শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পেতে কী দরকার বায়ার্নের?

>
নিকো কোভাচের জন্য বড় সুযোগ এই দলবদলের মৌসুম। ছবি: টুইটার
নিকো কোভাচের জন্য বড় সুযোগ এই দলবদলের মৌসুম। ছবি: টুইটার

১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে শীতকালীন দলবদলের মৌসুম। মৌসুমের শুরুতে দলের মধ্যে সৃষ্ট হওয়া সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে শূন্যস্থান পূরণের জন্য হাজির হয় এই দলবদল মৌসুম। এ দলবদলে কোন দলের কী সমস্যা, কোন দলের বিভাগে দরকার নতুন মুখ—এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করা হবে প্রথম আলোতে। আজ তৃতীয় পর্বের দল হিসেবে থাকছে বায়ার্ন মিউনিখ।

বুন্দেসলিগায় একচ্ছত্র আধিপত্য জারি করেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। শেষ কবে ২০১১-১২ মৌসুমে ইউর্গেন ক্লপের বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বুন্দেসলিগার শিরোপা ছোঁয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। এরপর টানা ছয় মৌসুম ধরে বুন্দেসলিগার শিরোপা নিজেদের কাছে রেখেছে বায়ার্ন মিউনিখ। কার্লো আনচেলত্তির দ্বিতীয় বছরে খুব বাজে সময় কাটানোর পরও লিগ শিরোপা হাতছাড়া হয়নি বায়ার্ন মিউনিখের। কিন্তু এই মৌসুমে কোনো কিছুতেইও কিছু হচ্ছে না। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কাছেই লিগের শীর্ষস্থান। মাঝ মৌসুমে ডর্টমুন্ডের চেয়ে ছয় পয়েন্ট পেছনে বায়ার্ন।

এ মৌসুম শেষেই বায়ার্ন মিউনিখকে বিদায় বলতে চলেছেন বিখ্যাত ‘রোবারি’ জুটি। ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে রোবেনকে কেনার পর থেকে বায়ার্ন মিউনিখ সমর্থকদের দুই নয়নের মণি উঠেছিলেন ফ্র্যাঙ্ক রিবেরি-আরিয়েন রোবেন জুটি। দুই উইংয়ে দুজনের দৌড় দেখে কত ভক্ত শিহরিত হয়েছেন, তা গুনে শেষ করা যাবে না। ‘রোবারি’ জুটি বাভারিয়ানদের উপহার দিয়েছে মোট ১৯ টি শিরোপা, তার মধ্যে রয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ক্লাব বিশ্বকাপও। বিখ্যাত এ জুটি বিদেয় নিচ্ছেন এই মৌসুম শেষেই। এত দিন আক্রমণের দুই উইং আগলে রেখেছেন দুজনে। কিন্তু এই মৌসুম শেষেই তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে বাভারিয়ানদের।

‘রোবারি’ জুটি নিয়ে দর্শকদের পাগলামি আর হয়তো দেখা যাবে না, এঁদের বিকল্প খুঁজছে বায়ার্ন। সংগৃহীত ছবি
‘রোবারি’ জুটি নিয়ে দর্শকদের পাগলামি আর হয়তো দেখা যাবে না, এঁদের বিকল্প খুঁজছে বায়ার্ন। সংগৃহীত ছবি

সাবেক ফ্রাঙ্কফুর্ট কোচ নিকো কোভাচ বুঝে নিয়েছেন এবার বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব। ক্রোয়াট কোচের অধীনে ভালোই সূচনা করেছিল বায়ার্ন। কিন্তু দিন যেতেই সমস্যা বের হতে শুরু করেছে। দলের তিন মূল তারকা রোবেন, রিবেরি ও থমাস মুলারের বয়সের ছাপ খেলাতে প্রকাশ পাচ্ছিল। মুলার অবশ্য ফর্ম ফিরে পেয়েছেন ইদানীং। কিন্তু হামেস রদ্রিগেজ কিংবা কোরেন্তিন তোলিসোর ওপর আস্থা হারিয়েছেন কোচ কোভাচ। ফলে মাঝ মাঠ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছেই বায়ার্নের।

যে কারণে দলবদলের মৌসুমে ‘কিপটে’ ট্যাগ লেগে থাকা উলি হোয়েনেস ও কার্ল-হেইঞ্জ রুমিনেগের বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ খরচ করা লাগবে দলটা গড়ে নেওয়ার জন্য। নতুন করে গড়ার জন্য অবশ্য সেই অর্থ খরচ করতে আপত্তি নেই। কারণ আপাতত বুন্দেসলিগার শীর্ষস্থান হারালেও ঘরোয়া লিগে খুব একটা নজর নেই বায়ার্নের। ইউরোপ সেরার মুকুটটা ৫ বছর ধরে স্পেনে পড়ে আছে। চ্যাম্পিয়নস লিগেই নজর তাদের। পেপ গার্দিওলা, কার্লো আনচেলত্তির মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের দুই কোচ এনেও যখন শিরোপা আসেনি, তখন স্পষ্ট দলের স্কোয়াড ঢেলে সাজানো দরকার। গোলবারে ম্যানুয়েল নয়ারের বিকল্প খোঁজার সময় চলে এসেছে। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ দলের ডিফেন্সটা সাজানো। তাই রক্ষণ ঠিক করার কাজে নেমেছে বায়ার্ন।

