এত 'বুড়ো' হাড়ের ভেলকিতেও গোল !
সিরি ‘আ’-র চলতি মৌসুমে চমক দেখিয়েই চলেছেন ফ্যাবিও কোয়াগ্লিয়ারেলা। ৩৬ বছর বয়সী এই ‘বুড়ো’ ফরোয়ার্ড গোল করার দৌড়ে টপকে গেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো তারকাকে। সাম্পদোরিয়ার হয়ে ২৭ ম্যাচে করেছেন ২১ গোল। শুধু কী ক্লাব, কোয়াগ্লিয়ারেলা দ্যুতি ছড়াচ্ছেন দেশের জার্সিতেও। ইউরো বাছাইপর্বে লিখটেনস্টেইনের বিপক্ষে করেছেন জোড়া গোল। ফ্যাবিও ক্যানাভারো-আন্দ্রে পিরলোদের ছাপিয়ে হয়েছেন ইতালির ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতা। কোয়াগ্লিয়ারেলা শীর্ষে থাকতে থাকতে আসুন জেনে নেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে বেশি বয়সী গোলদাতাদের কিছু স্মরণীয় নজির।
পরিসংখ্যান বলছে, আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতাদের তালিকায় বিলি মেরেডিথের নামটি সবার ওপরে। ম্যানচেস্টারের দুই ক্লাব ইউনাইটেড ও সিটির হয়ে মাঠে নামা মেরেডিথ ছিলেন ফুটবলের শুরুর দিকে খ্যাতনামা তারকা। ঠিক ১০০ বছর আগে, ১৯১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ গোলে জেতা ম্যাচে গোল করেছিলেন মেরেডিথ। ওয়েলসের সাবেক এই ফরোয়ার্ডের তখন বয়স ছিল ৪৫ বছর ৭৩ দিন। খেলার মাঠে দাঁতের খিলান চিবোনোর জন্য আলাদা করে নজর কাড়া মেরেডিথ জন্মেছিলেন ১৮৭৪ সালে।
তবে রেকর্ডটি আসলেই মেরেডিথের কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বিস্তর। ওয়েলস-ইংল্যান্ডের সেই ম্যাচ পুরোপুরিভাবে আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ছিল না, বরং এটিকে বলা হয় ‘ভিক্টরি ইন্টারন্যাশনাল’ ম্যাচ।
মেরেডিথকে এক পাশে সরিয়ে রাখলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতা হিসেবে উঠে আসে কেইথরয় কর্নেলিউসের নাম। পাঁড় ফুটবলপ্রেমী না হলে কর্নেলিউস নামটা অপরিচিত লাগতে পারে। তিনি যে খেলতেন ইউ.এস. ভার্জিন আইল্যান্ডের হয়ে। ১৯৬৮ সালে দ্বীপদেশ কুরাকাওয়ের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ভার্জিন আইল্যান্ড। দল ৬-১ গোলে হারলেও ওই ম্যাচ দিয়েই ইতিহাসের অংশ যান কর্নেলিউস। দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করার সময় তাঁর বয়স ছিল ৪৩ বছর ১৯৬ দিন।
তালিকায় কর্নেলিউসের পরের স্থানে আছেন টোঙ্গার ফুটবলার কিলিফি উয়েলে। বর্তমানে টোঙ্গা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করা উয়েলে ৪৩ বছর ২৫ দিন বয়সে গোল করেছিলেন নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিপক্ষে। তাঁর দল অবশ্য জিততে পারেনি, টোঙ্গা হেরেছিল ৪-২ ব্যবধানে।
পরের নামটি সিঙ্গাপুরের সাবেক এক স্ট্রাইকারের। ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৪২ বছর ১০৫ দিন বয়সে গোল করেছিলেন আলেক্সান্ডার ডুরিচ। সিঙ্গাপুরের জার্সিতে (২০০৭-২০১২) খেললেও ডুরিচের জন্ম সাবেক যুগোস্লাভিয়ার দোবোজে। কর্নেলিউস ও উয়েলের সঙ্গে ডুরিচের পার্থক্য—দলকে ৩-০ গোলের জয় এনে দিতে পেরেছিলেন তিনি।
ফুটবল সম্পর্কে কিছুটা জানাশোনা থাকলে এই তালিকায় পরের খেলোয়াড়ের নাম শুনলেই চিনে ফেলার কথা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজের নামটা যে এক রকম অমর করে রেখেছেন ক্যামেরুনের রজার মিলা! ১৯৯৪ বিশ্বকাপে রাশিয়ার বিপক্ষে ৪২ বছর ৩৯ দিন বয়সে গোল করা মিলা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক গোলদাতা হলেও আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিনি চতুর্থ।
‘বুড়ো’ গোলদাতাদের এই তালিকায় আরেক খ্যাতিমান ব্রিটিশ কিংবদন্তি স্ট্যানলি ম্যাথিউস। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে অবসরের আগেই ‘নাইটহুড’ পাওয়া ম্যাথিউস ১৯৫৬ সালে নর্দান আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ ব্যবধানে ড্র ম্যাচে গোল করেছিলেন ৪১ বছর ২৪৮ দিন বয়সে। ওই বছরই প্রথম ফুটবলার হিসেবে ব্যালন ডি’অর (ইউরোপিয়ান ফুটবলার অব দ্য ইয়ার) জিতেছিলেন ম্যাথিউস।
সবচেয়ে বেশি বয়সে জোড়া গোল করার রেকর্ড ইংল্যান্ড ও জাম্বিয়ার হয়ে খেলা জ্যাকি সুয়েলের। ১৯৬৫ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে জাম্বিয়ার ৩-২ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে ৩৮ বছর ২৩৮ দিন বয়সে জোড়া গোল করেছিলেন সুয়েল। তিন বছর আগে মৃত্যুর আগে ‘ম্যাচ অব দ্য সেঞ্চুরি’তে খেলা সর্বশেষ জীবিত ফুটবলারও ছিলেন সুয়েল। ১৯৫৩ সালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যাচটি খেলেছিলেন তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে।
সবচেয়ে বেশি বয়সে ‘আত্মঘাতী’ গোল করায় সবার ওপরে ডোয়াইট ফার্গুসন। ইউ.এস. ভার্জিন আইল্যান্ডের এই ফুটবলার ৪১ বছর ১৬৭ দিন বয়সে গ্রেনাডার বিপক্ষে গোল করেছিলেন নিজেদের জালে! তাঁর দল ম্যাচটা হেরেছিল ১০-০ ব্যবধানে।