বিসিবির যে বিভাগ একটা 'জাদুঘর'

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদে এভাবে থমকে যায় ম্যাচ। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদে এভাবে থমকে যায় ম্যাচ। ছবি: প্রথম আলো
>একসময় বাংলাদেশের ক্রিকেট আবর্তিত হতো ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে। সেই ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট এখন ধুঁকছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কী করণীয়, সেটিই উঠে এসেছে এক সেমিনারে

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট একসময় ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণ। কিন্তু এখন বাস্তবতা ভিন্ন। সেই প্রাণের এখন করুণ অবস্থা! কিছু আত্মঘাতী পদক্ষেপ, বিসিবির ভোট ও কাউন্সিলরশিপের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে প্রভাব বিস্তারে ঢাকায় ক্রিকেটের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগ এখন সংকটাপন্ন। ঘরোয়া ক্রিকেটের পাতানো ম্যাচ ও পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা।

এই সমস্যার সমাধানে আজ বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) ডাচ–বাংলা অডিটোরিয়ামে ‘ঢাকার ক্রিকেটে পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং : বাস্তবতা ও সমাধান’ শীর্ষক এক সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ)। অনুষ্ঠানে বক্তারা ঘুণে ধরা ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের নানা অনিয়ম, সমস্যা, অসংগতি তুলে ধরেন। ক্রীড়া সাংবাদিক তারেক মাহমুদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক পরিচালক ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, ‘আম্পায়ারদের ভুল আমাদের সময় ছিল “হিউম্যান এরর”। কিন্তু এখন সেটা হয়ে গেছে ইচ্ছাকৃত। আমাদের খেলার সময়ও এমন আম্পায়ারিং হয়েছে। কিন্তু কোন মাত্রায় হয়েছে, সেটা দেখার প্রয়োজন।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘কার এত বড় সাহস হয় যে আম্পায়ারকে দিকনির্দেশনা দেয়? সেই শক্তিটা কোথায়? আমাদের বোর্ড সভাপতি অনেক ভালো কাজ করেছেন। আমার বিশ্বাস, তিনি এদিকেও নজর দেবেন।’ গাজী আশরাফ মনে করেন, ঢাকার ক্রিকেট লিগের সব ধরনের ম্যাচে আকসুর উপস্থিতির প্রয়োজন। আম্পায়ারদের ওপর নজরদারি এবং ম্যাচে ক্যামেরা রাখার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন তিনি।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট বিসিবির যে বিভাগ দেখে থাকে, ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) প্রধান কাজী ইনাম আহমেদ অভিযোগের বিপরীতে নিজের অসহায়ত্বই প্রকাশ করেছেন, ‘যে অভিযোগগুলো উঠেছে, সেগুলো অনেক আগে থেকে উঠেছে। সিসিডিএম হচ্ছে একটা জাদুঘর। আমি এখানে একমাত্র কিউরেটর (তত্ত্বাবধায়ক)। একজন কিউরেটরের পক্ষে অনেক কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব না। তবে আমরা অনেক কিছুই চেষ্টা করছি। কোনো বিতর্ক ছাড়া ঢাকা প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি শেষ করেছি। প্রিমিয়ার লিগের ফিকশ্চার করা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট ক্লাব নিয়ে অনেক অভিযোগ। এবার ফিকশ্চারে দেখেন তাদের প্রথম তিনটি খেলার একটিও বিকেএসপিতে নেই। আমরা খেলোয়াড়দের টাকা-পয়সা নিশ্চিত করেছি। টাকা-পয়সা বাড়িয়েছি।’

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ যেটির বিরুদ্ধে, সেই আম্পায়ারিং নিয়েও কাজী ইনামের কণ্ঠে অসহায়ত্ব, ‘আমরা ক্রিকেট বোর্ডের আম্পায়ার্স কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে আম্পায়ার বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম আম্পায়ার বরাদ্দের কমিটিতে সিসিডিএমের একজন প্রতিনিধি থাকুক। কোনো সাড়া পাইনি। আশা করছি ভবিষ্যতে আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান এবং সেক্রেটারির সঙ্গে সমন্বয় করে সিসিডিএম কাজ করতে পারবে।’

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন ইয়াং পেগাসাসের কর্মকর্তা সৈয়দ আলী আসাফ। কলাবাগানের ক্রিকেট সেক্রেটারি ও বিসিবির কাউন্সিলর রিয়াজ আহমেদ বাবুর অভিযোগ, ম্যাচ শেষে অধিনায়ক কিংবা ম্যানেজারের যে রিপোর্ট থাকে, তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সিসিডিএম পর্যন্ত পৌঁছায় না। ক্রিকেট কোচ, লেখক ও বিএসজেএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ চৌধুরীর প্রশ্ন, বিসিবি কেন শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক হবে?