দুই ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার লুকাস হার্নান্দেস ও বেঞ্জামিন পাভার, দুজনকে একসঙ্গে দলে চায় বায়ার্ন মিউনিখ। ছবি: টুইটার
দুই ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার লুকাস হার্নান্দেস ও বেঞ্জামিন পাভার, দুজনকে একসঙ্গে দলে চায় বায়ার্ন মিউনিখ। ছবি: টুইটার

ফিলিপ লামের বিদায়ের পর জশুয়া কিমিখকে দিয়ে কাজ চালিয়ে গিয়েছে তারা। আক্রমণে দুর্দান্ত হলেও রক্ষণে তাঁর ওপর ভরসা রাখতে পারছে না দল। গত চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই এটা টের পাওয়া গেছে। তাই বায়ার্নের নজর বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্সের রাইটব্যাক বেঞ্জামিন পাভারের দিকে। জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করলে কোনো খরচ করা ছাড়াই তাঁকে দলে পাওয়া যাবে। তবে জানুয়ারিতে কিনতে হলে ৪০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হবে।

বায়ার্নের জন্য চিন্তার বিষয় তাদের সেন্টারব্যাক পজিশন। জেরোম বোয়েটাং ও ম্যাটস হামেলস বহুদিন হলো সেরা ফর্মে নেই। বিকল্প হিসেবে নিকলাস শুলে আছেন। তবে লেফটব্যাক ও সেন্টার ব্যাক দুই পজিশনে খেলতে পারেন বলে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের লুকাস হার্নান্দেসকে কিনতে চায় বায়ার্ন। তাঁকে ছাড়তে রাজি নয় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, তাই খরচ করতে হবে ৮০ মিলিয়ন ইউরো। যেটা বাভারিয়ানদের দলবদলের রেকর্ডের প্রায় দ্বিগুণ!

বায়ার্নে যাওয়ার জন্য ভেরনার আর কত ইঙ্গিত দেবেন? ছবি: এএফপি
বায়ার্নে যাওয়ার জন্য ভেরনার আর কত ইঙ্গিত দেবেন? ছবি: এএফপি

মৌসুমের শুরুতেই বায়ার্ন মাঝমাঠের কয়েকজনকে ছেড়ে দিয়েছে। সেবাস্তিয়ান রুডি আর আর্তুরো ভিদালের বিদায়ে মাঝমাঠে কিছুটা বাজে অবস্থার তৈরি হয়েছে। লিওন গোরেৎজকা এখনো দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। হামেস রদ্রিগেজও হয়তো রিয়াল থেকে ধার শেষে বায়ার্নে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন এখন। হাভি মার্টিনেজ, তোলিসো, রেনাতো সানচেজ আর নাব্রি আছেন। এদের সঙ্গে সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডার হিসেবে রয়েছেন শুধু থিয়াগো আলকানতারা। তাই মাঝমাঠে এই দলবদলের মৌসুমেই নতুন খেলোয়াড় কিনতে চায় বায়ার্ন। লেভারকুসেনের কাই হ্যাভার্টকে দলে টানতে চায় বায়ার্ন। ওয়েস্ট হামের জ্যাক উইলশেয়ারকেও কিনতে চাচ্ছে বায়ার্ন মিউনিখ।

বায়ার্নের সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হতে যাচ্ছে আক্রমণভাগে। ‘রোবারি’ জুটির বিদায়ের ফলে গোল করার লোক কমে যাচ্ছে। মুলার, রবার্ট লেভানডফস্কির বয়স বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে তাদের খেলায়। সান্দ্রো ওয়াগনার এসেছেন, তবে তাঁর বয়স সাহস দিচ্ছে না বায়ার্ন বোর্ডকে। ১৯ বছর বয়সী দক্ষিণ কোরিয়ান খেলোয়াড় জিওং ও ইয়ংকে কেনা হয়েছে এ কারণেই। তবে বায়ার্নে যোগ দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছেন আরবি লাইপজিগ ও জার্মান জাতীয় দলের স্ট্রাইকার টিমো ভেরনার। মিডিয়ায় সরাসরি বলেই দিয়েছেন, ‘জার্মানিতে একটাই বড় ক্লাব, আর সেই ক্লাবে সবাই যেতে চায়।’ সরাসরি ইঙ্গিত যে বায়ার্নের দিকে সেটা বলে বোঝাতে হয় না।

একটু নেতিবাচক শুরু বলে অনেক সমালোচনা হয়েছে কোচ নিকো কোভাচের। তাঁর সামনে সুযোগ এই দলবদলকে কাজে লাগানোর। এর মধ্যেই একবার বরখাস্ত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পরেছে। আরেকবার পিছিয়ে পরলে তাঁকে বাদ দিতেও ভাববে না বায়ার্ন বোর্ড। জাভি আলোনসোকে বায়ার্নের ডাগ আউটে দেখার ইচ্ছে অনেক দিন আগেই প্রকাশ করেছেন সভাপতি। কোভাচ কি দলবদলটা কাজে লাগাতে পারবেন?

আরও পড়ুন