বাংলাদেশকে শর্ট বলেই ঘায়েলের আশা বোল্টের

নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। ছবি: এএফপি
নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। ছবি: এএফপি
>

হ্যামিল্টন টেস্টের মতো ওয়েলিংটনেও বাংলাদেশকে ‘শর্ট বল’ করার হুমকি দিয়ে রাখলেন নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট

হ্যামিল্টন থেকে সুখস্মৃতি নিয়ে নিউজিল্যান্ড দল এখন ওয়েলিংটনে। বাংলাদেশ দলও পা রেখেছে ওয়েলিংটনে, তবে হ্যামিল্টন থেকে সুখস্মৃতি নিয়ে আসা গেছে খুব কমই। তিন সেঞ্চুরি পেলেও ইনিংস ব্যবধানের হারকে নিশ্চয়ই সুখস্মৃতি বলা যায় না! কিন্তু ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের তো খোশমেজাজে থাকার কথা। কিন্তু ট্রেন্ট বোল্ট নাকি চিন্তিত! কেন? এই কিউই ফাস্ট বোলার চিন্তিত ওয়েলিংটনের উইকেট আর আবহাওয়া নিয়ে।
বোল্ট গত ডিসেম্বরের স্মৃতি ভুলতে পারেনি। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে সবুজ মাঠের মাঝে বাইশ গজ তাঁকে মোটেও আহ্লাদিত করছে না। বরং বোল্ট একরকম চিন্তিতই। সেটি তিন মাস আগে এ মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে উইকেটের অদ্ভুত আচরণের জন্য। জয়ের সুবাস পাচ্ছিল নিউজিল্যান্ডই। কিন্তু ম্যাচের চতুর্থ দিনে কোনো উইকেট ফেলতে না পারার মাশুল গুনে ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল কিউইদের। কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে সারা দিন ব্যাট করেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও কুশল মেন্ডিস।

যেকোনো মাঠেই টেস্টের চতুর্থ দিনে উইকেট ভাঙার কথা। আর সিম মুভমেন্ট ও বাঁক তো আছেই। সঙ্গে যোগ করুন নিউজিল্যান্ডের পেসবান্ধব কন্ডিশন। ভারী হিমেল বাতাস এই কন্ডিশনকে ব্যাটসম্যানদের জন্য আরও কঠিন বানিয়ে ফেলে। কিন্তু গত ডিসেম্বরের সেই টেস্টে ওয়েলিংটনের আবহাওয়া ছিল ঝকঝকে পরিষ্কার। আর উইকেটেও তেমন কিছু ছিল না। ওই ম্যাচের পর কিউই কোচ গ্যারি স্টিড ব্যাট-বলের লড়াইয়ে সমতা আনতে উইকেটকে আরেকটু ‘স্পোর্টিং’—অর্থাৎ বোলারদের জন্য কিছু রাখার কথা বলেছিলেন।

ওয়েলিংটনে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোররাত চারটায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বোল্টের দুশ্চিন্তা ওয়েলিংটনের আবহাওয়া নিয়ে। আবহাওয়া প্রতিবেদন বলছে, এই টেস্ট চলাকালীন সেখানকার কন্ডিশন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের খুব একটা প্রতিকূলে থাকবে না। অর্থাৎ পরিষ্কার আবহাওয়াই থাকবে ওয়েলিংটনে। সঙ্গে যোগ করুন বেসিন রিজার্ভের এই মাঠে তাঁর গত ছয় বছরের পারফরম্যান্স—টেস্টে কোনো ইনিংসেই ৩ উইকেটের বেশি নিতে পারেননি বোল্ট।

আর তাই বিকল্প পথও দেখতে পাচ্ছেন এই বাঁহাতি পেসার। হ্যামিল্টনে যে পথে নিউজিল্যান্ডের পেসাররা হেঁটে ঘায়েল করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ঠিকই ধরেছেন—শর্ট বল। বোল্ট বলেন,‘আমি একই রকম কন্ডিশন (গত ডিসেম্বরের মতো) আশা করছি। আশা করি, চতুর্থ দিনের মতো উইকেটশূন্য থাকতে হবে না। তেমন কিছু হলে আমাদের উইকেট নেওয়ার পথ বের করতে হবে। আর আমি জানি দলের এই সামর্থ্য আছে।’

বোল্ট জানেন, বেসিন রিজার্ভের উইকেটে ব্যাটসম্যানদেরও ব্যাটিং করতে সুবিধা। টেস্ট গড়িয়ে চলার সঙ্গে এখানকার উইকেট আরও ব্যাটিংবান্ধব হয়ে ওঠে। দুই বছর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই ওয়েলিংটনেই প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান তুলেও হেরেছিল বাংলাদেশ। হেরে যাওয়া ম্যাচে এটি প্রথম ইনিংসে কোনো দলের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বোল্ট-ওয়াগনারদের টানা শর্ট বলে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ১৬০ রানেই গুটিয়ে গিয়ে ম্যাচটা নিউজিল্যান্ডের হাতে তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। বোল্ট সেই অভিজ্ঞতা থেকেই মনে করছেন, ওয়েলিংটন টেস্টে বাংলাদেশ দলও শর্ট বলের মুখোমুখি হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমকে বোল্ট বলেন, ‘আমি নিশ্চিত ওরা জানে এটাই হবে। আমার কাছে এটি ভালো কৌশল (শর্ট বল) যখন উইকেটে কিছু থাকে না। কোনো সুইং নেই আর আপনার হাতেও যখন খুব বেশি বিকল্প পথ থাকে না। আমাদের ওয়াগনার আছে যে এই পরিকল্পনা খুব ভালোভাবেই ফলাতে জানে। এটি এমন কৌশল যা আমরা ব্যবহার করে সফল হয়েছি এবং নিশ্চিত থাকুন এখানেও তা অব্যাহত থাকবে।’

বোল্টের এই মতের সমর্থন দিচ্ছেন টিম সাউদিও। টেস্টে একজন পেসার হিসেবে চলার পথে ‘বাধা’ আসলে সেখান থেকে ‘উত্তরণ’ পাওয়ার পথ খুঁজে বের করতে ‘শর্ট বল’-এ আস্থা রাখছেন এই কিউই পেসার। টেস্টের সৌন্দর্য বুঝিয়ে সাউদি বলেন, ‘এটি টেস্ট ক্রিকেট, তাই সহজ হওয়ার কথা নয়। আগের টেস্টে বাংলাদেশের ১০ উইকেট (দ্বিতীয় ইনিংস) নিতে সবার খুব খাটুনি গেছে। তবে এভাবে জেতায় মজাটা আরও বেড়েছে। আসলে টেস্ট ক্রিকেটের এটাই আসল সৌন্দর্য। সব সময় চ্যালেঞ্জিং।’