গর্বের সেই জয়ে 'সন্দেহ' দুঃখ দেয় আমিনুলকে

১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সে জয় এখনো গর্বের বিষয় আমিনুল ইসলামের কাছে। ফাইল ছবি
১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সে জয় এখনো গর্বের বিষয় আমিনুল ইসলামের কাছে। ফাইল ছবি
১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়কে ‘সন্দেহজনক’ বলেছেন পিসিবির সাবেক সভাপতি খালিদ মেহমুদ। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম অবশ্য দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলেছেন, ম্যাচে খারাপ কিছু তাঁর চোখে পড়েনি। বরং ওই জয় নিয়ে তিনি গর্ব বোধ করেন


ঐতিহাসিক এক জয়। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম বড় জয়ের মুহূর্ত। ১৯৯৯ সালের ৩১ মে ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনে সেবারের বিশ্বকাপ টপ ফেবারিট পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখনো সেই ম্যাচকে ধরা হয় সবচেয়ে বড় অঘটন হিসেবে। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে কালি মাখতে চাইছেন পাকিস্তানের সাবেক বোর্ড সভাপতি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের সেই হারকে ‘সন্দেহজনক’ বলেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সাবেক সভাপতি খালিদ মেহমুদ। তবে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বলেছেন, সে জয়ে সব সময়ই গর্ববোধ করেন তিনি। সে ম্যাচের ফল নিয়ে সন্দেহের কোনো কারণ নেই।

ক্রীড়া সাংবাদিক রানা আব্বাসের লেখা ‘বাংলাদেশের অধিনায়ক’ বইয়ে ঐতিহাসিক সেই ম্যাচ নিয়ে কথা বলেছেন দেশের এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। বুলবুল দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলেছেন, অধিনায়ক থাকায় ম্যাচের প্রতিটি বলের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। এই ম্যাচের ফল নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সে জয়ের পর চমকে গিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্ব। সে জয়ের দুই দশক পূর্তির ঠিক আগে দিয়েই বিতর্কের ধোঁয়া তুলেছেন খালিদ মেহমুদ। পাকিস্তানের টিভি চ্যানেল জিও নিউজের অনুষ্ঠান ‘স্কোর’-এ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান স্কোয়াডের খেলোয়াড়দের গায়ে ‘সন্দেহজনক’ ট্যাগ লাগিয়েছেন মেহমুদ। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তানের হারের পর পিসিবি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন মেহমুদ।

মেহমুদের দাবি, ওয়াসিম আকরামের অধীনে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের হার ‘সন্দেহজনক’। তাঁর ধারণা পাকিস্তান দলের যে স্কোয়াড তাতে এমন হার প্রশ্ন তুলবেই। এই অঘটন তাঁকে চিন্তিত ও রাগান্বিত করেছিল। বড় বড় সব তারকা থাকার পরও পাকিস্তানের অমন হারের সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত ছিল বলেই মনে করেন মেহমুদ। কিন্তু আমিনুল মেহমুদের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে। ‘বাংলাদেশের অধিনায়ক’ বইয়ে নিজের অধিনায়কত্বের গর্বিত এই অধ্যায় নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রশ্ন করা হয়েছিল এই জয়ের ওপর প্রথম থেকেই কলঙ্কের কালি ছড়ানোর অপচেষ্টা কতটা আহত করেছিল তাঁকে!

প্রসঙ্গত, এখানে বলে রাখা ভালো বাংলাদেশের সেই জয়ের পর ক্রিকেট দুনিয়ায় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে সে জয়ের পর যতটা না প্রশ্ন উঠেছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রশংসিত হয়েছিল বাংলাদেশ। বড় বড় ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা বলেছিলেন নির্দিষ্ট দিনে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ভালো খেলেই বাংলাদেশ জিতেছে। নিরানব্বইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে সে জয়ের পরই প্রশস্ত হয়েছিল বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার পথ। বাংলাদেশের সেই জয় এখনো দেশ-বিদেশের অনেকের কাছে ঐতিহাসিক, বড় দলকে নিয়মিত হারানোর পথে প্রথম ধাপ হিসেবে স্বীকৃত। আমিনুল এ ম্যাচ নিয়ে যেকোনো ধরনের সন্দেহ উড়িয়ে দিয়েছেন ‘বাংলাদেশের অধিনায়ক’ বইয়ে, ‘আমি অধিনায়ক ছিলাম, পুরো ম্যাচের প্রতিটি বলের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম। হলফ করে বলতে পারি ম্যাচে খারাপ কিছু দেখিনি। যেটা কেউ কেউ বলার চেষ্টা করে।’

বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা জিততে সেদিন প্রচণ্ড মরিয়া ছিল বলেই উল্লেখ করেছেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক, ‘ওই ম্যাচে রাহুলের সঙ্গে (নিয়ামুর রশীদ) ওয়াসিম আকরাম, বাবুর (শফিউদ্দিন আহমেদ) সঙ্গে ইনজামাম-উল-হকের প্রায় হাতাহাতি হয়ে যাচ্ছিল। আমাকে গিয়ে এসব থামাতে হয়েছে। এ রকম একটা ম্যাচ, কেউ যদি কালিমা লাগানোর চেষ্টা করে, এটা ভুল। এ ম্যাচটা নিয়ে অনেকের কাছে আমাকে উত্তর দিতে হয়েছে। খুব খারাপ লাগলেও ওই জয় নিয়ে আমি গর্ববোধ করি সব সময়ই। এই বিশ্বাসটা এসেছিল, বড় দলকে আমরা হারাতে পারি।’