ডিআরএসের সমাধান আছে মিরপুরেই

বিপিএলের এবারের আসরে বিতর্কের কেন্দ্রে ‘নখদন্তহীন’ ডিআরএস। ছবি: প্রথম আলো
বিপিএলের এবারের আসরে বিতর্কের কেন্দ্রে ‘নখদন্তহীন’ ডিআরএস। ছবি: প্রথম আলো
>যন্ত্রপাতি ইংল্যান্ড থেকে আসবে বলে নাকি বিপিএলের ডিআরএসে আল্ট্রা এজ প্রযুক্তি কাজে লাগাতে তিন দিন লাগবে। অথচ, সে রকম যন্ত্রপাতি আছে মিরপুরেই!

বিপিএলের চারটি ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পর সমালোচনায় তটস্থ বিসিবি। ¯স্নিকোমিটার নইলে আলট্রা এজ-এ দুটির একটি না থাকলে আবার ডিআরএস কিসের! চোটপাটটা গেল প্রোডাকশনের দায়িত্বে থাকা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রিয়াল ইমপ্যাক্টের ওপর দিয়ে। পরিস্থিতি দেখে তারাও চটজলদি বলে দিল, ইংল্যান্ড থেকে আলট্রা এজ আসছে। তিন দিনের মধ্যেই বিপিএলের ‘পঙ্গু’ ডিআরএস সুস্থ হয়ে উঠবে।

কিন্তু বিস্ময়কর হলো, ডিআরএসে আলট্রা এজ প্রযুক্তি সংযুক্ত করতে যেসব যন্ত্রপাতি ইংল্যান্ড থেকে আনা হচ্ছে, সে রকম যন্ত্রপাতি নাকি পড়ে আছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ব্রডকাস্ট রুমেই। সম্প্রচার-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সময় আনা আলট্রা এজের জন্য প্রয়োজনীয় বাড়তি ক্যামেরা, সার্ভার ও কম্পিউটার ইংল্যান্ডে ফেরত নেয়নি সেগুলোর মালিক হক-আই। কারণ তত দিনে বিপিএলের জন্য রিয়াল ইমপ্যাক্টও হক-আইয়ের সঙ্গে ডিআরএসের চুক্তি করে ফেলে। বিমানে বারবার টানাহেঁচড়া না করে হক-আই তাই বিপিএলের জন্য সেগুলো মিরপুরেই রেখে দেয়। সম্প্রচার-সংশ্লিষ্ট একজন জানিয়েছেন, ডিআরএসের জন্য হক-আইয়ের পাঠানো ছয়টি বাক্সের একটিতে রাখা আছে আলট্রা এজের জিনিস। সব বাক্সই ব্রডকাস্ট রুমে আছে। প্রয়োজন শুধু কিছু লোক ও যন্ত্রগুলো ইনস্টল করা।

মাঠের মাত্র কয়েক গজের মধ্যে বিতর্কিত আউটের সব সমাধান থেকে যাওয়ার পরও কেন সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না? বিপিএলের প্রথম দুই দিন ঢাকায়ই ছিলেন রিয়াল ইমপ্যাক্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব সাবারওয়াল। তাঁর তো অন্তত জানার কথা যে আলট্রা এজের জিনিসপত্র এখানে আছে! এ বিষয়ে জানতে বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসের মাধ্যমে কাল যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছে সাবারওয়ালের সঙ্গে। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। আর জালাল ইউনুসও নিশ্চিত নন যে, আসলেই যন্ত্রপাতি মিরপুরে আছে কি না।
আর থাকলেই-বা কী! রিয়াল ইমপ্যাক্টের সঙ্গে বিসিবির ডিআরএস চুক্তিতেই আলট্রা এজ প্রযুক্তি ব্যবহারের শর্ত নেই! জানা গেছে, ডিআরএসের জন্য রিয়াল ইমপ্যাক্ট অন্তত দুটি প্রস্তাব দিয়েছিল বিসিবিকে। একটি ছিল আলট্রা এজসহ ডিআরএস, যার জন্য প্রতিদিন খরচ পড়ত সাড়ে ৩ হাজার ডলার। আরেকটি আলট্রা এজ ছাড়া ডিআরএস, যার দৈনিক ভাড়া ২ হাজার ৫০০ ডলার। প্রস্তাব দুটি যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার যাঁদের ওপর ছিল, ডিআরএস সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণার অভাবে তাঁরা ভেবেছিলেন, আলট্রা মোশন প্রযুক্তি দিয়েই আলট্রা এজের কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে। তাহলে আর প্রতিদিন ১ হাজার ডলার বাড়তি খরচ করা কেন!

