সবুজ ক্যাপটা কি পাবেন এবার?

হ্যামিল্টন টেস্টে অভিষেক হতে পারে ইবাদতের? ফাইল ছবি
হ্যামিল্টন টেস্টে অভিষেক হতে পারে ইবাদতের? ফাইল ছবি

সংবাদ সম্মেলনের আসনটায় বসেই পড়েছিলেন৷ আসন আর কী, টিম হোটেলের নিচতলায় হলঘরের পাশে একটা চেয়ার আর একটা ছোট ডায়াস টেনে সাজিয়ে শুরু করে দেওয়া৷ বিসিবির কর্মী বাহিনী ছোট বলে সফরে আসা এক সাংবাদিককেও হাত লাগাতে হলো অস্থায়ী সংবাদ সম্মেলন মঞ্চটা সাজাতে৷ 

সাংবাদিকও জনা ছয়েক৷ ইবাদত হোসেন শুরু করতে যাবেন, অমনি থেমে যেতে হলো লজিস্টিক ম্যানেজার হয়ে আসা খালেদ মাসুদই থামালেন৷ হঠাৎ যে খেয়াল হলো ইবাদত নিজের মতো করে একটা গেঞ্জি পরে এসেছেন৷ দ্রুত তাঁকেই ছুটতে হলো নিজের কক্ষে৷ দলের অনুশীলন জার্সিটা পরে এলেন৷ ম্যানেজার সন্তুষ্ট, এবার শুরু,করা যায়৷

আরও একবার সাংবাদিকেরা যখন সব সাজিয়ে-গুছিয়ে নিচ্ছেন, ইবাদতের চাতক চাহনি স্পষ্ট পড়ে ফেলা যাচ্ছিল৷ দ্রুতগামী রিলে অলক্ষ্যে ছুটছিল কিছু ছবি৷ হ্যামিল্টনের মন্থর সন্ধ্যা তাঁর গল্পটাই বলে দিচ্ছিল৷ ঠিক এভাবেই শুরু করতে করতেও শুরু করা হয়নি ইবাদতের জাতীয় দলের আগাম সফরসঙ্গী হয়ে নিউজিল্যান্ডেই এসেছিলেন তাও সোয়া দুই বছর হয়ে গেল৷ এর মধ্যে ওয়াইকাটো নদী নাকি আগের চেয়ে আরও সুন্দর হয়ে গেছে, কিন্তু ইবাদত এত দীর্ঘ সময়েও পাল তুলে দিতে পারেননি৷ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পাল৷ তিন ফরম্যাটের কোনোটাতেই যে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়েনি৷

এবার আর অগ্রগামী দল নয়, জাতীয় দলের সদস্য হয়েই এসেছেন৷ দলে নানা চোটাঘাতে এই সফরে একাদশ নির্বাচন কঠিন হয়ে যেতে পারে বলে একটা আইরনি বাংলাদেশি সাংবাদিকদের অলস আড্ডায় উঠে আসছে৷ তবু জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না, শিক্ষানবিসি থেকে ইবাদতের মুক্তি এবার মিলবে কি না৷ তিন পেসারের আক্রমণভাগে সেই ত্রয়ীর একজন যে ইবাদতই হবেন, বলা কঠিন৷

তবে কোচ স্টিভ রোডস তাঁর ওপরে মুগ্ধ চোরা দৃষ্টি রেখেছেন তা বোঝা যায়৷ একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে যতটুকু পেরেছেন, ইবাদত নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন৷ একাদশে থাকা না-থাকা বড় নয়, স্কোয়াডে থাকাই বড় কথা, এই আপ্তবাক্যে ইবাদত আর খুশি হবেন না৷ অপেক্ষা কম দিনের তো নয়!

ইবাদতের কথা শুনে অবশ্য অন্য ধারণা আপনি পাবেন৷ প্রথমেই বললেন, 'প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই আল্লাহকে একটি ভালো এবং সুন্দর সুযোগ দেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়ত ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। নির্বাচকেরা আমার ওপরে বিশ্বাস রেখেছেন এবং আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো নিউজিল্যান্ডে নিয়ে এসেছে।'

কিন্তু এতটুকু আস্থাতেই যে তিনি বর্তে যাচ্ছেন না, তা একটু পরেই খোলাসা হলো৷ ইবাদত যখন গত নিউজিল্যান্ড সফরের পর এই মধ্যবর্তী সময়টায় নিজেকে অনেক পরিণত দেখছেন বলেই দাবি করলেন, 'কিছুদিন থেকে কোর্টনি ওয়ালশ, মারিও বা যারা ছিল, তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। ওয়ালশ আমাকে বলেছেন, তুমি এর আগে এখানে এসেছিলে যেভাবে, এই দুই বছরে তোমার তার থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে।

একটু পরে ঝেড়েই কাশলেন, 'আমি শিক্ষানবিশ ছিলাম আসলে, তখন আমাকে কোর্টনি ওয়ালশ জিজ্ঞেস করেছিল যে তুমি যে এখানে এসেছ তোমাকে কী কারণে নিয়ে আসা হয়েছে? আমি বলেছিলাম যে এখানকার প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো এখানকার আবহাওয়া এবং উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। আসলে এই দুই বছরে আমি চম্পকা রামানায়েকের সঙ্গে কাজ করেছি। বিশেষ করে কাজ করেছি আমার অ্যাকুরেসি নিয়ে, লাইন এবং লেংথ নিয়ে। উনি আমাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করে বলেছিলেন, তোমার যে বোলিং অ্যাকশন, তুমি লম্বা সময় ধরে বোলিং করতে পারবে। তুমি যদি ভালো টেস্ট খেলোয়াড় হতে পারো সেটা আসলে অনেক ভালো হবে। ওনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি আসলে লাল বল নিয়ে স্বপ্ন দেখি।'

সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, তা জানা যাবে পরশু শুরু টেস্ট সিরিজে৷ যদি মখমল নরম কিন্তু দায়িত্বে পাঁচ টনি ওজনের সবুজ টুপিটা পেয়ে যান ইবাদত৷ বাংলাদেশের টেস্ট ক্যাপটার ওজন পাঁচ টনই, ওটা যে সমগ্র বাংলাদেশ!

টি-টোয়েন্টির স্বর্ণ ডিম্ব হংস তরুণদের নাকি আর আগের মতো টেস্টমুখী করছে না৷ ফিসফিস আলোচনাটা খোদ মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রকাশ্য করেছেন, তরুণদের মধ্যে টেস্ট খেলা নিয়ে বৈরাগ্য আছে তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়ে৷ ৪ ওভার বোলিংয়েই লাখোপতির জ্যাকপট, এই যুগে কে টেস্টের মরণখাটন খাটবে বাবা! সেই সময়ে ইবাদতের মুখে উচ্চারিত টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে উচ্ছ্বাসটাকে পরম প্রার্থনার মতো শোনাল৷ আর তাই তিন টেস্টের এই সিরিজে ইবাদতের গায়ে সাদা পোশাক আর মাথায় বাংলাদেশি ব্যাগি গ্রিনটা দেখতে পেলে, ভালোই লাগবে!