সিলেটের অলকই বাঁচালেন সিলেটের মান

দারুণ বল করেছেন মেহেদী। উইকেট নেওয়ার আনন্দে শূন্যেও উড়াল দিয়েছেন অধিনায়কের সঙ্গে। ছবি: প্রথম আলো
দারুণ বল করেছেন মেহেদী। উইকেট নেওয়ার আনন্দে শূন্যেও উড়াল দিয়েছেন অধিনায়কের সঙ্গে। ছবি: প্রথম আলো
>বিপিএলে আজ দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৮ রানে অলআউট সিলেট সিক্সার্স

জানা কথাই, দিনের শেষ ম্যাচে গ্যালারি অত ফাঁকা পড়ে থাকবে না। ঘটলও ঠিক তাই। খুলনা টাইটানস-রাজশাহী কিংসের ম্যাচ দেখতে দর্শকই এসেছিলেন মেরেকেটে হাজার পাঁচেক। কিন্তু সিলেট সিক্সার্স-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ম্যাচে দর্শক উপস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনকই ছিল। বিপিএলের তাঁবু খাটানো হয়েছে সিলেটে আর প্রথম দিনে ম্যাচটাও সিলেট সিক্সার্সের—সেখানকার ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহটা তাই বেশিই থাকার কথা। কিন্তু হায়! সিলেটের ইনিংসে সাত ওভার যেতে না যেতেই আসন ছাড়ছিলেন দলটির অনেক সমর্থক!

ব্যাটিংয়ে প্রিয় দলের চার-ছক্কার উৎসব দেখতে এসেছিলেন সিলেটের সমর্থকরা। কিন্তু তাঁরা কি দেখলেন! ছন্নছাড়া ব্যাটিং? তা বলাই যায়। দলটির সমর্থকদের এই ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ হিসেবে যোগ হয় কুমিল্লার বোলারদের উল্লাস। কাঁহাতক সহ্য করা যায়! তাই প্রিয় দলের ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই অনেকে বাড়ির পথ ধরেছেন। বাড়িতে বসে হারটা না হয় টিভিতেই দেখা যাবে!

সিলেটের ব্যাটিং না দেখে থাকলে ভাবতে পারেন, এ আবার কেমন কথা! ইনিংস এখনো একটি বাকি, তার আগেই হারের প্রশ্ন উঠছে কীভাবে? ক্রিকেট তো গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। হ্যাঁ তো ঠিক-ই, তবে সিলেট যে ব্যাটিং করেছে তাতে কুমিল্লার ব্যাটিংয়ের আগেই হারের কথাটা মোটামুটি বলাই যায়। ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের পরিসংখ্যান দেখুন—২ ওভারে সিলেট ৫ রান তুলতে হারিয়েছে ৩ উইকেট। সেটিও আবার এক ওভারে! আর ৭ ওভার শেষে স্কোর ৬ উইকেটে ১৭! এরপর আর ম্যাচের কিছু থাকে?

যেটুকু থাকে তা আসলে লজ্জা পাওয়ার শঙ্কা। বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার ভীতি। শেষ পর্যন্ত অলক কাপালির ব্যাটে এই ভীতি কাটিয়ে মান বাঁচাতে পেরেছে দলটি। কাপালির ৩১ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে সিলেট শেষ পর্যন্ত ৬৮ রান তুলতে পেরেছে। এবার বিপিএলে এখনো পর্যন্ত এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় রান। এর আগে ৬৩ রানে অলআউট হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।

স্বাগতিক সমর্থকরা গ্যালারিতে ধাতস্থ হয়ে ওঠার আগেই পথ হারিয়েছে সিলেট। প্রথম ওভার মেডেন নিয়ে ইঙ্গিতটা দিয়েছিলেন কুমিল্লার পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন। পরের ওভারে মেহেদী হাসান এসে স্রেফ পথ হারানোর বন্দোবস্ত করেছেন! মন্থর উইকেটে শুরু থেকেই বেশ ভালো বাঁক পেয়েছেন কুমিল্লার এই স্পিনার। সিলেটের টপ অর্ডারে প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে তিনজনকে তিনি ফেরত পাঠিয়েছেন নিজের প্রথম পাঁচ ডেলিভারিতে!

ডেভিড ওয়ার্নার-আন্দ্রে ফ্লেচারের মতো তারকা ওপেনিং জুটি মেহেদীর স্পিন বুঝতেই পারেননি। পরপর দুই বলে ওয়ার্নার ও আফিফ হোসেনকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিলেন মেহেদী। নিকোলাস পুরান এসে মেহেদীর হ্যাটট্রিক ঠেকালেও নিজে থাকতে পারেননি। সাইফউদ্দীনের শিকার হয়ে পুরান (০) ফিরেছেন পরের ওভারেই। মেহেদী নিজের প্রথম ওভারে ৩ উইকেট পেলেও তাঁকে কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস কেন টানা ব্যবহার করলেন না সেটি একটি প্রশ্ন। দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ের পর মেহেদীর হাতে তিনি বল তুলে দিয়েছেন অষ্টম ওভারে!

ওয়াহাব রিয়াজ দলে যোগ দেওয়ায় ইমরুল হয়তো নতুন বলে এই পাকিস্তানি পেসারকে দেখতে চেয়েছিলেন। সে যাই হোক, প্রথম ৬ ওভারেই সিলেট পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। ১৬ রানে ৫ উইকেট! কচ্ছপ-গতিতে রান ওঠার ঠিক বিপরীত গতিতে পড়েছে উইকেট। সিলেটের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের স্কোর দেখুন—ওয়ার্নার (০), ফ্লেচার (৪), লিটন (৬), আফিফ (০) ও পুরান (০)। সাব্বির রহমানও (৬) বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি।

৮ ওভার শেষে সিলেটের স্কোর যখন ৭ উইকেটে ২২ তখন অনেকেই হয়তো সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডটির ভেঙে পড়া দেখতে পেয়েছিলেন। দুই বছর আগের বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খুলনার ৪৪ রানে অলআউট হওয়ার সেই রেকর্ডটি সিলেট এড়িয়ে যেতে পেরেছে শুধু কাপালির কল্যাণে। পঞ্চম ওভারে দলের স্কোর ৫ উইকেটে ১৫ থাকতে উইকেটে এসেছিলেন কাপালি। কেউ তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি। ব্যাটিংয়ে লেজের দিকে সোহেল তানভীর (৫), তাসকিন (৪) ও নাবিল সামাদরাও (০) ফিরেছেন মুঠোফোনের নম্বর অর্জন করে। কাপালি ছাড়া সিলেটের আর কোনো ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি! দলের প্রায় অর্ধেক রানই অপরাজিত থাকা কাপালির।

কুমিল্লার হয়ে ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান। ১৫ রানে ৩ উইকেট ওয়াহাব রিয়াজের।