এভাবে 'বাজপাখি' তামিম নিয়মিতই হন!

আজ দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছেন তামিম ইকবাল। ছবি: বিসিবি
আজ দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছেন তামিম ইকবাল। ছবি: বিসিবি

শিরোনামটি বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে! ‘অবিশ্বাস্য’ বিশেষণ দিয়ে যে ক্যাচের বর্ণনা দিতে হচ্ছে তেমন ক্যাচ তামিম ইকবাল হরহামেশা নেন! কিন্তু এটাই সত্যি, ব্যাট হাতে বীরত্ব দেখানো তামিম ফিল্ডিংয়েও নিয়মিত দলকে এনে দেন উদ্‌যাপনের উপলক্ষ। নিয়মিতই দর্শক ও ক্রীড়া সাংবাদিকদের তামিমের প্রশংসা করতে টেনে আনা হয় ক্ষিপ্রগতির বাজপাখিকে।

চোটের কারণে গত এশিয়া কাপের পর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলেননি তামিম ইকবাল। প্রস্তুতি ম্যাচ বাদ দিলে আজই জাতীয় দলে ফিরেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে। ইনজুরি নিয়ে অনেক দিন মাঠের বাইরে থাকার সুবাদে তাঁর তো মানসিকভাবে সংকোচে থাকার কথা। কিন্তু কীসের কী, ইনজুরি থেকে ফিরেছেন যেন আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে। না হলে ওইভাবে ঝাঁপিয়ে শরীর ফেলানোর সাহস পাওয়ার-ই কথা নয়।

২১তম ওভারের খেলা চলছিল। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৬ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে ফেলেছিলেন ড্যারেন ব্রাভো-শাই হোপ জুটি। কিন্তু সেই ওভারে মাশরাফির করা অফ স্টাম্পের বাইরের কাটার এক্সট্রা কভার দিয়ে উড়িয়ে মারেন ড্যারেন ব্রাভো। তামিম এর মধ্যে লং অফ অঞ্চল থেকে দৌড় দিয়েও যখন বলকে নাগালে পাচ্ছিলেন না, তখন দুর্দান্ত এক ডাইভে বলটা তালুবন্দী করেন। বল শূন্যে থাকতেই দুই হাতে তামিমের ক্যাচ নেওয়ার ছবিটা শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকদের মনে থাকবে অনেক দিন। এই অবিশ্বাস্য ক্যাচেই ক্যারিয়ারের ২০০তম ওয়ানডেতে প্রথম উইকেটের দেখা পেলেন মাশরাফি।

দেশ সেরা ওপেনার হিসেবেই তামিমের পরিচয়। কিন্তু ফিল্ডার হিসেবেও তাঁর জুড়ি নেই। এর আগেও কয়েকটি ম্যাচে বেশ কিছু দুর্দান্ত ক্যাচ নেওয়ার নজির আছে তাঁর। ২০১৪ সালে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচটার দিকে নজর দেওয়া যাক।

দেশের মাটিতে ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্মৃতিটা ম্লান হয়ে গেছে,কিন্তু তামিমের দুটি ক্যাচ এখনো চোখে ভাসে অনেকের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত দুটো ক্যাচ নিয়েছিলেন এই ওপেনার। যে ক্যাচ দুটো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা মুহূর্তের ফ্রেমে ঠাঁই পেয়েছিল নিঃসন্দেহে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ক্যাচটির জৌলুশ এমন, তাতে ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে প্রথমটি। না হলে উপস্থিত বুদ্ধির দিক দিয়ে প্রথমটিই ছিল সেরা। ১৯তম ওভারের প্রথম বল ছিল সেটি। জিয়াউর রহমানের বল উড়িয়ে মারলেন ক্রিস গেইল। মনে হচ্ছিল ছক্কাই হয়ে যাবে। লং অফে একেবারে সীমানা ঘেঁষে বলটা লুফে নিলেন তামিম।

কিন্তু গতি জড়তার কারণে বাউন্ডারির ওপাশে পড়ে যাচ্ছিলেন। বলসহ পড়লে ছক্কাই হয়ে যায়। তামিম হাত থেকে বলটা শূন্যে ছুড়ে দিলেন। নিজে চলে গেলেন বাউন্ডারির বাইরে। এরপর শরীরে ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে বাউন্ডারি লাইনের ভেতরে ঢুকে লুফে নিলেন ক্যাচটি। পরের ওভারের চতুর্থ বলে শর্ট থার্ডম্যানে নিলেন অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় লুফে নেওয়া আরেকটি ক্যাচ। সজোরে ব্যাট চালিয়েছিলেন ডোয়াইন ব্রাভো। কিন্তু বাজপাখির মতো লাফিয়ে ডান হাতে ক্যাচটা লুফে নেন বাঁ হাতি তামিম।

ক্যারিয়ারের শুরুতেই নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন তামিম। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে তামিমের সে ক্যাচটাও তো মনে থাকার কথা অনেকের। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ৩৯তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর বলে সজোরে হাঁকিয়েছিলেন উপুল চন্দনা। ছক্কার অপেক্ষাতেই ছিলেন এই লেগ স্পিনার। কিন্তু মাথার উপর দিয়ে বল চলে যাচ্ছে দেখে শরীর বাঁকিয়ে পেছনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন তামিম। অবিশ্বাস্য দক্ষতায় মাহমুদউল্লাহকে এনে দিলেন একটি উইকেট।