'ইউনিভার্স বস' ঘরের মাঠের শেষটাতেও রাজসিক

গোটা সিরিজেই এভাবে উদ্‌যাপন করেছেন গেইল। কাল রেকর্ড গড়া ফিফটির পর। ছবি: এএফপি
গোটা সিরিজেই এভাবে উদ্‌যাপন করেছেন গেইল। কাল রেকর্ড গড়া ফিফটির পর। ছবি: এএফপি
>সেন্ট লুসিয়ায় কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েছেন ক্রিস গেইল। ঘরের মাঠে এটাই তাঁর শেষ ওয়ানডে সিরিজ

মার্ক উডের বলে বোল্ড হলেন। আউট। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটসম্যানের মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ার কথা। কিন্তু সেটি হলো না। ড্রেসিং রুমে ফেরার পথে চারপাশে ঘুরে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন। হেলমেট খুলে উঁচিয়ে ধরেছেন ব্যাট। চোখেমুখে কৃতজ্ঞতা আর প্রশান্তির প্রতিচ্ছবি। সমর্থকদের যেন বলতে চাইলেন, আমাকে ভালোবাসা ও সমর্থন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। করতালির বৃষ্টি ঝরিয়ে সেন্ট লুসিয়ার দর্শকেরাও যেন তার জবাবে বুঝিয়ে দিলেন, নিখাদ বিনোদন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বিদায় ক্রিস গেইল!

না, গেইল এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়েননি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কাল শেষ হওয়া পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষেই এই সংস্করণ ছেড়ে দেবেন। গেইলের এ কথা অনুযায়ী, ঘরের মাঠে এটাই ছিল তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ। তা, ঘরের দর্শকদের সামনে থেকে তাঁর বিদায়টাও হলো রাজসিক। শুধু রাজসিক বললে কম বলা হয়। ঘরের মাঠে দর্শকদের কাছ থেকে এভাবে বিদায় নেওয়ার স্বপ্ন দেখবেন যে কোনো ক্রিকেটারই—গেইল সেই স্বপ্নই বাস্তবে অনূদিত করলেন!

প্রথম ম্যাচে ১২৯ বলে ১৩৫, দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৩ বলে ৫০, তৃতীয় ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পণ্ড হয়। শেষ দুই ম্যাচে গেইলের স্কোর ৯৭ বলে ১৬২ এবং ২৭ বলে ৭৭। ঘরের দর্শকদের সামনে ক্যারিয়ারের শেষ সিরিজে এমন অবিশ্বাস্য খেলে আর কেউ ‘বিদায়’ বলতে পেরেছেন কিনা, সেটি গবেষণার বিষয়। অবশ্য চতুর্থ ওয়ানডে শেষে গেইল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ শেষে অবসর নাও নিতে পারেন। কিন্তু কাল মাঠ ছাড়ার সময় যেভাবে আবেগ দেখালেন তাতে মোটামুটি নিশ্চিত ঘরের মাঠে এটাই ছিল ‘ইউনিভার্স বস’-এর শেষ সিরিজ।

এই শেষ সিরিজের শেষটাও হলো কি রাজসিক! মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন পেসার ওশানে টমাস। আগের ম্যাচেই চার শ রানের কোটা টপকে যাওয়া ইংল্যান্ড এদিন গুটিয়ে গেছে মাত্র ১১৩ রানে। এর মধ্যে ইংল্যান্ড শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে। ২১ রানে ৫ উইকেট নেন টমাস। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটাই ইংল্যান্ডের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে এই লক্ষ্য আরও ছোট হয়েছে গেইল-ঝড়ের জন্য। ২৭ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলার পথে গেইল ফিফটি তুলে নেন মাত্র ১৯ বলে। এই ইনিংস দিয়ে ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ড্যারেন স্যামির গড়া দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ভাঙেন গেইল। মজার ব্যাপার, গেইল এই রেকর্ড ভাঙলেন ড্যারেন সামি ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে!

মূলত গেইলের তাণ্ডবেই এই ম্যাচ ২২৭ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জিতে সিরিজে ২-২ ব্যবধানে সমতায় ফিরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই গেইলের মারকুটে ব্যাটিংয়েই কাল ওয়ানডেতে নিজেদের ইতিহাসে বলের হিসেবে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছে ইংল্যান্ড। যা অব্যাহত ছিল গোটা সিরিজেই। তাতে রেকর্ডও ভেঙে পড়েছে টুপটাপ করে। এই সিরিজে ৩১৬ বলের মুখোমুখি হয়ে ৩৯ ছক্কা (প্রতি ৮.১০ বলে একটি করে ছক্কা) মেরেছেন গেইল। যে কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বা টুর্নামেন্টে এটাই সর্বোচ্চসংখ্যক ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড। আর কোনো ব্যাটসম্যান ২৫ ছক্কার বেশি মারতে পারেননি। এ সিরিজে মোট ৪২৪ রান করেছেন গেইল। চার ম্যাচের সিরিজে এটি কারও সর্বোচ্চ রানেরও রেকর্ড।

চল্লিশ বছরে পা রাখা গেইল অবসর ঘোষণার পর যেন আরও বেশি বিধ্বংসী হয়ে উঠেছেন। স্বাভাবিকভাবেই অনুযোগ চলছে, বিশ্বকাপের পর গেইল যে ওয়ানডে না ছাড়েন। খেলাধুলায় একটি কথা প্রচলিত, এমন সময়ে বিদায় বলা উচিত যখন সবাই আরও কিছুদিন থেকে যাওয়ার অনুরোধ করবে। গেইল সেই সময়টাই বুঝি এখন উপভোগ করছেন! তবে বিশ্বকাপের পরই যে ওয়ানডে ছাড়ছেন তা গেইল মোটামুটি নিশ্চিত করে রাখলে ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে এটাই আমার শেষ ওয়ানডে সিরিজ’ কথাটি জানিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। আর বললেন, ‘ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটপ্রেমীদের বিনোদন দিতে পারা আমার জন্য সব সময়ই সম্মানের ব্যাপার।’