আগুনে লড়াই জিতে রিভারপ্লেটই মহাদেশসেরা

কোপা লিবার্তোদোরেস শিরোপা হাতে রিভারপ্লেটের খেলোয়াড়রা। ছবি: এএফপি
কোপা লিবার্তোদোরেস শিরোপা হাতে রিভারপ্লেটের খেলোয়াড়রা। ছবি: এএফপি
>

কোপা লিবার্তোদোরেস ফাইনালের ফিরতি লেগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বোকা জুনিয়র্সকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে রিভারপ্লেট। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ গোলের জয়ে শিরোপাও জিতল রিভারপ্লেট

‘ক্লাসিকো’ হলেই তা আগুনে লড়াই, সেখানে ‘সুপার ক্লাসিকো’ মানে তো আরও এক কাঠি সরেস। বোকা জুনিয়র্স আর রিভারপ্লেটের মুখোমুখি হওয়া মানে লাতিন ফুটবলপ্রেমীদের জিবে জল আনা ‘সুপার ক্লাসিকো’। কিন্তু সমস্যা হলো আর্জেন্টিনার এই দুটি ক্লাবের দ্বৈরথ এতটাই আগুনে যে বিপক্ষ দলের মাঠে সমর্থকদের ঢোকা নিষিদ্ধ। তবু সংঘর্ষ হয়, হবেও। এবার যেমন কোপা লিবার্তোদোরেস ফাইনাল ফিরতি লেগের তারিখ পাল্টানো হয়েছে দুবার। একটাই কারণ, সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ যেখান থেকে বাঁচতে পারেননি খেলোয়াড়েরাও। তাই বাধ্য হয়েই দক্ষিণ আমেরিকার ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ’খ্যাত কোপা লিবার্তোদোরেস ফাইনাল ফিরতি লেগের ভেন্যু ঠিক করা হয় মহাদেশটির বাইরে।

মাদ্রিদে প্রিয় দল জেতার পর বুয়েনস এইরেসে রিভারপ্লেট–সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: এএফপি
মাদ্রিদে প্রিয় দল জেতার পর বুয়েনস এইরেসে রিভারপ্লেট–সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: এএফপি

আর্জেন্টিনা থেকে একেবারে স্পেনে—রিয়াল মাদ্রিদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। কাল রাতে রিয়ালের এই মাঠেই ফিরতি লেগের মধ্যে দিয়ে মীমাংসা হয়েছে কোপা লিবার্তোদোরেস শিরোপার। যেখানে বিশ্বের অন্যতম আগুনে দ্বৈরথে চির প্রতিদ্বন্দ্বী বোকা জুনিয়র্সকে ৩-১ গোলে হারায় রিভারপ্লেট। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ গোলের জয়ে শিরোপা জিতল রিভারপ্লেটই।

কোপা লিবার্তোদোরেসের ৫৮ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনার এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব। গত ১১ নভেম্বর বোকা জুনিয়র্সের মাঠে প্রথম লেগে ২-২ গোলে ড্র করেছিল রিভারপ্লেট। ফিরতি লেগ খেলতে বোকার খেলোয়াড়েরা রিভারপ্লেট স্টেডিয়ামে গেলে তাঁদের টিম বাসে হামলা চালিয়েছিল স্বাগতিক সমর্থকরা। এতে বাধ্য হয়েই তখন ফিরতি লেগ মুলতবি ঘোষণা কর হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ম্যাচটি বুয়েনস এইরেস থেকে ৬ হাজার মাইল দূরে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। তাতেও অবশ্য দুই দলের সমর্থকেরা দমে যায়নি। কাল বার্নাব্যুর গ্যালারিতে দর্শকসংখ্যা ছিল প্রায় ৬২ হাজার।

রিভারপ্লেট–সমর্থকরা যেন অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বুয়েন্স আয়ার্সে পুলিশের কড়া টহল। ছবি: এএফপি
রিভারপ্লেট–সমর্থকরা যেন অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বুয়েন্স আয়ার্সে পুলিশের কড়া টহল। ছবি: এএফপি

ফিরতি লেগে বোকার জাল তাক করে ১৮টি শট নিয়েছে রিভারপ্লেটের খেলোয়াড়রা। পাসিং কিংবা বল দখলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে ছিল দলটি। অথচ আগে বোকাই এগিয়ে গিয়েছিল ম্যাচে। ৪৪ মিনিটে গোল করেন দলটির স্ট্রাইকার দারিও বেনেদিত্তো। ম্যাচের পরের গল্পটুকু শুধুই রিভারপ্লেটের। ৬৮ মিনিটে রিভারপ্লেটকে সমতায় ফেরান লুকাস প্রাতো। নির্ধারিত সময়ে খেলা দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ গোলে ড্র হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এর মধ্যে ৯২ মিনিটে উইলমার ব্যারিওস লাল কার্ড দেখায় ১০ জনে পরিণত হয় বোকা। এই সুযোগে অতিরিক্ত সময়ে রিভারপ্লেটকে দুটি গোল এনে দিয়ে দলটির দক্ষিণ আমেরিকার সেরা ক্লাব হওয়া নিশ্চিত করেন ফার্নান্দো কুইন্তেরো ও গঞ্জালো মার্তিনেজ।

রিভারপ্লেট ম্যাচে সমতায় ফেরার পর আনন্দে কেঁদেছেন অনেক সমর্থক। ম্যাচের বেশির ভাগ সময়ই আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছেন দর্শকরা। রিভারপ্লেটের জয় নিশ্চিতের পর বুনো উল্লাস করেছে দলটির সমর্থকরা। অন্যদিকে, হারের হতাশায় কেঁদেছেন বোকার সমর্থকেরা। আর্জেন্টাইন ফুটবল–ভক্তের ৩৮ শতাংশ বোকার সমর্থক, আর ৩৩ শতাংশ রিভারের। দেশের ৭১ শতাংশ ফুটবলপ্রেমী যখন শুধুই দুটো দলের অন্ধভক্ত, তখন আর কীই-বা বলার বাকি থাকে!