বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে বিশেষ নিরাপত্তা দাবি বাংলাদেশের

নিউজিল্যান্ড থেকে বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ফাইল ছবি
নিউজিল্যান্ড থেকে বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ফাইল ছবি
>আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেই ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে বাংলাদেশ দল। বিসিবি এই দুই দেশেই চেয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।

বিমানবন্দর থেকে রাস্তা ফাঁকা করে বিদেশি দলকে হোটেল পর্যন্ত নিয়ে আসা শুধু বাংলাদেশেই কল্পনা করা যায়। উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোতেও পরিস্থিতিবিশেষে বাড়তি নিরাপত্তা পায় সফরকারী দলগুলো। তবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে এই দৃশ্য অকল্পনীয়। সেখানে নিরাপত্তা বলতে টিম হোটেলের নিরাপত্তারক্ষীদের মৃদু জিজ্ঞাসাবাদ। অনেক সময় সেটিও নয়।

তবে এখন থেকে ওই সব দেশে দল পাঠিয়েও আর নামমাত্র নিরাপত্তায় সন্তুষ্ট থাকবে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। খেলোয়াড়দের জন্য চাওয়া হবে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। আসন্ন আয়ারল্যান্ড সফর এবং তার পরপরই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের জন্য এর মধ্যেই চাওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী কাল এটি জানিয়ে বলেছেন, ‘ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর যেকোনো সফরের জন্যই, বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় সফর যেগুলো বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় হয়, এগুলো নিয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। আয়ারল্যান্ডে সফর আছে, এরপর আমরা ইংল্যান্ডে যাচ্ছি। বিশ্বকাপের আগে পাঁচ–ছয় দিনের একটা ক্যাম্প করব ইংল্যান্ডে। এই দুই সফরের নিরাপত্তা নিয়েই আমরা আয়ারল্যান্ড বোর্ড ও আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’

আগামী ১ মে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে যাবে বাংলাদেশ দল। এই সফরের জন্য আয়ারল্যান্ড বোর্ডকে তাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা পাঠাতে বলেছে বিসিবি। ‘আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছি, ক্রাইস্টচার্চ ঘটনার পর বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা পরিকল্পনা জানতে চাই। আমরা সেটি খতিয়ে দেখব। এর আগে তারা যা ব্যবস্থা নিয়েছে, আমরা তাতেই নির্ভর করেছি। এবার নিরাপত্তা পরিকল্পনা জানতে চেয়েছি, যেটা আগে চাইতাম না,’ বলেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী।

যেকোনো দ্বিপক্ষীয় বা ত্রিদেশীয় সিরিজেই সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হয়ে থাকে। সিরিজ বা টুর্নামেন্টের যাবতীয় কিছুই লেখা থাকে সেখানে। তবে নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলো এমওইউতে দু-একটি শর্ত হিসেবেই কেবল উল্লেখ থাকত। এত দিন নিরাপত্তার জন্য স্বাগতিক বোর্ড যে ব্যবস্থা নিত, বিনা বাক্য ব্যয়ে সেটিই মেনে নিত বিসিবি। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর ক্রিকেটের জন্য বিসিবি কোনো দেশকেই আর নিরাপদ মনে করছে না। আয়ারল্যান্ডের কাছে তাই বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে। আয়ারল্যান্ড বোর্ড অবশ্য কাল পর্যন্ত সেটি পাঠায়নি।

আয়ারল্যান্ড সফরের পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ খেলতে বাংলাদেশ দল যাবে ইংল্যান্ডে। বিশ্বকাপের নিরাপত্তা নিয়ে অবশ্য আলাদাভাবে কিছু চাওয়ার নেই। আইসিসির টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী সব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে আইসিসি ও আয়োজক দেশই সমন্বিত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকে। ইংল্যান্ডেও তা-ই হবে। তবে আইসিসির ব্যবস্থাপনার আওতায় যাওয়ার আগে ইংল্যান্ডে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় পাঁচ–ছয় দিন অনুশীলন ক্যাম্প করবে বাংলাদেশ দল। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তাঝুঁকি থাকতে পারে সেখানেও। বিসিবি তাই ওই কয় দিনের জন্যও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করেছে আইসিসিকে। নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আইসিসির নিরাপত্তা দলের কাছে এই পাঁচ–ছয় দিনের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিতে বলেছি। তারা সমন্বয় করে দেবে। আমরা প্রয়োজনীয় খরচ বহন করব।’

নিরাপত্তার প্রশ্নে আয়ারল্যান্ডের চেয়ে ইংল্যান্ডই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপত্তার হুমকি হওয়ার মতো ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে সেখানে। ক্রিকেটের জন্য দেশটি বেশি স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সময় লন্ডন ব্রিজে হামলার ঘটনার পর। ওই সময় বাংলাদেশ দল যে হোটেলে ছিল, সেখান থেকে দুই-তিন কিলোমিটারের বেশি নয় লন্ডন ব্রিজের দূরত্ব। অথচ হামলার ঘটনার পরও টিম হোটেলে বলতে গেলে বাড়তি কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থাই ছিল না। বিসিবির প্রধান নির্বাহী সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডে দলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা যেন সব সময় দলের সঙ্গে থাকেন। ওখানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সময় আমাদের একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।’

বিসিবি শুধু বাড়তি নিরাপত্তাই চাইতে পারে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া সংশ্লিষ্ট বোর্ড ও আয়োজকদের দায়িত্ব। চিন্তাটা ওখানেই। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলো ক্রিকেটের জন্য যে ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থায় অভ্যস্ত, এক ব্রেনটন টারান্টই সেটি ওলট-পালট করে দিয়েছেন।