বিশ্বকাপের দল কি গোছানো হলো বাংলাদেশের?

দল অনেক ভারসাম্যপূর্ণ হয়েছে বলে মনে করেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো
দল অনেক ভারসাম্যপূর্ণ হয়েছে বলে মনে করেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো
>

দেশের মাঠে জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি সিরিজে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপের দলটা গুছিয়ে ফেলা। বিশ্বকাপের দল গোছাতে গিয়ে বাংলাদেশ অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে এই দুই সিরিজে। কিছু উত্তর পেয়ে গেছে, আবার কিছু প্রশ্ন থেকেও গেছে। মাশরাফি বলছেন, দল অনেক ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে গেছে।

অক্টোবরে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক-কোচ দুজনই জানিয়েছিলেন, দেশের মাঠে জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি হোম সিরিজে তাঁদের অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে বিশ্বকাপের দলটা গুছিয়ে ফেলা। ওয়ানডে হিসাব করলে দুটি হোম সিরিজই শেষ। বাংলাদেশ কি পেরেছে ২০১৯ বিশ্বকাপের দল গোছাতে? এ দুই সিরিজে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খতিয়ান দেখলেই পাওয়া যাবে উত্তর।

সৌম্যকে ওপরে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। ছবি: প্রথম আলো
সৌম্যকে ওপরে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। ছবি: প্রথম আলো


সৌম্য ওপরেই ভালো
সৌম্য সরকারকে কোথায় খেলাবে বাংলাদেশ, লোয়ার মিডল অর্ডার, আরও নির্দিষ্ট করে বললে সাতে? নাকি টপ অর্ডারে? টিম ম্যানেজমেন্ট চার ওপেনার খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সৌম্যর জায়গা হয়েছে লোয়ার মিডল অর্ডারে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নতুন বল খেলতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন, ৩০ গজি বৃত্ত ব্যবহার করতে পারেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ও সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছেন তিনে নেমেই। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ ও সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে যে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন, সেটিও তিনে নেমে। কিন্তু রান পাননি ছয়-সাত নেমে। এই পজিশন যে তাঁর জন্য আদর্শ নয়, সেটি মাশরাফি বেশ কয়বার বলেছেন, ‘আমি সব সময় চাইব সৌম্য ওপেন কিংবা তিনে ব্যাট করুক; যদি না ডানহাতি কিংবা বাঁহাতি কম্বিনেশনে সমস্যা না হয়।’ সিলেটে শেষ ওয়ানডের পর টিম ম্যানেজমেন্ট অন্তত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে, সৌম্যকে ওপরেই খেলানো যেতে পারে।

সাতে তাহলে কে?
সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের ফাইনাল কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে এই জায়গায় সৌম্যকে দিয়ে চেষ্টা চালিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সৌম্য যদি ওপরেই থিতু হন, তবে এই জায়গায় খেলবেন কে? কোচ স্টিভ রোডস বেশ কবার বলেছেন, বিশ্বকাপ সামনে রেখে সাতে তিনি একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার চান। সাইফউদ্দীনকে তিনি তৈরি রাখতে চান এ কারণে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে ভালো করা সাইফ অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তেমন খেলার সুযোগ পাননি। কাল যাও–বা একটা ম্যাচ খেলেছেন, কিন্তু ব্যাটিংয়ের সুযোগ হয়নি। বিশ্বকাপে সাতে কাকে দেখা যাবে নিয়মিত, সেটির উত্তর পেতে আরেকটু সময় হয়তো লাগবে।

ওয়ানডেতেও বল হাতে ভালো করছেন মিরাজ। ছবি: প্রথম আলো
ওয়ানডেতেও বল হাতে ভালো করছেন মিরাজ। ছবি: প্রথম আলো


টেস্টের মিরাজ এখন ওয়ানডেরও
ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টেই ১৯ উইকেট! টেস্টে মেহেদী মিরাজের শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। সাদা পোশাকে শুরুর সেই প্রতিশ্রুতি ধরে রেখে ১৮ টেস্টে ৮৪ উইকেট হয়ে গেছে তাঁর। কিন্তু রঙিন পোশাকে মিরাজের এমন ঝলমলে বোলিংয়ের দেখা একটু কমই দেখা গেছে। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ২১ ওয়ানডেতে উইকেট ছিল ২০টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে মিরাজ সাদা পোশাকের দুর্বোধ্যতা রঙিন পোশাকেও টেনে এনেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টেস্টে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। এবার শেষ ওয়ানডেতেও ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ওয়ানডেতে বছরটাও তাঁর ভালো কেটেছে। একজন ভালো অফ স্পিনার সঙ্গে নিচের দিকে ব্যাটিংটাও পারেন—এই চাহিদা পূরণে মিরাজের ওপর আস্থা রাখা যেতেই পারে।

