মেসির ফেরার আশায় আর্জেন্টিনা

ছোটবেলায় রোজারিওর যে এলাকায় ফুটবল নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন, বড়দিনের ছুটিতে মেসি এবার সেখানে গেছেন কি না জানা যায়নি। গেলে দেয়ালে, রাস্তার পাশে তাঁর নিজের এমন অনেক ম্যুরালই চোখে পড়ার কথা বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের। ছবি: ইএসপিএন
ছোটবেলায় রোজারিওর যে এলাকায় ফুটবল নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন, বড়দিনের ছুটিতে মেসি এবার সেখানে গেছেন কি না জানা যায়নি। গেলে দেয়ালে, রাস্তার পাশে তাঁর নিজের এমন অনেক ম্যুরালই চোখে পড়ার কথা বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের। ছবি: ইএসপিএন
>

বিশ্বকাপের পর থেকে জাতীয় দল থেকে দূরে থাকা মেসি নতুন বছরেই ফিরবেন, এমন আশা আর্জেন্টিনা কোচের।

সেই রাশিয়া বিশ্বকাপের পর থেকেই লিওনেল মেসির মুখে কুলুপ আঁটা। আর কখনো আর্জেন্টিনার জার্সিতে খেলবেন কি না, নাকি একেবারেই অবসরে চলে গেলেন...কিছুই জানাচ্ছেন না। না তিনি, না তাঁর আশপাশের কেউ।

শুধু সংবাদমাধ্যমেই যা একের পর এক গুঞ্জন শোনা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজার পেয়েছে যে গুঞ্জন, সেটি এই, আগামী বছর ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা আছে, তার আগে মার্চে প্রীতি ম্যাচগুলো দিয়েই আবার ফিরবেন মেসি। আসলেই ফিরবেন কি না, তা বলবে সময়। তবে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি বসে আছেন সেই আশায়-২০১৯ সালেই ফিরবেন মেসি!

আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) টুইটারে প্রকাশিত এক ভিডিওতে স্কালোনি নিজেই জানিয়েছেন সেই আশার কথা, ‘মেসির সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হয় না, তবে আমাদের মধ্যে দারুণ একটা সম্পর্ক আছে। আমরা চেষ্টা করব, যাতে সে ২০১৯ সালে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়। আমরা আরও কয়েকবার বসব কথা বলতে, আশা করি সেটা ইতিবাচকভাবেই শেষ হবে। আমাদের জন্য সেটা (সাক্ষাৎ ইতিবাচকভাবে শেষ হওয়া) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো কোচই ওকে কোচিং করাতে চাইবে, আমি তো অন্য যে কারও চেয়ে বেশি চাই।’

এই মাসের শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে বোকা জুনিয়র্স ও রিভার প্লেটের মধ্যে কোপা লিবার্তাদোরেসের ফাইনালে মেসি গিয়েছিলেন দর্শক হয়ে, সেখানে স্কালোনি ও এএফএর প্রধান ক্লদিও তাপিয়ার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এরপরই স্কালোনির মুখে এই আশার বাণী আর্জেন্টিনা-ভক্তদের হৃদয়ে দোলা দিতেই পারে।

এ তো গেল জাতীয় দল, আর্জেন্টিনার একটা ক্লাবের ভক্তদের মনেও মেসিকে ঘিরে আশা দিনে দিনে আরও জোরালো হচ্ছে-মেসিরই ছোটবেলার ক্লাব নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ। বার্সেলোনা ছেড়ে ওল্ড বয়েজে ফিরেই ক্যারিয়ার শেষ করতে চান, সেটি তো অনেকবারই বলেছেন মেসি। ৩১ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড দিনে দিনে যত ক্যারিয়ারের সায়াহ্নের দিকে এগোচ্ছেন, তাঁর অন্য ভক্তদের মনে তথ্যটা বেদনা জাগালেও আশা জেগে উঠছে ওল্ড বয়েজ সমর্থকদের মনে।

পুরোনো কথাটা হঠাৎ নতুন করে জাগছে বড়দিন উদ্‌যাপনে মেসি আর্জেন্টিনায় তাঁর শহর রোজারিওতে যাওয়ার পর। প্রতিবছরই অবশ্য যান মেসি। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম বয়সের কারণেই! ত্রিশোর্ধ্ব মেসিকে নিজেদের লাল-কালো জার্সিতে দেখতে পাওয়ার বাসনা দিনে দিনে নিওয়েলস-ভক্তদের আরও বাড়ছে। এমনিতে ক্লাবের সিনিয়র দলে একটা ম্যাচও না খেললেও মার্সেলো বিয়েলসা, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাদের পাশে মেসিও ক্লাবটিতে কিংবদন্তির মর্যাদা পান। ‘মেসি: তোমার স্বপ্নই আমাদের চাওয়া’-এমন একটা ব্যানারও প্রতি ম্যাচেই দেখা যায় নিওয়েলসের গ্যালারিতে। অনেকের চোখে এটা হবে ১৯৯৩ সালে ইউরোপ ছেড়ে ডিয়েগো ম্যারাডোনার বোকা জুনিয়র্সে ফেরার মতোই।

শুধু কি ভক্তরা, ক্লাবও কম যায় না! মেসি যত সাক্ষাৎকারে নিওয়েলসে ফিরতে চাওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছেন, এমন সব সাক্ষাৎকার মিলিয়ে একটা ভিডিও গত মে মাসে নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়েছে নিওয়েলস। ক্লাবটার ক্রীড়া পরিচালক সেবাস্তিয়ান পেরাত্তাও ইএসপিএনকে সম্প্রতি বলেছেন, ‘এমন একটা দিন নেই, যেদিন আমরা চাই না যে এটা হোক (মেসি ফিরুন নিওয়েলসে)। যেটা আমাদের স্বপ্ন দেখায়, আরও রোমাঞ্চিত করে, সেটা হলো যে মেসির ফেরার কথাটা আমরা বলছি না। ও নিজে থেকেই বলছে।’

যদিও প্রক্রিয়াটা যে সহজ হবে না, সেটা পেরাত্তা জানেন। আর্থিকভাবে নিওয়েলস ধুঁকছে, মাঠের খেলায়ও আছে অবনমনের শঙ্কা। এখানে তাই নিওয়েলসের চেয়েও মেসিকেই মূল ভূমিকাটা নিতে হবে জানিয়ে বললেন, ‘যদি মেসি বলে যে ও নিওয়েলসে খেলে স্বপ্ন পূরণ করতে চায়, তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করতে আমরা সম্ভাব্য সবই করব। কিন্তু ব্যাপারটা আমাদের ওপর নির্ভরশীল নয়। আমরা এখানে চলচ্চিত্রের দ্বিতীয় সারির অভিনেতার মতো।’

সব বাধার কথা জানিয়েও শেষে আশাটা ঠিকই জানিয়ে রেখেছেন পেরোত্তা, ‘অবশ্যই, দিন যত গড়াচ্ছে, মেসির ফেরার সম্ভাবনা যত বাড়ছে, এই ক্লাব আর শহরে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। অস্বীকার করছি না, কোনো একদিন ও ফিরবে, সেই আশায় আমরা বুক বেঁধে আছি।’