নিখোঁজ আর্জেন্টাইন ফুটবলারের ট্রান্সফার ফি-র কী হবে?

এমিলিয়ানো সালা। ছবি: টুইটার
এমিলিয়ানো সালা। ছবি: টুইটার

ট্রান্সফার ফি-র ক্লাব রেকর্ড গড়ে তাঁকে কিনেছিল কার্ডিফ সিটি। টাকার অঙ্ক নেহাত কম না—১৭ মিলিয়ন ইউরো। এই দামে নঁতে থেকে তাঁকে সই করিয়েছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। কিন্তু কপাল খারাপ, সই করানোর দুই দিন পরই এমিলিয়ানো সালা নিখোঁজ। বিমানে করে ফ্রান্স থেকে রওনা হয়ে ইংলিশ চ্যানেলে নিখোঁজ হন আর্জেন্টাইন এই ফুটবলার। বিমান দুর্ঘটনার পর সাত দিন হয়ে গেল, সালা কিংবা পাইলট, এমনকি বিমানের ধংস্বাবশেষেরও হদিস মেলেনি। গত কয়েক দিন ধরেই তাই গুঞ্জন চলছে, শেষ পর্যন্ত সালার খোঁজ যদি না পাওয়া যায় তাহলে এই ট্রান্সফার ফি-র কি হবে? কার্ডিফ কি টাকাটা দেবে?

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘টেলিগ্রাফ’ জানিয়েছে, কার্ডিফ সিটি অন্য কিছুই ভাবছে। ট্রান্সফার ফি পরিশোধের গোটা প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রেখেছে ক্লাবটি। আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে তাঁরা। ফ্রান্স থেকে সালার বিমান পথে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসার গোটা প্রক্রিয়ায় কার্ডিফের কর্মকর্তারা সন্তুষ্ট নন। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড সালা ছিলেন তাঁদের রেকর্ড-সাইনিং। এমন খেলোয়াড় ইংলিশ চ্যানেলের মতো ঝোড়ো জলপথের ওপর দিয়ে উড়ে আসবেন, সেটিও আবার ১৯৮৪ সালে তৈরি করা মাত্র এক ইঞ্জিনের বিমানে! এখানেই শেষ নয়। সালাকে নিয়ে যিনি বিমান উড়িয়েছেন সেই ডেভিড ইবোটসন কোনো পেশাদার পাইলট হওয়া দূরের কথা পাইলট-ই নন! তিনি আসলে ‘খণ্ডকালীন’ গ্যাস ইঞ্জিনিয়ার। সালার সঙ্গে ইবোনটসনেরও কোনো হদিস পাননি উদ্ধারকর্মীরা।

কার্ডিফ সিটি স্টেডিয়ামে সালার জন্য শোক পালন করছে ভক্তরা। সেখানে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি সালার বোন রোমিনা। ছবি: টুইটার
কার্ডিফ সিটি স্টেডিয়ামে সালার জন্য শোক পালন করছে ভক্তরা। সেখানে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি সালার বোন রোমিনা। ছবি: টুইটার

মোট কথা, সালার ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডে আসার গোটা প্রক্রিয়ায় কার্ডিফ মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ক্লাবটি কোনোভাবেই জড়িত ছিল না। তাই আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন কার্ডিফের কর্মকর্তারা। ট্রান্সফার ফি-র প্রথম কিস্তি হিসেবে ৬ মিলিয়ন ইউরো নঁতেকে দেওয়ার কথা ছিল কার্ডিফের। কিন্তু ব্যাপারটি স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এই দূর্ঘটনা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি কিংবা কোনো কিছু নিশ্চিতের আগ পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি থামিয়ে রাখা হবে। ‘টেলিগ্রাফ’ জানিয়েছে, কার্ডিফ হিসেব কষে দেখেছে চুক্তিপত্র অনুযায়ী সালার এই দূর্ঘটনায় ইন্স্যুরেন্স ক্ষতিপূরণের পরও প্রায় ১৪ মিলিয়ন পাউন্ড লোকসানের ঝুঁকি রয়েছে।

এদিকে গত বৃহষ্পতিবারই উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তিনটি বিমান, পাঁচটি হেলিকপ্টার, দুটি লাইফবোট এবং আরও কয়েকটি জলযান নিয়ে চ্যানেলের নিকটবর্তী এলাকায় ৮০ ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি চালিয়েও তাঁরা কিছু পায়নি। গার্নসে পোতাশ্রয়ের ক্যাপ্টেন ডেভিড বার্কার জানান, উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব ‘কঠিন’ ছিল। তাঁদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’ এবং কর্তৃপক্ষ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মনে করছে এর চেয়ে বেশি আর কিছু করা যেত না। যদিও এরপর ব্যক্তি উদ্যোগে তহবিল সংগ্রহ করে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আর এই তহবিলে ৩০ হাজার ইউরো দান করেছেন পিএসজি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাঁর ক্লাব সতীর্থ আদ্রিয়ান রাবিওত দিয়েছেন ২৫ হাজার ইউরো এবং মার্শেইয়ের দিমিত্রি পায়েত ১০ হাজার ইউরো দান করেছেন।

নিখোঁজ এই ফুটবলারের ট্রান্সফার ফি নিয়ে জটিলতার এখানেই শেষ নয়। সালার এই ট্রান্সফারে তৃতীয় পক্ষও রয়েছে। ফরাসি ক্লাব বোর্দো। সালার সাবেক এই ক্লাব নাকি খেলোয়াড়টির ট্রান্সফার স্বত্বের ৫০ শতাংশ মালিক। যদিও বোর্দোর পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভীষণ দুঃখের এই সময়ে ট্রান্সফারের কোনো অর্থ তাঁরা দাবি করেনি।