কোহলিদের সেনা-টুপির ব্যাখ্যা দিল আইসিসি

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে এমন টুপি পরেই খেলতে নেমেছিলেন কোহলি-ধোনিরা। ছবি: এএফপি
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে এমন টুপি পরেই খেলতে নেমেছিলেন কোহলি-ধোনিরা। ছবি: এএফপি

বেশি উত্তাপ ছড়ানোর আগেই আগুনে জল ঢেলে দিল আইসিসি। কাল সংস্থাটির মুখপাত্র জানিয়েছেন, আইসিসির অনুমতি নিয়েই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে সেনা-টুপি পরে খেলেছে ভারত। রাঁচির ম্যাচটিতে সেনা-টুপি পরে খেলে ভারত আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে দাবি করে পিসিবি আইসিসিকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। এরপরই আইসিসির পক্ষ থেকে এই বিবৃতি এল।

বার্তা সংস্থা এপিকে কাল এক ই-মেইলে আইসিসির মুখপাত্র ক্লেয়ার ফার্লং বলেছেন, ‌‘ওই টুপিগুলো পরার আগে বিসিসিআই (ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড) আইসিসির অনুমতি চেয়েছিল। এটা তারা করতে চেয়েছিল নিহত সৈনিকদের স্মৃতির উদ্দেশে সম্মান জানাতে আর তহবিল সংগ্রহ করতে। আইসিসি তা অনুমোদন করেছিল।’

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলায় ৪০ ভারতীয় জওয়ান নিহত হন। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ক্রিকেট দলের নীল রঙের টুপির বদলে সেনাদের টুপি পরেছিল ভারতীয় দল। ওই ম্যাচের পুরো ম্যাচ ফি সেনাদের কল্যাণ তহবিলে দান করে দল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্মানসূচক লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে থাকা মহেন্দ্র সিং ধোনি টসের আগে সতীর্থদের এই টুপি সরবরাহ করেছিলেন। কোহলি-ধোনিদের এই উদ্যোগ ভারতজুড়ে প্রশংসিত হয়েছিল।

তবে বিষয়টি মানতে পারেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। পিসিবি সভাপতি এহসান মানি দাবি করেন, ভারতীয় দল এই ধরনের টুপি পরায় আইসিসির আচরণবিধির লঙ্ঘন করা হয়েছে। মানি বলেছেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে আইসিসির কাছে উপস্থাপন করেছি। এ ব্যাপারে আইসিসিতে আমাদের অবস্থান নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, ক্রিকেট এবং খেলাধুলাকে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত নয়। এটা আমরা পরিষ্কারভাবেই বলেছি। ক্রিকেট বিশ্বে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা ভয়াবহভাবে তলিয়ে গেছে। আমরা এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ও সুদৃঢ় অবস্থান নিচ্ছি। আমরা রাজনীতি করি না। ক্রিকেটকেও আমরা রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করি না।’

অতীতের দুটি ঘটনার উদাহরণ টেনে এহসান ভারতের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমে ‘সেভ গাজা’ এবং ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা রিস্টব্যান্ড পরে মাঠে নেমেছিলেন অলরাউন্ডার মঈন আলী। তখন মঈনকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসি বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, ‘আইসিসির পোশাক ও সরঞ্জামবিধি অনুযায়ী এমন কিছু পরে ক্রিকেট মাঠে নামা যাবে না, যা সরাসরি রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা বর্ণবাদী বার্তা বহন করে।’ মানি দাবি করেন, পোশাকবিধি লঙ্ঘন করেছে ভারত।

এ ঘটনার পরই আইসিসির পক্ষ থেকে বক্তব্য পাওয়া গেল। আইসিসি এটিকে স্রেফ দাতব্য কাজের অংশ হিসেবেই দেখছে। ফলে, পিসিবির দাবি ধোপে টিকল না।

পুলওয়ামা–কাণ্ডের পর ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। ভারতীয় দল আগামী বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বয়কট করুক—এমন দাবি উঠেছে ভারতের ভেতর থেকে। সন্ত্রাসবাদকে মদদ দেয়—এমন ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বিসিসিআই আহ্বান জানিয়েছে আইসিসির কাছে। এরই পাল্টা হিসেবে পিসিবি কোহলিদের সেনা-টুপিকে ইস্যু বানাচ্ছে বলে ধারণা অনেকের।