'লিগটা কি হবে?'

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী। ফাইল ছবি
>ক্রিকেটের বিপিএল শুরু হয়েছে ৫ জানুয়ারি। এখনো দর্শক সমাগম না হলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে এ টুর্নামেন্ট। এই বিপিএলের জমকালো আয়োজন হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে আরেক বিপিএলের। বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে ফুটবলের প্রিমিয়ার লিগ। ‘এই শুরু হলো’ বলে বল আর মাঠে গড়ায় না

বসুন্ধরা কিংস ক্লাবে পা রাখতেই জাতীয় দলের তরুণ এক ফুটবলার এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ভাই, লিগটা কি হবে?’

তরুণ ফুটবলারটির কণ্ঠে স্পষ্ট হতাশা। সবার মনেই গেড়ে বসেছে এ সন্দেহ, লিগটা হবে তো! সন্দেহ হবে নাই-বা কেন? বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ। ‘এই শুরু হলো’ বলে বল আর মাঠে গড়ায় না। খেলা পেছানোর রেকর্ড কেউ টুকে রাখলে হয়তো অনেক আগেই রেকর্ড গড়ে বসত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।

চলতি মৌসুমেই কতবার লিগ পিছিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এভাবে পেছাতে পেছাতে কোন মৌসুমের লিগ কোন বছরে শুরু হয়, তা আর বোঝা যায় না। ছোট একটা তথ্য দিলেই স্পষ্ট হবে তা। গত প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচটি হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৩ জানুয়ারি। অর্থাৎ এক লিগ শেষ হওয়ার পর নতুন লিগ শুরু হওয়ার আগেই এক বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব ফুটবলে মোটামুটি উন্নতি করার ইচ্ছা আছে এমন কোনো দেশে এ বিরতি তিন মাসের বেশি নয়।

এ মৌসুমে প্রথমে ক্লাবগুলোকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষেই শুরু হবে মৌসুম। এবং এরপরই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু হয়ে যাবে লিগ। পরবর্তীতে লিগ শুরু হওয়ার কথা ছিল ৩০ নভেম্বর। খেলা পেছানোর জন্য এমনিতেই নাম আছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের। রোদ, বৃষ্টি, বয়স ভিত্তিক পর্যায়ের খেলা—নানা কারণেই খেলা পিছিয়ে দেওয়ার নজির আছে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটির। জাতীয় নির্বাচনের মতো বড় উপলক্ষ পেয়ে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে লিগ। এটি নিয়ে আসা হয় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। লিগ শুরু হয়নি। কারণ ১৮ জানুয়ারি লিগ শুরুর নতুন তারিখ দিয়ে ক্লাবগুলোর কাছে কদিন আগে সূচি পাঠিয়েছে বাফুফে। এখন আবার নতুন সুর। খেলা পেছানো হবে আরেকবার।

বাফুফের লিগ কমিটির সভাপতি সাংসদ আবদুস সালাম মুর্শেদী দিলেন অন্তত আরও সাত দিন লিগ পেছানোর খবর। এখনো নাকি মাঠের কাজ হয়নি। আবারও লিগ পিছিয়ে যাওয়ার পেছনে সালাম মুর্শেদীর ব্যাখ্যা, ‘জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে ঢাকার বাইরের মাঠগুলো পুরোপুরি ঠিক করা যায়নি। এটা করতে সপ্তাহখানেক লাগবে। তাই এক সপ্তাহ পিছিয়ে এ মাসেই লিগ শুরুর চিন্তা করছি। এ বিষয়ে সভা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

এভাবে পেছাতে পেছাতে কোন মৌসুমের লিগ কোন বছরে যায়, তা হয়তো নিজেরাও জানে না বাফুফে কর্তারা। আর এতেই আবার বর্ষা মৌসুমের দিকে চলে যাচ্ছে লিগ। এমনিতেই খসড়া সূচি অনুযায়ী এটা চলবে সাত মাস ধরে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ১৮ জানুয়ারি থেকে প্রিমিয়ার লিগ শুরুর যে কথা বলেছিলেন সে সূচি অনুযায়ী শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী ১০ আগস্ট। এখন খেলা যখন পেছাচ্ছে, খেলা শেষ হতে আরও দেরি। তাই এই সূচি দেখে ভীষণ হতাশ বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসান, ‘লিগ কমিটির সভায় বসে যেসব আলোচনা হয়েছিল তার প্রতিফলন নেই। সভায় ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছিল এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে ফুটবল মৌসুম শেষ হবে। বর্ষা এড়ানোর জন্যই এ রকম সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখছি খেলা শেষ হবে আগস্টে। ভরা বর্ষার মধ্যেই আমাদের খেলতে হবে। খেলার মান ভালো হবে না। অর্থের অপচয়। এভাবে ভালো ফুটবল আশা করা যায় না।’

তুমুল বর্ষার ফাঁদে পড়ে জেরবার হয়েছিল গত মৌসুমের লিগ। ফুটবল দেখতে বসে ওয়াটার পোলো দেখার দশা। প্রথমে কাদামাঠে জোর করে কয়েক দিন খেলানোর পর শেষ পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়েছিল লিগ। এবার সেই বিপদ এড়াতে বাফুফে উদ্যোগ নিয়েছিল মৌসুম সংস্কারের। সেই সংস্কারের হাওয়ায় ফুটবল মৌসুম শীতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে এএফসি কাপের একটি স্লটও হারিয়েছে বাংলাদেশ। আগে দুটি দল খেললেও এবার খেলবে একটি।

বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ ফেডারেশন কাপ শুরুর সংবাদ সম্মেলনে আশ্বস্ত করেছিলেন, ‘আমরা ফুটবল মৌসুমটা ঠিক করছি যেন বর্ষায় খেলতে না হয়। যেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের সঙ্গে আমরাও তাল মিলিয়ে চলতে পারি। আগামীবার থেকে এএফসি কাপে আবার দুটি দল খেলার সুযোগ পাবে।’ কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু। ক্লাবগুলোকে দেওয়া কথা রাখেনি বাফুফে। এপ্রিল-মের মধ্যে লিগ শেষ হওয়ার প্রতিশ্রুতি এখন নির্মম রসিকতা বলে মনে হচ্ছে।