রঙিন পোশাকে 'রঙিন' মোস্তাফিজ টেস্টে কেন বিবর্ণ?

টেস্টে কেন এত বিবর্ণ মোস্তাফিজুর রহমান? ফাইল ছবি
টেস্টে কেন এত বিবর্ণ মোস্তাফিজুর রহমান? ফাইল ছবি
>৫০ কিংবা ২০ ওভারের ক্রিকেট, রঙিন পোশাকে যে বোলারের পারফরম্যান্স যতটা উজ্জ্বল, সাদা পোশাকে ঠিক ততটাই বিবর্ণ! ১২ টেস্টে দেশসেরা একজন পেসারের উইকেট মাত্র ২৭টি

ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে একাদশ সাজাতে হলে মোস্তাফিজুর রহমানের নামটা লিখতেই হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। কিন্তু যদি হয় টেস্ট, ভাবতে হয় অনেক কিছুই। কন্ডিশন কেমন, প্রতিপক্ষ কারা, পাঁচ দিনের ম্যাচের ধকল নিতে পারবেন মোস্তাফিজ, অনেক কিছুই চিন্তা করতে হয়।

সীমিত ওভারের ক্রিকেট বা রঙিন পোশাকে যে বোলারের পারফরম্যান্স উজ্জ্বল, সাদা পোশাকে ঠিক ততটাই বিবর্ণ! ১২ টেস্টে দেশসেরা একজন পেসারের উইকেট মাত্র ২৭টি। ওয়ানডেতে যাঁর গড় ২১.৭১, টি-টোয়েন্টিতে ১৭.৬৬; টেস্টেই সেটি ৩৩.৭৪! ওয়ানডেতে একটা উইকেট পেতে মোস্তাফিজের খরচ ২৭.৬ বল, টি-টোয়েন্টিতে ১৩.৮। টেস্টে সেটিই ৬৫.২! তার মানে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে উইকেট পাওয়া যেখানে ‘ডাল-ভাত’, বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে সেটিই সোনার হরিণ হয়ে যায়! ওয়ানডেতে ৩ বার, টি-টোয়েন্টিতে ১বার ৫ উইকেট পাওয়া বোলারই কি না টেস্টে এক ইনিংসে কখনো ৫ উইকেট পাননি। আন্তর্জাতিক-ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে যে বোলার উইকেটের ‘সেঞ্চুরি’ করে ফেলেছেন দ্রুতই, ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলীন সংস্করণে কেন তাঁর পরিসংখ্যান এত অনুজ্জ্বল?

হ্যামিল্টন টেস্টের আগে প্রশ্নগুলো উঠছে অনেক কারণে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবেই আলোড়ন তোলা মোস্তাফিজ ধারাবাহিকভাবে রঙিন পোশাকে আলো ছড়াতে পারেন, টেস্টে তাঁকে নিয়ে কত সংশয়। কদিন আগে বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ বলেছেন, মোস্তাফিজের টানা ৩ টেস্ট খেলা কঠিন! কেন কঠিন? কারণ ‘ওয়ার্ক লোড’— ওয়ালশ মোস্তাফিজের ক্ষেত্রে সেটি যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখার পক্ষে। বারবার চোটাঘাতে অগ্রযাত্রা থেমে যাওয়ায় বাঁ হাতি পেসারকে নিয়ে সতর্কভাবে এগোতে চায় বিসিবি। সামনে যেহেতু বিশ্বকাপ, মোস্তাফিজকে নিয়ে সতর্কতা আরও বেশি।

চোট, বিশ্বকাপ, এসবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, টেস্ট-উপযোগী করে তাঁকে গড়ে তোলাই হয়নি। তাঁরই সমসাময়িক সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা কাগিসো রাবাদাকেই দেখুন, টেস্টে কী দুর্দান্ত গতিতে এগোচ্ছেন। ৩৭ টেস্টে ১৭৬ উইকেট নেওয়া রাবাদা এর মধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে। শুধু টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা বোর্ড নয়; খেলোয়াড়ের ফিটনেস, সংস্করণটা ভালো বোঝা কিংবা টেস্টের প্রতি ভীষণ টান, অনেক কিছুই নির্ভর করে এ সংস্করণে ভালো করতে।

টেস্টে বিবর্ণ পরিসংখ্যান দেখে যদি মোস্তাফিজের মন খারাপ হয়, তবে খুশি হতে পারেন মাহমুদউল্লাহর কথা শুনে। বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক বাঁ হাতি পেসারকে শুধুই পরিসংখ্যানে বিচার করতে রাজি নন, ‘আমরা যখন দেশের মাঠে খেলেছি, ওর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। দেশে যেভাবে আমরা খেলি, নিজেদের কন্ডিশন খুব ভালোভাবে কাজে লাগাই। দেশের মাঠে সে তার শক্তিকে ভালোভাবে কাজে লাগায়। যদি আরও ধারাবাহিক হতে হয় এখানে আরও কাজ করতে হবে ওকে। আমি আশাবাদী, মোস্তাফিজ যে ধরনের ক্রিকেটার, ১২ টেস্টে ২৭ উইকেট—সেটি তাকে পুরোপুরি তুলে ধরে না। সে এর চেয়ে আরও ভালো করার সামর্থ্য তার আছে। ভালো করতে সে উন্মুখ, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই টেস্ট সিরিজে সে দুর্দান্ত কিছু করবে।’

এটা ঠিক, পরিসংখ্যান অনেক সময় একজন খেলোয়াড়কে পুরোপুরি তুলে ধরতে পারবে না। ক্রীড়া লিখিয়েদের গুরু নেভিল কার্ডাস তো এমনি বলেননি, ‘পরিসংখ্যান একটা আস্ত গাধা’! কিন্তু এ পরিসংখ্যানই তো বলছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজ দুর্দান্ত, টেস্টে কেন সেটি বলবে না?

উত্তরটা মোস্তাফিজের কাছেই লুকিয়ে।