বিসিবি টাকার মায়া কেন করল, সেটিও প্রশ্ন। বিপিএলের টিভি স্বত্ব কিনে নেওয়া মাত্রা ইমপ্রেস মাত্রা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টুর্নামেন্টের প্রোডাকশন এবং সম্প্রচারের দায়িত্ব তাদেরই। তবে গত বিপিএলের প্রোডাকশন নিয়ে নানা অভিযোগ থাকায় বিসিবি এবার এই দায়িত্বটি নিজেরা নেয়। প্রোডাকশনের মান ঠিক রাখতে সর্বোচ্চসংখ্যক ক্যামেরা ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ভালো ধারাভাষ্যকার আনা নিশ্চিত করাই ছিল উদ্দেশ্য। তবে প্রোডাকশনের যাবতীয় খরচ বহন করতে হচ্ছে টিভি স্বত্বের মালিকদের। বিসিবি তাই পারত টাকার চিন্তা না করে বিপিএলের জন্য সেরা প্রস্তাবটিই বেছে নিতে। কিন্তু আসল জায়গা যেটি, খেলাকে বিতর্কমুক্ত রাখা, সেটি বাদ দিয়ে তারা গুরুত্ব দিয়েছে স্পাইডার ক্যাম, রোবট ক্যাম, জিংক বেলের মতো অলংকারের দিকে।
নানা রকম শুদ্ধি কার্যক্রমের পর গত মৌসুম থেকে বিপিএল মোটামুটি বিতর্কমুক্তভাবে হচ্ছে। এবার তো রিভিউ পদ্ধতিও চালু হয়েছে। কিন্তু ডিআরএস ব্যবহার নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত সব গুবলেট করে দিল।

বলের গতিপথ বুঝতে ডিআরএসে থাকতে হবে বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তি। এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তে সাহায্য করে এটি। আলট্রা মোশন প্রযুক্তির ব্যবহারে সহজ হয় ক্লোজ ক্যাচের সিদ্ধান্ত। আর অস্ট্রেলিয়ান¯স্নিকোমিটার প্রযুক্তি বা ইংল্যান্ডের আলট্রা এজ ব্যবহার হয় কট বিহাইন্ড ও ব্যাট-প্যাড হওয়া বলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। এই তিনটির যেকোনো একটি প্রযুক্তি না থাকলেই ডিআরএস হয়ে পড়ে পঙ্গু। এবার টেলিভিশন সম্প্রচারে সমস্যা দেখা যাচ্ছে আরও। ভুল গ্রাফিকস আর নিচু ভলিউম বিরক্তির উদ্রেক করছে দর্শকদের। আর দেশি-বিদেশি সব ধারাভাষ্যকারই কানে লাগার মতো ভুল করেছেন প্রথম দুই দিন। টেলিভিশনের মাধ্যমে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে সরাসরি দেখা যাচ্ছে বিপিএলের ম্যাচ। ইউটিউব চ্যানেল র্যাবিটহোলবিডির মাধ্যমে তো তা ছড়িয়ে পড়ছে আরও বেশি।

পঙ্গু ডিআরএস আর ভুল ধারাভাষ্য থেকে বিপিএল সম্পর্কে কী বার্তা পাচ্ছে বিশ্ব?