চেন্নাইয়ের রহস্য? নো টিম মিটিং, নো গেম প্ল্যান!

ব্রাভোর দল চেন্নাই মানে আইপিএলে হলুদ শিহরণ! ছবি: এএফপি
ব্রাভোর দল চেন্নাই মানে আইপিএলে হলুদ শিহরণ! ছবি: এএফপি

দল বটে একটা চেন্নাই সুপার কিংস (সিএসকে)! নয়বার আইপিএল খেলে সাতবারই ফাইনালে! বলা হয়, বিশ্বকাপের রং নাকি হলুদ। ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া আর ফুটবলে ব্রাজিলের জার্সিটার রং, আর এই দুই দলের আধিপত্যের কারণে। আইপিএলের রংও তো তাহলে হলুদ!

গতবারের কথাই ধরুন। নির্বাসন থেকে ফিরে সিএসকে এমন খেলাটা খেলল, মনেই হলো না, এই দলটা আগের দুই মৌসুম বিচ্ছিন্ন ছিল! ফিরেই চ্যাম্পিয়ন। এবারও দাপটের সঙ্গেই আইপিএল শুরু করেছে চেন্নাই। গতকাল দিল্লি ক্যাপিটলসকে হারিয়ে তুলে নিল টানা দুই জয়। চেন্নাই কেন টি-টোয়েন্টিতে এত দুর্দান্ত, কালকের ম্যাচটি তার উদাহরণ হয়ে থাকল। ১৫ ওভার শেষে দিল্লির রান ২ উইকেটে ১১৮। এই অবস্থা থেকে দিল্লি তুলল ১৪৭! হাতে ৮ উইকেট রেখেও শেষ ৫ ওভারে ২৯ রান!

ডোয়াইন ব্রাভোর জাদুকরি বোলিংয়ে দিল্লি স্রেফ খাবি খেল। অথচ এই ব্রাভোই ১৪তম ওভারটা শুরু করেছিলেন যাচ্ছেতাই। সাধারণত ১৪, ১৬, ১৮ ও ২০তম ওভারটি তাঁর জন্য বরাদ্দ থাকে যেখানে সামান্য ভুল করার সুযোগ নেই। প্রথম ওভারে ব্রাভো ভুলের পর ভুল করলেন। প্রথম বলটা স্লোয়ার, ব্যাটের কানায় লেগে ৪। পরেরটা লেগে ওয়াইড। চতুর্থ বলটাও স্লোয়ার, এবারও ৪। পরের বলটা ইয়র্কার দিতে দিয়ে লেংথে গড়বড়, আবার ৪!

১৭ রানের সেই ওভারটির পরও ব্রাভোর ওপর আস্থা হারাননি অধিনায়ক ধোনি। ব্রাভোই বুঝে গেছেন কী করতে হবে। নিজের পরের দুই ওভারে তুলে নিলেন তিন উইকেট। সেই তিন উইকেটও আবার কাদের? ঋষভ পন্ত, শিখর ধাওয়ান ও কলিন ইনগ্রাম! প্রথম ওভারেই ১৭, সেখানে শেষ তিন ওভারে ১‌৬ রান। প্রথম ওভারের পর ধোনির সঙ্গে হালকা বাতচিত। তাতেই বদলে গেল সব!

কাল ম্যাচ শেষে ব্রাভো বলেছেন, ‘নিজের প্রথম ওভার থেকে শিখেছি। কন্ডিশন আমাকে এই অর্থে সাহায্য করছিল, এখানে খুব বেশি বৈচিত্র্য দিয়ে বল করে লাভ নেই। সোজা সিমে বল করতে হবে। এটাই ছিল গেম প্ল্যান, এমএসও আমাকে সোজা ডেলিভারি করতে বলছিল, যেন কোনো স্লোয়ার না দিই। স্রেফ সোজা, উইকেটে রেখে বল করা, সঙ্গে ভালো পেস। দ্বিতীয় ওভারে আমি সেটাই করেছি। সাধারণত আামি অনেক বেশি স্লোয়ার দিই, বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করি, ইয়র্কার দিই। কিন্তু এই উইকেটে ওই ধরনের ডেলিভারি মানানসই ছিল না। আর এমএস তো জানেই কী দরকার। সে এও জানে, কিছু করে দেখানোর জন্য ও আমার ওপর নির্ভর করতে পারে।’

চেন্নাইয়ে নাকি সব চোখের ইশারায় হয়! পরস্পরের প্রতি বোঝাপড়াটা এতই ভালো, এই দলে ম্যাচের আগে কোনো টিম মিটিং হয় না। ধরেবেঁধে কোনো গেম প্ল্যানও বাতলে দেওয়া হয় না। মাঠে নেমে সবাই বুঝে যায়, কার কী কাজ। এই ম্যাচে কাকে কী করতে হবে!

ব্রাভোই জানালেন, ‘আমাদের কোনো পরিকল্পনা থাকে না। আমাদের কোনো দলীয় মিটিংও হয় না। আমরা স্রেফ মাঠে গিয়ে হাজির হই, ওই দিনের মেজাজ বুঝে খেলতে থাকি। হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত তার সঙ্গে মানিয়ে নিই। এখানেই তো অভিজ্ঞতার মূল্য।’

এ কারণেই সিএসকে বুড়োদের দল হয়েও টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত। ব্রাভোও বললেন, ‘গত মৌসুমেই আমরা দেখিয়েছি বয়স স্রেফ একটা সংখ্যা। যখনই কেউ সিএসকে নিয়ে কথা বলে, অনিবার্যভাবে বয়সের প্রসঙ্গটা তোলেই। আমরা তো আর ৬০ বছরের বুড়ো নই। হ্যাঁ, আমাদের বয়স ৩৫, ৩০ কি ৩২; কিন্তু আমরা এখনো তরুণ। আমরা নিজেদের শরীরের দেখভাল করি। আমাদের অভিজ্ঞতাও অনেক। যেকোনো খেলায়, যেকোনো টুর্নামেন্টে অভিজ্ঞতার মূল্য অনেক। আপনি অভিজ্ঞতাকে হারাতে পারবেন না।’

বয়সকে কীভাবে বশে রেখে এই গতিশীল খেলাটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন, সেটাও ফাঁস করে দিলেন ব্রাভো, ‘আমরা জানি মাঠে আমরা দ্রুততর নই। তাই নিজেদের শক্তি আর দুর্বলতা বুঝেই আমরা খেলি। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খেলি। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা সবাই খেলি বিশ্বের সেরা অধিনায়কের নেতৃত্বে।’