টেস্টে বৈপ্লবিক কিছু পরিবর্তন আনার সুপারিশ সাকিবদের

এমসিসির বিশ্ব ক্রিকেট কমিটিতে বর্তমান ক্রিকেটারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। প্রথম আলো ফাইল ছবি
এমসিসির বিশ্ব ক্রিকেট কমিটিতে বর্তমান ক্রিকেটারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। প্রথম আলো ফাইল ছবি

টেস্ট ক্রিকেটে ফ্রি হিট! নো-বলের পরের বলটাতে ব্যাটসম্যানকে আউট না হওয়ার লাইসেন্স দিয়ে মেরে খেলার সুযোগ করে দিতে এই নিয়ম চালু হয়েছিল টি-টোয়েন্টিতে। পরে ওয়ানডেতেও। এই ফ্রি হিট বেশ জনপ্রিয় হয়েছে দর্শকদের মধ্যে। টেস্ট ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির প্রথম যে রং লাগতে যাচ্ছে, তা হয়তো ফ্রি হিটই! এমসিসি ক্রিকেট কমিটি সুপারিশ করেছে টেস্টেও ফ্রি হিট চালুর।

ক্রিকেট কীভাবে চলছে আর কীভাবে চলা উচিত, এ নিয়ে প্রতিবছর নানা সুপারিশ দেয় মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। ক্লাবটি এমনিতেই সুখ্যাত ক্রিকেট খেলার সব নিয়মকানুনের প্রণেতা হিসেবে। এমসিসির একটি বিশ্ব ক্রিকেট কমিটি আছে, যা সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটারদের ও ক্রিকেট প্রশাসকদের নিয়ে গঠিত। বর্তমান ক্রিকেটারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। আছেন সৌরভ গাঙ্গুলী, কুমার সাঙ্গাকারা, শেন ওয়ার্নের মতো সাবেক তারকারা। আছেন মাইক গ্যাটিংয়ের মতো কিংবদন্তিও। গ্যাটিং এই কমিটির প্রধান। এই কমিটি সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে বসেছিল বৈঠকে।

এমসিসির বিশ্ব ক্রিকেট কমিটির এবারের বৈঠক আলোচনায় এসেছে বিশ্বজুড়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। শতাধিক দেশে ১৩ হাজারের বেশি সমর্থকের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ৮৬ শতাংশ ক্রিকেট–সমর্থক এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় ফরম্যাট হিসেবে টেস্টের নামই বলছেন। এমসিসি এই কমিটিরও মূল ভাবনা টেস্ট নিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটকে আরও বেশি জনপ্রিয় করা যায়, সেই উপায় খুঁজছে এই কমিটি।

তাতে বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে, যার কিছু কিছু তো রীতিমতো বৈপ্লবিক। যেমন ফ্রি হিট। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে থাকলেও টেস্টে ফ্রি হিট নেই। তবে অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি ওয়ার্ন মনে করেন, টেস্টেও ফ্রি হিট চালু এখন সময়ের দাবি, যা দর্শকদের আরও বেশি রোমাঞ্চিত করে তুলবে।

এমসিসির বিশ্ব ক্রিকেট কমিটির  বৈঠকে সাকিব । ছবি : সংগৃহীত
এমসিসির বিশ্ব ক্রিকেট কমিটির বৈঠকে সাকিব । ছবি : সংগৃহীত

কমিটির আরেকটি প্রস্তাব হলো টাইমার চালুর। যেন কেউ সময় নষ্ট করতে না পারে। প্রতিটা স্কোরবোর্ডে এই টাইমার বসানো থাকবে। ৪৫ সেকেন্ড করে সময় থাকবে দুই ওভারের মাঝখানের বিরতি। নতুন ব্যাটসম্যান স্ট্রাইক নেওয়ার সময় পাবেন ৬০ সেকেন্ড। বোলার পরিবর্তনের জন্য প্রত্যেক অধিনায়ক সর্বোচ্চ সময় পাবেন ৮০ সেকেন্ড। এর মধ্যে সবকিছু করে ফেলতে হবে। সময় কমতে কমতে যদি টাইমার শূন্য হয়ে যায়, আর এর মধ্যে অধিনায়ক বা ওই দল যদি নির্দিষ্ট কাজগুলো করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সতর্কবার্তা শুনতে হবে। যেটি পরে ওই ইনিংসে ৫ রানের জরিমানায় রূপ নিতে পারে।

একইভাবে পানি পানের বিরতি, উইকেটের পতন ও নতুন ব্যাটসম্যানের আগমন, ডিআরএসের রিভিউয়ের সময়...এই বিরতিগুলো আরও কমিয়ে টেস্ট ম্যাচেও টান টান ঠাসা উত্তেজনা আনার প্রস্তাব করেছে কমিটি।

এই কমিটির আরেকটি বড় প্রস্তাব হলো বিশ্বজুড়ে অভিন্ন ডিউক বল দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলার। এখন এসজি, কোকাবুরা ও ডিউক বল দিয়ে খেলা হয়। একেক দেশ তাদের পছন্দমতো বল বেছে নেয়। কিন্তু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালু হলে সমতা ও ন্যায্যতার প্রশ্নে অভিন্ন বল দিয়ে খেলার একটি দাবি উঠেছে। এ নিয়ে আইসিসি ভাবছেও। এমসিসির কমিটি মনে করে, ডিউক বলই টেস্টের জন্য সবচেয়ে যোগ্য। তবে এই কমিটি এখনো ডিউক বলকে চূড়ান্ত ভোট দেয়নি।