ইমরুল-রুবেলকে নিয়ে দ্বিধা
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটা ইমরুলের কেটেছে স্বপ্নের মতো। ১১৫, ৯০ ও ১৪৪—তিন ম্যাচে করলেন ৩৪৯ রান। এই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর তাঁকে পরের ওয়ানডে সিরিজে বসিয়ে রাখা অন্যায়! টিম ম্যানেজমেন্ট তাই জিম্বাবুয়ে সিরিজের পুরস্কার হিসেবে ইমরুলকে উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম দুটি ওয়ানডেতে খেলিয়েছে। দুটিতেই তিনে খেলেছেন তিনে। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া ছন্দটা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান টেনে আনতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে। দুই ম্যাচে ৪ রান করার পর তাঁকে কাল বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দুর্দান্ত তো এই নিষ্প্রভ ইমরুলকে নিয়ে একটু দ্বিধায় বাংলাদেশ। একই দ্বিধা রুবেল হোসেনকে নিয়েও। শুরুতে চোটের কারণে, পরে সমন্বয়ের কারণে জিম্বাবুয়ে সিরিজে সুযোগ পাননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা রুবেলকে নিয়ে একটা চিন্তা থেকে গেল বাংলাদেশের।

ব্যাটিংয়ে সাত নম্বরে পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে সাইফউদ্দীনকে তৈরি রাখতে চান কোচ স্টিভ রোডস। ছবি: প্রথম আলো
ব্যাটিংয়ে সাত নম্বরে পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে সাইফউদ্দীনকে তৈরি রাখতে চান কোচ স্টিভ রোডস। ছবি: প্রথম আলো


তাঁরা শুধুই বেঞ্চের?
দুই হোম সিরিজেই বেশির ভাগ ম্যাচে সাইড বেঞ্চে বসে কেটেছে আরিফুল হক, নাজমুল ইসলাম অপু ও আবু হায়দারের। জিম্বাবুয়ে সিরিজে যা একটু বাজিয়ে দেখা হয়েছিল তাঁদের, ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিরিজে সুযোগই পাননি কেউ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই সিরিজ জিততে চাওয়ায় বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডের একাদশ অপরিবর্তিত রেখেই নেমেছে। সেটি না হওয়ায় সিরিজ–নির্ধারণী ম্যাচে কোনো ঝুঁকিই নিতে চায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তাই আরিফুল, নাজমুল, আবু হায়দারদের আরেকবার পরখ করে দেখা যায়নি। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে যাওয়ার আগে তাঁদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ অবশ্য এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তবে হোম সিরিজে এই সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি।

কী বলেন অধিনায়ক মাশরাফি
মাশরাফি বেশ খুশি। গত তিন বছরে দেশের মাঠে হওয়া ৮০ শতাংশ সিরিজই বাংলাদেশ জিতেছে। বিশ্বকাপের দল দল গোছানো নিয়ে অধিনায়কের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ‘খুব ভালো কয়েকটি ব্যাপার আছে। মিরাজ এ বছর খুব ভালো অবস্থায় আছে। হয়তো যখন টিম ম্যানেজমেন্ট ওকে নিয়েছিল, তখন তারাও এতটা আশা করেনি যে এতটা ভালো করবে। শুধু দেশে না, ওয়েস্ট ইন্ডিজেও সে ভালো করেছে। আজকেও (কাল) ভালো করেছে, জিম্বাবুয়ে সিরিজে করেছে। সৌম্য মোটামুটি থিতু হচ্ছে। ইমরুল আছে আশপাশেই। ১৬-১৭ জনের একটি দল আছে। আমার কাছে মনে হয়, ওরা যদি সবাই ফিট থাকে, কোনো দুর্ঘটনা না হয়, তাহলে বেশির ভাগ ক্রিকেটার এখান থেকে যাবে। কোনো ইনজুরি বা ফর্ম একবারেই বাজে না হলে। বিশ্বকাপের আগে আছেই হয়তো আর ৭টি ওয়ানডে। খুব বেশি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।’