ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বাজে অধিনায়ক নিয়ে খেলছে অস্ট্রেলিয়া!

ভয়ংকর বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন ফিঞ্চ। ছবি: এএফপি
ভয়ংকর বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন ফিঞ্চ। ছবি: এএফপি

মাঝে কিছুদিন ক্রিকেট বেশ বাজে সময় কাটিয়েছে। সফরে যাওয়া দলগুলো রীতিমতো হাবুডুবু খেয়েছে। তবে ইংল্যান্ডের শ্রীলঙ্কা জয়, ভারতের অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড জয় কিংবা শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট জয়ে আবার হারানো বিশ্বাস ফিরে পাচ্ছে সমর্থকেরা। ‘ঘরের মাঠের বাঘ’ তত্ত্বটা তাই একটু কম গুরুত্ব পাচ্ছে।

এত কিছুর মাঝেও ভারত এখনো প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ংকর এক জায়গা। ঐতিহ্যগতভাবেই এখানে সফরকারীদের জয় পেতে কষ্ট হয়, তার ওপর সব ধরনের ক্রিকেটেই দুর্দান্ত ফর্মে আছে দলটি। অস্ট্রেলিয়া দল সেই কঠিন পরীক্ষাই দিচ্ছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দুর্দান্ত দুই ইনিংসে প্রথম পরীক্ষা পাশ করে ফেলেছে তারা। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজের শুরুটা হয়েছে হার দিয়েই। যে হারে আরও একবার আলোচনা শুরু হয়েছে অ্যারন ফিঞ্চকে নিয়ে।

স্টিভ স্মিথের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাই অ্যারন ফিঞ্চকেই ভরসা মানছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের বিপক্ষে এমন চাপের সিরিজ সামলাতে কাঁধ তাই বেশ চওড়া করতে হচ্ছে ফিঞ্চকে। কিন্তু ফিঞ্চ যে নিজের ভারই বইতে পারছেন না! দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার চেয়েও ফিঞ্চের কাছে দলের বেশি চাওয়া ব্যাটিংয়ে। সেখানেই যে চরম ব্যর্থ ফিঞ্চ। প্রথম ওয়ানডেতে শূন্য হাতে বিদায় নিয়ে দলের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করেছেন সেটা আর ইনিংসের বাকি অংশে কাটাতে পারেনি দল। অবশ্য নতুন নয়, টি-টোয়েন্টি সিরিজেও শূন্য দিয়েই শুরু করেছিলেন ফিঞ্চ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও ১৯১ রানের বিশাল লক্ষ্যে নেমে ৮ রান করেই বিদায় নিয়েছেন ফিঞ্চ।

টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোর ফিঞ্চের। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া ফিঞ্চের গড়টাও খারাপ না (৩৭.১৩)। অধিনায়কত্বের ভার নিয়েও নয় (৩৪.২১)। কিন্তু বাস্তবতা হলো ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়েতে হওয়া সে সিরিজের পর ১০ ম্যাচে মাত্র ৭৫ রান করেছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। ৮ ম্যাচেই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি! দলের অধিনায়কের এমন ফর্ম চিন্তায় ফেলতে যথেষ্ট।

ম্যাক্সওয়েলের সুবাদে টি-টোয়েন্টি সিরিজ পার হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজ তো মাত্র শুরু হলো। আগামী দুই সপ্তাহের মাঝেই খেলতে হবে আরও ৪টি ম্যাচ। আর অধিনায়ক হিসেবে ফিঞ্চের রেকর্ড কোচের কপালে ভাঁজ ফেলবেই। এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে মাত্র ১৪৩ রান করেছেন ফিঞ্চ। এতে মাত্র একটি ফিফটি। ইনিংসের শুরুতেই নামেন তাই এত কম রানে গড়টা ভালো করার সুযোগও নেই। নেতৃত্বের ভার নিয়ে ম্যাচ প্রতি ১৫.৮৮ রান এনে দিচ্ছেন ফিঞ্চ। আর প্রতিপক্ষের নাম যখন ভারত, তখন তো শঙ্কাই জাগে! অস্ট্রেলিয়াতেই ভারতের পেসাররা ফিঞ্চকে নাকানিচুবানি খাইয়েছে। কালকের শূন্যের পর তাঁর সংগ্রহ ৪ ম্যাচে ২৬!

শুধু ভারতের বিপক্ষে তথ্য উপাত্ত হিসাব না করলেও অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে এতটা বাজে গড় নিয়ে অধিনায়কত্ব করেননি কোনো ব্যাটসম্যান। ফিঞ্চের ১৫.৮৮ গড়ের চেয়ে কম গড় নিয়ে পরিসংখ্যানের খাতাকে ব্যস্ত রেখেছেন ইয়ান হিলি, টিম পেইন, শেন ওয়ার্নের মতো পরিচিত নাম। কিন্তু অন্তত ৫ ম্যাচ খেলেছেন এমন অধিনায়কদের মাঝে কোনো ব্যাটসম্যান এতটা বাজে গড় নিয়ে নেতৃত্ব দেননি। অস্ট্রেলিয়ার জন্য শঙ্কার বিষয় হলো, অধিনায়ক হিসেবে ফিঞ্চের একমাত্র ফিফটিও এসেছে নিয়মিত দায়িত্ব পাওয়ার আগে। গত নভেম্বরে অধিনায়ক করার পর ৭ ম্যাচে ১১.৮৬ গড় ফিঞ্চের!

কিন্তু বিপাকে পড়া অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে এখন নতুন অধিনায়ক পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এ জন্যই হয়তো কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার অধিনায়কের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছেন, ‘সে এত ভালো খেলোয়াড়, এত ভালো মানুষ। দলের অধিনায়ক সে, ঘুরে দাঁড়াবেই। আমাদের শুধু ওকে সমর্থন দিতে হবে। আমরা জানি সে ফিরবেই। ওকে অ্যারন ফিঞ্চ হতে হবে, নিজের মতো খেলতে হবে। সেই চেষ্টাই করছে সে। ওর রান আসবে, শুধু অনুপ্রেরণা দিতে হবে আমাদের।’