেছে মাত্র ২১ রান। কোনো বাউন্ডারি নেই। পরের ওভারে কেমার রোচকে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ফ্লিক করে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন লিটন। না, আউট হয়নি। রোচ বোলিং ক্রিজে দাগ পেরিয়ে যাওয়ায় ‘নো বল’। কিন্তু লিটন ‘জীবন’ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি। ৫৭ বলে ৪১ রানের ইনিংসটা তিনি আরও টানতে পারতেন। দলকে অন্তত পৌঁছে দিতে পারতেন জয়ের কাছাকাছি। কিন্তু লিটন ফিরেছেন অভ্যাস পাল্টাতে না পারার খেসারত গুনে।

তামিম ইকবাল ফিরেছেন লিটনেরও আগে, আসলে সবার আগে। অষ্টম ওভারে রোস্টন চেজের স্পিন খুব ধীরে এসেছে তামিমের ব্যাটে। আর তামিম শট খেলেছেন একটু আগে। ফল যা হওয়ার তাই—তামিমের (২৪ বলে ১২) ব্যাটের কানায় লেগে বল দেবেন্দ্র বিশুর মুঠোবন্দী। পরের ওভারে ওশানে থমাসের গতির কাছে হার মেনে বোল্ড ইমরুল কায়েস। ওই ওভারের সব ডেলিভারিই গড়ে ১৪০ কিলোমিটারের ওপরে করেছেন থমাস। এই গতির কাছে হার মেনেই জিম্বাবুয়ে সিরিজের দুর্দান্ত ফর্ম এই সিরিজে অনূদিত করতে পারেননি ইমরুল (২ বলে ৪)। নবম ওভারে ইমরুল যখন আউট হলেন বাংলাদেশের স্কোর তখন ২ উইকেটে ৪২।

এখান থেকে তৃতীয় উইকেটে ৪৭ রানের জুটি গড়ে সম্ভাব্য মড়ক এড়ান মুশফিক-লিটন। ১৯তম ওভারে কেমো পলকে অযথাই ক্রস খেলতে গিয়ে বোল্ড হন লিটন। শটটি খেলার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। অনসাইডে খেলার প্রতি দুর্বলতা থেকে লিটন সম্ভবত লোভ সংবরণ করতে পারেননি। তবে চতুর্থ উইকেটে সাকিব-মুশফিকের বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলায় লিটনের আউট গ্যালারির দর্শকের ওপর সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। মুশফিকের সঙ্গে ৪৭ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়ে রোভম্যান পাওয়েলকে উইকেট দেন সাকিব।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে সিরিজের ধারা বজায় রাখেন বোলাররা। শুরু থেকেই বোলাররা দাপুটে শুরু করে প্রতিপক্ষকে চাপে রেখে রানটা নাগালে রেখেছেন কিন্তু অলআউট করতে পারেননি। বোলারদের দাপটে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা স্বস্তি নিয়ে ব্যাট করতে পারেননি। ধুঁকে ধুঁকে ৫০ ওভার পার করে তুলেছে ১৯৫ রান, হাতে ১ উইকেট রেখেই। সর্বোচ্চ ৪৩ রান এসেছে শাই হোপের ব্যাট থেকে।