হিংসা না করে উপায় নেই!

বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের ধৈর্য আছে বটে!
দেখা যায়, ম্যাচ গড়াবে সপ্তাহখানেক পর। টিকিটের জন্য ব্যাংকে লাইনে দাঁড়াতে হয় চার-পাঁচ দিন আগেই। সেটিও ভোরবেলায় গিয়ে দিতে হয় লাইনে দাঁড়ানোর সিরিয়াল। অনলাইনেও টিকিট খোঁজা চলে। কিন্তু সেখানেও নানা পদের ঝক্কি-ঝামেলা পোহানো ছাড়া মেলে কী? অনেক সময় দেখা যায়, অনলাইনে টিকিট ছাড়ার দু-এক ঘণ্টার মধ্যেই নেই। কালোবাজার বাদ যাবে কেন? ক্রিকেটপ্রেমীদের একেকজন সেখানেও যেন সহনশীলতার অবতার! গলাকাটা দামে টিকিট কিনে তবু বাংলাদেশের খেলা দেখতেই হবে। দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে এটাই তো দেশের দর্শকদের হাল।

হাল না বেহাল? সম্ভবত পরের কথাই সত্য। টিকিট নাহয় কোনোভাবে জোগাড় হলো, স্টেডিয়ামে ঢোকার যুদ্ধ সামলাবেন কীভাবে? মানুষের দঙ্গলে নিজেকে শামিল করে স্টেডিয়ামে নাহয় ঢুকলেন কোনোভাবে। বড় ম্যাচ হলে আসন পাওয়াই দায়। আর আসনগুলোও বলিহারি! বাদামের খোসা, সিগারেটের অবশিষ্টাংশ আর প্লাস্টিকের একবার ব্যবহারযোগ্য পাত্রে সয়লাব চারপাশ। আত্মপ্রবোধ দিয়ে নাহয় এর মধ্যেই কোনোমতে শরীরটুকু গুঁজে চোখ রাখলেন সবুজগালিচার মাঝে বাইশ গজে। সবুজ? আহা, গরম ভাবাপন্ন জলবায়ুর কারণে এ দেশের মাঠগুলোকে বরং সবুজাভ বাদামি বলাই ভালো। চারপাশে ভীষণ কোলাহল আর খিস্তিখেউড় সহ্য করেই ক্রিকেটের স্বাদ নিতে হয় এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।

অথচ ক্রিকেটপ্রেমী আমজনতার অনেকেই হয়তো ইন্টারনেটে দেখে থাকেন বাইরের মাঠগুলো। মাঠে ধুন্ধুমার লড়াই চললেও গ্যালারির দর্শকেরা থাকেন ‘পিকনিক’ মুডে। পরিবার-পরিজন আর বন্ধুবান্ধব নিয়ে যেমন আমোদ চলে, তেমনি নিরবচ্ছিন্ন ক্রিকেটও উপভোগ করেন তাঁরা। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভের কথাই ধরুন। এ যেন সবুজ চাদরের ওপর শ্বেত-শুভ্র পোশাক পরিহিত ‘ভদ্রলোক’দের লড়াই। আর তা দেখতে দর্শকদের কী চোখজুড়ানো আয়োজন! লেখার সঙ্গে থাকা ভিডিওটি দেখলে তা বোঝা যায়। একটু হিংসাও কি হয় না?

হতে পারে। বাংলাদেশে তো আর এমনটি নেই। আজ তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ ২১১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ইনিংস বিরতি চলছিল। তখন দৃশ্যটা দেখা গেল। মাঠে কোনো আসনের বালাই নেই। সবুজ ঘাসের বুনটের চেয়ে ভালো আসন আর কী হতে পারে! পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছেন দর্শকেরা। যে যাঁর ইচ্ছেমতো জায়গা নিয়ে বসেছেন আর শিশু-কিশোরদের ছেড়ে দিয়েছেন তাদের মতো করে। গ্যালারি বলতে ঢালের মতো সবুজ যে অংশটি, সেখানে খুদেরা খেলছে নিজেদের মতো করে। স্পিকারে ভেসে আসছে গানের সুর। চারপাশ তেমন শান্ত না হয়েও কেমন যেন নির্ভার ও ভাবনাহীন; অনেকটাই আমরা কল্পনায় যেমন দেখে থাকি—একটা সবুজ মাঠ। গিজগিজ না করলেও দর্শক যাঁরা আছেন, তাঁরা খেলা ভালোবেসেই এসেছেন। যে যাঁর মতো করে খেলা দেখছেন। সময়টুকু উপভোগ করছেন।

বল জোগাড় করে খুদে ছেলেমেয়েরা ক্যাচ লুফছে। আর তাদের মা-বাবা হয়তো খাবার সঙ্গে করেই এনেছেন কিংবা তৈরি করছেন। তারা ক্লান্ত হয়ে পড়লে যে খাবার দিতে হবে, খেতে হবে নিজেদেরও। যেহেতু টেস্ট ক্রিকেট, সময় তো আছেই। একটু করে খেলা দেখো, আর একটু করে নিজের মতো থাকো—এ যেন তেষ্টার মধ্যে এক গ্লাস শীতল জল। একটু একটু করে খেতে হয়, তাতেই যত শান্তি। কর্মজীবনে নানা ব্যস্ততার ফাঁকে ক্রিকেট, হ্যাঁ, এই ক্রিকেটই তাঁদের নিজেদের মতো করে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়।

আমরা এমন সুযোগ পেলাম কোথায়?