চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে পারবে না ম্যানচেস্টার সিটি?

এমন হাসি আর নাও থাকতে পারে সিটির! ছবি: এএফপি
এমন হাসি আর নাও থাকতে পারে সিটির! ছবি: এএফপি
>ফুটবল লিকসের অভিযোগ প্রমাণিত হলে, ইউরোপের সব প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হবে ম্যানচেস্টার সিটিকে। এমনটাই জানিয়েছেন উয়েফার ক্লাবগুলোর আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান ও তদন্ত কমিশনের প্রধান ইভিস লেতের্মে।

বেশ কিছুদিন আগে ফুটবল বিশ্বে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল ফুটবল লিকসের প্রতিবেদনে। সেখানে দাবি করা হয়েছিল, মালিক ও পৃষ্ঠপোষকদের টাকা ইচ্ছা মতো খরচ করে ম্যানচেস্টার সিটি মাঠে সাফল্য পাচ্ছে। এই ‘ইচ্ছা মতো’ খরচ করাটা যে উয়েফার ‘ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’ বিরোধী, ফুটবল লিকস জানাতে চেয়েছে, সেটিই।

অভিযোগটি নিয়ে তদন্তও শুরু করে ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা—উয়েফা। সে তদন্ত কমিশনের প্রধান ছিলেন ইভিস লেতের্মে। যিনি উয়েফার ক্লাব গুলির আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান। তদন্ত করে সেই লেতের্মেই জানিয়েছেন, অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে ম্যানচেস্টার সিটি উয়েফা আয়োজিত প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশ নেওয়ার অধিকার হারাবে।
ফুটবলে টাকার কুমিরদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বেশ কয়েক বছর আগে একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন উয়েফার সাবেক সভাপতি মিশেল প্লাতিনি। চালু করেছিলেন ‘ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’ নামের আইন। যে আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় একটি ক্লাব কেবল মাত্র সে পরিমাণ অর্থই ব্যয় করতে পারবে, যে অর্থ ক্লাবটি আয় করেছে। কিন্তু এই নিয়মকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি শীর্ষ ক্লাব। ফুটবল লিকসের দাবি অনুযায়ী, ম্যানচেস্টার সিটিও করে যাচ্ছে একই জিনিস।
ফুটবল লিকস অনুসন্ধানের পর জানিয়েছিল, ম্যানচেস্টার সিটি তাদের পৃষ্ঠপোষক ও মালিকের অর্থ ইচ্ছামতো ব্যয় করে। মালিক খালদুন আল মোবারক ও শেখ মনসুর আল নাহিয়ান গত সাত বছরে ক্লাবটিতে ‘অবৈধভাবে’ ৭.২ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছেন। এই অর্থের সিংহভাগই নাকি অবৈধভাবে অর্জিত। একটা অংশ এসেছে পৃষ্ঠপোষকদের চুক্তি ও নিজেদের সম্পত্তি থেকে এসেছে। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সিটি একাই লোকসান করেছে ২৩৩ মিলিয়ন ইউরোর মতো। যা উয়েফার ‘ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’র সম্পূর্ণ বিরোধী। নিয়ম অনুযায়ী সিটির বড় শাস্তি হওয়ার কথা, বিরাট অঙ্কের অর্থ জরিমানা হওয়ার কথায়। কেবল তা-ই নয়, তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকেও নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। এ কথাটাই যেন নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন লেতের্মে, ‘প্রতিবেদনে যা প্রকাশিত হয়েছে তা যদি আসলেই সত্য হয়ে থাকে, তাহলে সিটির জন্য অনেক বড় শাস্তি অপেক্ষা করছে। উয়েফার ক্লাব প্রতিযোগিতাগুলো থেকে তাদের নিষিদ্ধ করা হতে পারে, যা সবচেয়ে বড় শাস্তি।’
২০০৮ সালে খালদুন আল মোবারক ম্যানচেস্টার সিটি কিনে নেন। এরপর তিনি ক্লাবটার চেহারা পালটে দেন। গত দশ বছরে ধনকুবের মালিকের অর্থের জোরে সিটিতে এসেছেন সার্জিও আগুয়েরো, ইয়ায়া তোরে, কেভিন ডি ব্রুইনা, জন স্টোনস, রিয়াদ মাহরেজ, এডারসন মোরায়েস, লিরয় সানে, রহিম স্টার্লিং, ইমানুয়েল আদেবায়োর, সামির নাসরির মতো প্রচুর তারকা। এই সময়ে তারা তিনটি লিগ শিরোপাসহ বেশ অনেকগুলি শিরোপা জিতেছে। বিভিন্ন সময়ে দলে এসেছেন পেপ গার্দিওলা, ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনি, রবার্তো মানচিনির মতো ম্যানেজার।
সব মিলিয়ে মাঠে সময়টা যখন দুর্দান্ত সিটির, ঠিক তখনই এলে ফুটবল লিকসের প্রতিবেদন। এখন দেখার অপেক্ষা সিটি এই অভিযোগ কীভাবে মোকাবিলা করে।