তাদের প্রশংসা করতেই হয়!

ইংলিশ গোলরক্ষক কোচ স্কট বোয়েনের সঙ্গে চুক্তি করেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। সংগৃহীত ছবি
ইংলিশ গোলরক্ষক কোচ স্কট বোয়েনের সঙ্গে চুক্তি করেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। সংগৃহীত ছবি
সদিচ্ছা থাকলেই যে সম্ভব, তার একটা বড় উদাহরণ সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ও বসুন্ধরা কিংস। লীগ শেষে দল দুটির নামের পাশে যা-ই থাকুক না কেন, সদ্য প্রিমিয়ারে ওঠা দলটি দেশের গতানুগতিক ক্লেশে ক্লাব-কালচারে না ঢুকে আধুনিক ফুটবল-বিপ্লবে নাম লিখিয়েছে, নৈতিকভাবে এটাই তো বড় জয়।


পেশাদার ছোট একটা শব্দ। কিন্তু কথাটি যে কত কঠিন, তা এক দশক ধরে দেখে আসছে বাংলাদেশের ফুটবল। খাতা-কলমে পেশাদার যুগে পা রেখে একটার পর একটা মৌসুম পার হয়ে যায়, তবু পেশাদারির ‘প’ও দেশের ফুটবলের গায়ে লাগে না। ইচ্ছার অভাবেই যে হয়ে ওঠেনি, তা এখন বোঝা যাচ্ছে স্পষ্টত।

এই অচলায়তনে গত মৌসুম থেকে কিছুটা বদল এনেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। আর এবার নতুন এসে তাদের ভালোর সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। ঢাকার ফুটবলের তথা কথিত রথী-মহারথী ক্লাবগুলোর চোখে তারা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, পেশাদার শব্দের আসল অর্থটা কী বা সংজ্ঞাটা কেমন হওয়া উচিত। ফুটবল দুনিয়ায় নতুনে নাম লিখিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ারে উত্তীর্ণ হয়ে এমন কিছু ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তারা, যা এত দিন ভাবতেও পারেনি দেশের ফুটবলের অন্য ক্লাবগুলো।

গত মৌসুমে প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদাভাবে মোট ছয়জন ইউরোপিয়ান কোচের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কোচিং স্টাফ গড়েছিল সাইফ। সংখ্যাটা এবার কমেছে বটে, তবুও বর্তমানে আছে চারজন বিদেশির সমন্বয়ে বড় কোচিং স্টাফ। গতকাল দলের সঙ্গে যোগ হয়েছেন ইংলিশ গোলরক্ষক কোচ স্কট বোয়েনকে। যুক্ত হতে যাচ্ছেন একজন বিদেশি ফিজিও। ভাবা যায়!

বসুন্ধরা কিংসের নিজস্ব ‘কিটস শপ’। সংগৃহীত ছবি
বসুন্ধরা কিংসের নিজস্ব ‘কিটস শপ’। সংগৃহীত ছবি

দলটির প্রধান কোচ আয়ারল্যান্ডের জোনাথন ম্যাকিস্ট্রি সিয়েরা লিওন ও উগান্ডা জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ। তাঁর অধীনে ২০১৪ সালের আগস্টে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো (৫০তম) অবস্থায় ওঠে একসময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিয়েরা লিওন। সাইফে তাঁর সহকারী হিসেবে কাজ করছেন তানজানিয়ার ড্যানিশ কিতাম্বি, যাঁকে তানজানিয়ায় বলা হয় ফুটবল জাদুকর। শুধু ভালো কোচিং স্টাফই নিয়োগ দেয়নি তারা, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের মান বিচার করার জন্য ইংল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা ‘জিপিএস’।

হোম ভেন্যু হিসেবে দলটি বেছে নিয়েছে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামকে। মাঠ থেকে শুরু করে ড্রেসিং রুমেও তারা দিয়েছে বাইরের দেশগুলোর মতো আধুনিকতার ছোঁয়া। ক্লাবটির সবচেয়ে বড় অবদান বয়সভিত্তিক ফুটবল দল গঠন করা। বছরব্যাপী দুটি বয়সভিত্তিক দলকে অনুশীলন করিয়ে থাকে। বর্তমানে অনূর্ধ্ব-১৮ দলটি আছে ভারত সফরে। বছরে ভারতে গিয়ে দুটি টুর্নামেন্ট খেলে কিশোররা। দলটি ভবিষ্যতে থাইল্যান্ডে টুর্নামেন্ট খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সাইফের ভালোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নেমেছে বসুন্ধরা। কোস্টারিকার জার্সিতে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা দানিয়েল কলিন্দ্রেন্সকে দলে ভিড়িয়ে প্রথমেই দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে তারা। দলে দুইজন স্প্যানিশ কোচসহ বড় কোচিং স্টাফ। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে মালদ্বীপ চ্যাম্পিয়ন ক্লাব নিউ রেডিয়ান্টকে। দলটির বিপক্ষে ম্যাচ খেলে নিজেদের হোম ভেন্যু হিসেবে পরিচিত করে দিয়েছে নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামকে। ইউরোপিয়ান ঘরানা আনতে কোনো কিছুরই যেন কমতি রাখছেন না ক্লাবের কর্তারা। পেশাদার ফুটবল জগতে যা হয় আর কি।

সদিচ্ছা থাকলেই যে সম্ভব, তার এক বড় উদাহরণ করপোরেট কোম্পানির ক্লাব দুটি। দেশের পেশাদার ফুটবলের বিজ্ঞাপনও তো তারা। লীগ শেষে দল দুটির নামের পাশে যা-ই থাকুক না কেন, সদ্য প্রিমিয়ারে ওঠা দলটি দেশের গতানুগতিক ক্লেশে ক্লাব-কালচারে না ঢুকে আধুনিক ফুটবল-বিপ্লবে নাম লিখিয়েছে, নৈতিকভাবে এটাই তো বড় জয়।