কোচ বলেছিলেন 'তুমি সত্যিকারের ফাস্ট বোলার হবা'

ইবাদত হোসেন নিউজিল্যান্ড সফরের টেস্ট দলে জায়গা করে নিয়েছেন। ছবি: প্রথম আলো
ইবাদত হোসেন নিউজিল্যান্ড সফরের টেস্ট দলে জায়গা করে নিয়েছেন। ছবি: প্রথম আলো
>

তাসকিনের চোট নিউজিল্যান্ড সিরিজের টেস্ট দলে জায়গা করে দিয়েছে ইবাদতকে। আন্তর্জাতিক অভিষেকের অপেক্ষায় এই পেসার।

শেক্সপিয়ার রোড থেকে মেরিন প্যারেডে উঠে হোটেলের দিকে যাচ্ছিলেন ইবাদত হোসেন। হাঁটাপথে মিনিট পাঁচেকের দূরত্ব। এর মধ্যেই যেটুকু কথা, তাতে রোমাঞ্চটা ধরতে কষ্ট হয়নি। মৌলভীবাজারের বড়লেখা থেকে উঠে এসে জাতীয় দলের সঙ্গে নেপিয়ার ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ঘুরছেন-ফিরছেন-থাকছেন। ওই জীবন যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না ইবাদতের।

এত রোমাঞ্চের মধ্যেও অস্বস্তির একটা চোরকাঁটা ছিল। জাতীয় দলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের এক শহর থেকে আরেক শহরে ঘুরছেন, অথচ খেলছেন তো না! ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০১৭-এর জানুয়ারিতে গড়িয়েছিল সেই নিউজিল্যান্ড সফর। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ইচ্ছায় বাংলাদেশ দল সফরটা করে ২২-২৩ জন খেলোয়াড় নিয়ে। ইবাদত ছিলেন তাঁদেরই একজন, কিন্তু তাঁকে রাখা হয়েছিল ‘শিক্ষানবিশ’ মর্যাদায়। মানে দলের একজন হয়েও আসলে কেউ নন। হাঁটতে হাঁটতেই ইবাদতের বুক থেকে একপর্যায়ে বের হয়ে আসে গোপন দীর্ঘশ্বাস, ‘খেলতে পারলে আরও ভালো লাগত...।’

সেই দীর্ঘশ্বাস এবার হয়তো দূর হবে। আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের টেস্ট দলে ১৬তম সদস্য হিসেবে ইবাদতকে নেওয়ার চিন্তা আগে থেকেই ছিল নির্বাচকদের। বিপিএলে পাওয়া তাসকিন আহমেদের চোট সেই চিন্তার দ্রুত প্রতিফলন ঘটাল। কাল তাসকিনের পরিবর্ত হিসেবে ওয়ানডে দলে ডাক পেলেন শফিউল ইসলাম, টেস্ট দলে ইবাদত হোসেন।

দুপুরে বড়লেখায় বসে খবরটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি তাঁর। এ রকম কোনো গুঞ্জনও নাকি ইবাদতের কানে আসেনি যে তিনি জাতীয় দলে আসছেন। মুঠোফোনে ভেসে আসা কণ্ঠে দুই বছর আগের সেই রোমাঞ্চ, ‘সেবার শিক্ষানবিশ হিসেবে দলের সঙ্গে ছিলাম, এবার আমি স্কোয়াডে আছি। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আনন্দ বলে বোঝানো কঠিন। তবে ভালো হয়েছে নিউজিল্যান্ড সফরেই সুযোগটা পেয়েছি। আগেরবারের অভিজ্ঞতা আমাকে সাহায্য করবে।’

ইবাদতের পরিবারে ক্রিকেট সংস্কৃতি তেমন নেই। বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) থেকে অবসর নেওয়া বাবা, মা আর পাঁচ ভাই, এক বোনের সংসারে ক্রিকেটকে ভালোবেসেছেন শুধু তিনি। মৌলভীবাজারে স্থানীয় ক্রিকেট দিয়ে শুরু। তবে জীবন বদলাতে থাকে ২০১৬ সালে রবির পৃষ্ঠপোষকতায় বিসিবির পেসার হান্টে অংশ নিয়ে। গতির ঝড় তাঁকে নিয়ে আসে হাইপারফরম্যান্স ইউনিটে। পেয়ে যান চম্পকা রমানায়েকের মতো একজন পেস বোলিং গুরু। তিন বছর ধরে এইচপিতে তাঁকে দেখে ইবাদত সম্পর্কে শ্রীলঙ্কান কোচের মূল্যায়ন, ‘ছেলেটার মধ্যে টেস্ট বোলারের আগুন আছে।’

ইবাদতেরও যেন কৃতজ্ঞতার শেষ নেই চম্পকার প্রতি, ‘লাল বলের বোলিংয়ে তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। সর্বশেষ বিসিএলের আগে কোচ সাহস দিয়ে বলেছিলেন, “তুমি সত্যিকারে টেস্ট বোলার হবা।” সেই অনুপ্রেরণায়ই কিনা উত্তরাঞ্চলের হয়ে বিসিএলে এবার পাঁচ ম্যাচে পেলেন ২১ উইকেট। এর মধ্যে বগুড়ায় মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে এক ম্যাচেই ১০টি।
ওই ম্যাচ শেষে মুঠোফোনে চম্পকাকে ধন্যবাদ জানান ইবাদত। নিজের মধ্যেও বিশ্বাস আসতে শুরু করে যে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের বোলিংয়ের সূত্রটা তিনি ধরতে পারছেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল আমি মানসিক, শারীরিক দুই ভাবেই টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত।’

ব্রেট লি তাঁর আদর্শ, বল হাতে গতির ঝড় তোলা নেশা। তবে খেলাটা যখন পেশাও, গতির সঙ্গে আরও কিছুও তো দরকার! ইবাদতের বোলিংয়ে এখন সে রকম অলংকারও আছে কিছু, ‘চম্পকার সঙ্গে কাজ করে আমার অ্যাকুরেসি অনেক বেড়েছে। এখন ধারাবাহিকভাবে এক জায়গায় বল করে যেতে পারি। তবে গতি আরও বাড়াতে চাই। এবার বিপিএলেও কিন্তু আমি ১৪৮ কিমি গতি তুলেছি।’
বাংলাদেশের মরা পিচেই যদি এটা পারেন, নিউজিল্যান্ডে নিজের অভিষেকটা কেন সাফল্যে রাঙাতে পারবেন না ইবাদত?