অ্যাডিলেডে জিতল ভারত, আর টেস্টের 'বিজ্ঞাপন' বানাল অস্ট্রেলিয়া

জয়ের সুবাস পেতে পেতে ছিল হারের শঙ্কা। অশ্বিন তা দূর করার পর কোহলির উল্লাস। ছবি: এএফপি
জয়ের সুবাস পেতে পেতে ছিল হারের শঙ্কা। অশ্বিন তা দূর করার পর কোহলির উল্লাস। ছবি: এএফপি
>

• অ্যাডিলেড টেস্টের শেষ দিনে রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৩১ রানে হারিয়েছে ভারত
• ভারত : ২৫০ ও ৩০৭
• অস্ট্রেলিয়া: ২৩৫ ও ২৯১

জিততে হলে অ্যাডিলেডে ইতিহাস গড়তে হতো অস্ট্রেলিয়াকে। লক্ষ্য ছিল ৩২৩ রানের। কাল এই লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ উইকেটে ১০৪ রানে চতুর্থ দিন শেষ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ দিনের সমীকরণ ছিল—জিততে হলে অস্ট্রেলিয়াকে করতে হবে আরও ২১৯ রান। আর ভারতের দরকার ছিল বাকি ৬ উইকেট। আজ পঞ্চম ও শেষ দিনে খেলার প্রায় ১৯ ওভার বাকি থাকতে ৩১ রানের জয় পেয়েছে ভারত। তার আগে অস্ট্রেলিয়া ২৯১ রানে অলআউট হলেও পেয়েছে জয়ের সুবাস। এই না হলে টেস্ট ক্রিকেট!

টেস্ট ক্রিকেট কতটা রোমাঞ্চকর, তা বোঝা গেল অ্যাডিলেড টেস্টের শেষ দিনে। দুই দলের চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ভারত জিতলেও জয়টা আসলে ক্রিকেটেরই। গ্যালারির প্রতিটি দর্শক দুই দলের এই রোমাঞ্চকর লড়াই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন। সত্যিই চার ম্যাচ সিরিজের এই প্রথম ম্যাচ টেস্ট ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন হয়েই থাকল।

সেই বিজ্ঞাপনের চুম্বক অংশ হয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ের লোয়ার অর্ডার। আজ শেষ দিনে সকালের সেশনের শুরুতে ১১ রান তুলতেই আগের দিনের অপরাজিত ট্রাভিস হেডকে (১৪) হারায় অস্ট্রেলিয়া। তাঁকে তুলে নেন ইশান্ত শর্মা। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১১৫। এরপর দলীয় ১৫৬ রানে শন মার্শও (৬০) জসপ্রীত বুমরার শিকার হয়ে ফিরলে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ের লেজ বেরিয়ে পড়ে। আর এই ‘লেজ’ ছাঁটতেই ঘাম ছুটে গেছে ভারতীয় বোলারদের। বলা ভালো, অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডার আরেকটু হলে দলকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দেওয়ার পথেই ছিল।

আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান শন মার্শ ও ট্রাভিস হেডের ৩১ রানের জুটি ভাঙার পর বাকিরা জানবাজি রেখে লড়েছেন। বাকি পাঁচটি উইকেট জুটিতেই ন্যূনতম ৩০ রানের পার্টনারশিপ গড়েছেন সবাই। ষষ্ঠ উইকেটে অধিনায়ক টিম পেইন-শন মার্শ (৪১), সপ্তম উইকেটে পেসার কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে আরও ৩১ রানের জুটি উপহার দেন পেইন, এরপর অষ্টম উইকেটে দুই পেসার মিচেল স্টার্ক ও কামিন্স মিলে গড়েছেন ৪১ রানের জুটি। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে কামিন্স যখন আউট হলেন জয় থেকে অস্ট্রেলিয়া তখনো ৬৪ রানের দূরত্বে। ওই পরিস্থিতিতেও ভারতের জয় দেখেছেন সবাই। সেই দেখায় ভুল ছিল না তবে শেষ উইকেটজুটিতে নাথান লায়ন ও জস হ্যাজেলউড জুটি আর কিছুক্ষণ টিকলে ভুল হতেও পারত। দশম উইকেটে যে দুজন গড়েছেন ৩২ রানের জুটি!

অন্য প্রান্তে সতীর্থরা শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারেননি। লায়নের লড়াই তাই বৃথা গেছে। ছবি: এএফপি
অন্য প্রান্তে সতীর্থরা শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারেননি। লায়নের লড়াই তাই বৃথা গেছে। ছবি: এএফপি

অশ্বিন এসে হ্যাজেলউডকে তুলে নিতেই ভারতীয় খেলোয়াড়দের সে কী উল্লাস! জেতা ম্যাচে হারের শঙ্কা জাগার পর জেতার আনন্দ যে অনির্বচনীয়। ততক্ষণে গ্যালারির দর্শকরাও আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে করতালির বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দেন দুই দলকে। ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী’—কথাটা দারুণভাবে অ্যাডিলেডের মাঠে অনূদিত করেছে দুই দলই।

আগের দিনই ১০০ রানের কাছাকাছি তুলে অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেট হারানোয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, ম্যাচের পাল্লা ভারতের দিকে। আর অ্যাডিলেডে এত রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়াও কখনো জিততে পারেনি। বুমরা, অশ্বিন ও শামি ৩টি করে উইকেট নিয়ে সেই ইতিহাস গড়ায় বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সফল। যদিও তাঁদের সফলতায় ভাস্বর হয়ে থাকবে পরাজিত দলের লোয়ার অর্ডারদের হঠাৎ করেই ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠা!

তারপরও বোলারদের পিঠ চাপড়ে দিতেই পারেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এশিয়ার প্রথম অধিনায়ক হিসেবে যে তিনি ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতলেন। কোহলির অধীনে ভারতের জন্য এ বছরটা সত্যিই বিশেষ কিছু। এ বছর এই তিনটি দেশেই যে টেস্ট জিতেছে ভারত। এর মধ্যে অ্যাডিলেড টেস্টটা আলাদা হয়ে থাকবে শুধু দুই দলের চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ের জন্য। যদিও ভারত এই ম্যাচ আরেকটু আগেই শেষ করে দিতে পারত। অষ্টম উইকেট পতনের পর নাথান লায়নের (৩৮*) ক্যাচ ছেড়েছেন ভারতের উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্ত। ওই ক্যাচটি নিতে পারলে টেস্টে এক ম্যাচে সর্বাধিক ক্যাচ নেওয়ার রেকর্ড গড়তেন পন্ত। সেটি যেমন হয়নি, তেমনি লায়নের লড়াইও বৃথা গেছে। তিনি এক প্রান্ত আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে তাঁর সতীর্থরা যে টিকতে পারল না। নইলে অস্ট্রেলিয়ান রূপকথাই লেখা হতো অ্যাডিলেডে।