মেসি-পিকেরা 'তারকার হাট' বানিয়ে দেখলেন রিভার প্লেটের ইতিহাস

তারার মেলা বসেছিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে, মাঠে ছিলেন লিওনেল মেসি। ছবি: টুইটার
তারার মেলা বসেছিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে, মাঠে ছিলেন লিওনেল মেসি। ছবি: টুইটার
>

কোপা লিবার্তোদোরেস ফাইনালের ফিরতি লেগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বোকা জুনিয়র্সকে ৩-১ গোলে হারিয়ে, সব মিলিয়ে ৫-৩ ব্যবধানে জিতে মহাদেশসেরা হয়েছে রিভার প্লেট। রিয়াল মাদ্রিদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুষ্ঠিত এই ‘সুপারক্লাসিকো’র ফিরতি লেগের আমেজ নিতে গ্যালারিতে ছিলেন লিওনেল মেসি, জর্দি আলবা, জেরার্ড পিকেসহ অনেক তারকা।

ইউরোপে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-লিভারপুল, জুভেন্টাস-এসি মিলান দ্বৈরথগুলোর আবেদন যেমন সর্বজনীন, একই কথা বলা যেতে পারে দক্ষিণ আমেরিকার বোকা জুনিয়র্স ও রিভার প্লেট দ্বৈরথের ব্যাপারেও। হয়তো ইউরোপের দ্বৈরথগুলোর চেয়েও বেশি উন্মাদনা সৃষ্টি করে এই ম্যাচ। আর্জেন্টিনার এই দুই দলের দ্বৈরথকে ‘সুপারক্লাসিকো’ তো আর এমনি এমনি বলা হয় না।

এবার দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা কোপা লিবার্তোদোরেসের ফাইনালে উঠেছিল এই দুই দল। বোকার মাঠে প্রথম লেগ ঠিকমতো হলেও দ্বিতীয় লেগের আগে বাধে ঝামেলা। বোকা জুনিয়র্স খেলোয়াড়দের ওপর রিভার প্লেটের সমর্থকদের হামলায় ফিরতি লেগের সময় পেছানো হয় দুবার, ঝামেলা এড়াতে শেষমেশ আর্জেন্টিনা থেকেই ম্যাচটা সরিয়ে নেওয়া হয়। ফিরতি লেগ আয়োজনের দায়িত্ব পায় রিয়াল মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। ‘সুপারক্লাসিকো’র মতো জিবে জল আনার ম্যাচ ঘরের উঠোনে হচ্ছে, ইউরোপের তারকারা তাই মাঠে বসে ম্যাচটা দেখার সুযোগ হারাতে চাননি। প্রচুর তারকাকে দেখা গেছে এই ম্যাচটা বার্নাব্যুতে বসে দেখতে। গ্যালারির সেই তারকার হাটে সবচেয়ে বড় নাম লিওনেল মেসি।

রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে নিজ ক্লাব বার্সেলোনার চূড়ান্ত বৈরিতাকে পাশে রেখে নিজ দেশের দুই সেরা ক্লাবের লড়াই দেখতে এসেছিলেন মেসি, বড় ছেলে থিয়াগোকে নিয়ে। মেসির সঙ্গে জেরার্ড পিকে, জর্দি আলবা, আরতুরো ভিদাল, সার্জিও বুসকেটসের মতো বার্সা তারকাকেও দেখা গেছে ভিআইপি বক্সে। রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ চেয়েছিলেন মেসি ও তাঁর ক্লাবের সাবেক ফরোয়ার্ড একসঙ্গে বসে ম্যাচ উপভোগ করবেন। কিন্তু বর্তমানে জুভেন্টাসে খেলা রোনালদো ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ মেসির সঙ্গে বসে ম্যাচ দেখতে চাননি।

রোনালদো না গেলেও জুভেন্টাসের অনেক খেলোয়াড় এই ম্যাচ সামনাসামনি দেখার সুযোগ হারাননি। জর্জো কিয়েল্লিনি, লিওনার্দো বোনুচ্চি, পাওলো দিবালা, মাত্তিয়া ডি শিলিও, রদ্রিগো বেনতাঙ্কুর একসঙ্গে বসে ম্যাচ দেখেছেন এদিন। নিজের খেলোয়াড়দের নিয়ে ম্যাচ দেখতে চলে এসেছিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের আর্জেন্টাইন কোচ দিয়েগো সিমিওনেও। কোচের সঙ্গে বার্নাব্যুতে এসেছিলেন আতোয়াঁ গ্রিজমান, দিয়েগো গডিন, স্টেফান সাভিচ, হোসে জিমেনেজ, ফিলিপে লুইস, থমাস লেমার, অ্যানহেল কোরেয়া প্রমুখ। গ্রিজমান তো আবার এক কাঠি সরেস—গায়ে চাপিয়েছিলেন বোকা জুনিয়র্সের জার্সি, যদিও ম্যাচশেষে হতাশা নিয়েই ফিরতে হয় তাঁকে।

ইন্টার মিলানের আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি হাভিয়ের জানেত্তি, এস্তেবান ক্যাম্বিয়াসো, ওয়েসলি স্নেইডার ও ইন্টারের সাবেক অধিনায়ক মাউরো ইকার্দিও ছিলেন গ্যালারিতে। ইউরোপে খেলা দক্ষিণ আমেরিকার খেলোয়াড়দেরই বেশি দেখা গেছে গ্যালারিতে। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বেনফিকার নিকো গাইতান, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মার্কোস রোহো, ওয়েস্ট হ্যামের ম্যানুয়েল লানজিনি, ভিয়ারিয়ালের রামিরো ফুনেস মোরি, মার্শেইয়ের লুকাস ওকাম্পোস প্রমুখ। ছিলেন বায়ার্নের হামেস রদ্রিগেজ। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের বর্তমান কোচ লিওনেল স্কালোনি ও আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ক্লদিও তাপিয়াকেও দেখা গেছে।

সাবেক তারকাদের মধ্যে মাঠে আরও দেখা গেছে উরুগুয়ের এনজো ফ্রান্সেস কোলি, আর্জেন্টিনার মার্টিন ডেমিকেলিস ও আলেহান্দ্রো ডমিঙ্গেজ, স্পেনের মিশেল সালগাদো, হুগো গাত্তি, মরিসিও পেল্লেগ্রিনো ও র‍্যামন দিয়াজকে। উয়েফাপ্রধান জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও মাঠে বসে ম্যাচ উপভোগ করেছেন।

সে ক্ষেত্রে কপালপোড়া বলতে হবে রিয়ালের খেলোয়াড়দেরই। নিজেদের মাঠে খেলা হলেও তারা ম্যাচটা দেখতে পারেননি। কাল হুয়েস্কার মাঠে ম্যাচ ছিল রিয়ালের। সে ম্যাচে খেলার কারণে সুপারক্লাসিকোর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সার্জিও রামোস, গ্যারেথ বেল, করিম বেনজেমা, লুকা মদরিচরা। তবে রিয়ালের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ হুয়েস্কার বিপক্ষে ম্যাচটা দেখতে গেলেও প্রথমার্ধের পর চলে আসেন বার্নাব্যুতে। নিজের মাঠে এত বড় একটা ম্যাচ হবে, যে ম্যাচ আয়োজনের ব্যাপারে তারই সবচেয়ে বড় হাত, সেই ম্যাচ তিনি দেখবেন না, তা কি হয়?