বুদ্ধিমান জিদান আগেই জানতেন...

এ দুজনের বিদায়ের ক্ষত অপূরনীয়। ফাইল ছবি
এ দুজনের বিদায়ের ক্ষত অপূরনীয়। ফাইল ছবি

‘শিটি সিজন’

নিয়ম ভেঙে ইংরেজি শব্দযুগল ব্যবহার করতেই হচ্ছে। কারণ দানি কারভাহালের মনের দুঃখটা ভদ্রস্থ অনুবাদে ঠিক বোঝা যায় না। রিয়াল মাদ্রিদের এ মৌসুম এক বাক্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন দলের রাইটব্যাক। মার্চ শুরু না হতেই সম্ভাব্য তিনটি শিরোপা দৌড় থেকেই ছিটকে পড়ার পর ক্ষোভ লুকাতে আর কোনো বাধ মানেননি কারভাহাল। ২০১৮/১৯ মৌসুমের বাকি সময়টা ক্লাব কীভাবে শেষ করবে সেটাই যে এখন মূল আলোচ্য বিষয়। টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী রিয়াল এখন মৌসুমের বাকিটা খেলবে পরবর্তী চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলা নিশ্চিত করার জন্য!

গতকাল রিয়াল মাদ্রিদ সম্ভবত তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে। আয়াক্সের মাঠে ২-১ গোলে জয়ী দলটি নিজেদের মাঠে ৪-১ গোলে উড়ে গেছে। গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া না থাকলে ব্যবধান বাড়তেও পারত। পুরো দলের পারফরম্যান্স দেখে আর রাগ লুকাননি কারভাহাল। ঘরের মাঠে এ নিয়ে টানা চার ম্যাচ হারল রিয়াল। অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স। ডাচ কিংবদন্তি রুদ খুলিত অবশ্য বলছেন এটাই স্বাভাবিক। টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী দল এবার এমন পারফরম্যান্স দেখাবে এটা নাকি আগেই বোঝা উচিত ছিল সবার। সবার আগে এটা বুঝতে পেরেছিলেন জিনেদিন জিদান। এ কারণেই মৌসুমের শুরুতেই রিয়ালের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন!

‘যখনই ওরা রোনালদোকে হারাল, এরপরই সরে দাঁড়ানোর মতো বুদ্ধি দেখিয়েছে জিদান। এটাই মূল কথা। এর পর যেই আসবে, তার জন্য কাজটা খুবই কঠিন হতোই। তোমার কাছে রোনালদো নেই। এর মানে ৫০টা গোলও নেই।’ শুনে একটু বিস্ময় জাগতে পারে। জিদান ক্লাবের দায়িত্ব ছেড়েছেন বিশ্বকাপের আগে। আর রোনালদোর দল ছাড়ার ঘোষণা এসেছে বিশ্বকাপের শেষভাগে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঘোষণা দেরিতে এলেও রোনালদোকে ছেড়ে দিচ্ছে ক্লাব, এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই। তখন ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে জিদান অনুরোধ করেছিলেন গ্যারেথ বেলকে ছেড়ে দিয়ে হলেও রোনালদোকে রেখে দেওয়া হোক। কিন্তু সে অনুরোধে কাজ না হওয়াতেই ওভাবে চলে গেছেন জিদান। কারণ ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তি বুঝতে পেরেছিলেন, রিয়ালের মেরুদণ্ড ক্ষয়ে গেছে। রোনালদো না থাকলে সেটা আর আড়াল করা যাবে না।

এ কারণেই আয়াক্সের এমন দাপট দেখে বিস্মিত হননি খুলিত। জিদানের অধীনে যে মধ্যমাঠকে বিশ্বের সেরা মনে হতো, সে মধ্যমাঠই এখন রিয়ালের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। আক্রমণে কোনো সহযোগিতা করছে না, রক্ষণের ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে। গতকাল আয়াক্সের প্রথম দুই গোলেই ক্রুস ও কাসেমিরোর ভুল দেখা গেছে। পুরো ম্যাচেই এ দুজনকে দেখে মনে হয়নি টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগে জেতানো দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন এরা। খুলিত বলছেন রিয়ালের মধ্যমাঠ দেখে যে কোনো দলই তাদের হারানোর সাহস করবে, ‘এটা কোনো বিস্ময় নয়। গত কিছুদিন মাদ্রিদের খেলা দেখুন। আয়াক্সের মাঠের খেলাটাও দেখুন। আয়াক্সের সে ম্যাচ হারা অন্যায় ছিল। বার্সেলোনা মাদ্রিদে এসে যেভাবে খেলেছে সেখানেও রিয়ালকে ছন্নছাড়া মনে হয়েছে। এই মধ্যমাঠ দেখলেই মনে হয়, ও। এমন দলের বিপক্ষেই তো খেলতে চাই। সবচেয়ে ভয়ংকর, আয়াক্সের জন্য এটা ছিল মৌসুমের সবচেয়ে সোজা ম্যাচ! মাদ্রিদের বিপক্ষে! ঘরেও (ডাচ লিগে) এত সোজা ম্যাচ খেলেনি ওরা এ মৌসুমে।’

খুলিতের শেষ বক্তব্যটা জানিয়ে দিচ্ছে শুধু রোনালদোর বিদায় নয়, রিয়ালের এমন পারফরম্যান্সের পেছনে অন্য কারণও আছে। সেটা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন মার্সেল দেশাই। গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ম্যাচে সার্জিও রামোসকে পায়নি রিয়াল। এমন অবস্থাতে শুধু রক্ষণে ভরসা না রেখে আক্রমণের কথা বলেছেন সবাই। কিন্তু সোলারি মারিয়ানো আর ইস্কোর মতো দুজন খেলোয়ারকে স্কোয়াডেই রাখেননি। বাজে ফর্মে থাকা ক্রুস, কাসেমিরোকেই খেলিয়েছেন ভালভার্দে, সেবায়োসের মতো গতিময় ফুটবলারের পরিবর্তে। দেশাইয়ের ভাষায় ফলটা হাতে নাতেই পেয়েছে তারা, ‘সে (সোলারি) নতুন কিছুই আনেনি। নতুন চিন্তা, নতুন ট্যাকটিক বা নতুন দল। তার এত ভীত হওয়া উচিত হয়নি। সে তার আশ পাশে কিছুই বদলায়নি। হয় রক্ষণে বাড়তি কিছু আনতে হবে নয়তো আক্রমণে কিছু সৃষ্টি করতে হবে, ওদের কাউকে নিজের মতো খেলার সুযোগ দিতে হবে। সে সেটা করেনি।একই দল, একই রকম খেলা। আমাদের ওকেই দোষ দেওয়া উচিত।’