বিশ্বকাপে বাংলাদেশ 'আপসেট' ঘটাবে, বললেন গ্রিনিজ

>

আবারও বাংলাদেশে গর্ডন গ্রিনিজ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম এই কোচ এবার ঢাকায় গলফ উপলক্ষে এলেও বলেছেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে

আজ গলফ ক্লাবে গর্ডন গ্রিনিজ। ছবি: শামসুল হক
আজ গলফ ক্লাবে গর্ডন গ্রিনিজ। ছবি: শামসুল হক

বাংলাদেশে এসেছেন বঙ্গবন্ধু কাপ গলফ ওপেন উপলক্ষে। আগামী দুই দিন ঢাকায় থাকবেন গলফকে ঘিরেই। আজ কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে আয়োজকেরা যতই অনুরোধ করুন, ‘প্লিজ গলফ নিয়ে প্রশ্ন করুন’, সাংবাদিকেরা ততই ক্রিকেট নিয়ে প্রশ্ন করেন! মানুষটি যখন গর্ডন গ্রিনিজ, সেখানে ক্রিকেট দূরে থাকে কী করে?

ইংল্যান্ডে ২০১৯ বিশ্বকাপ শুরু হতে দুই মাসও নেই। ইংল্যান্ড! বিশ্বকাপ! গ্রিনিজের চেয়ে ভালো বলতে পারবেন কে? ইংল্যান্ডের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন বলেই নয়, বাংলাদেশ তাঁর অধীনেই খেলতে গিয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপ। ইংলিশ কন্ডিশনে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে চমকজাগানিয়া ফল নিয়েই ফিরেছিল বাংলাদেশ। আবার যখন সেই ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ, গ্রিনিজ যথার্থ ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব, যিনি এবার বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে বলতে পারেন।

‘আশা করি, বাংলাদেশ ভালো করবে’—গ্রিনিজের শুরুটা একটু কূটনৈতিক। মধ্যে দীর্ঘ যে ব্যাখ্যাটা দিলেন, তাতে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এলই না। বর্তমানে কোন দল কেমন খেলছে, সেটির ওপর ছোটখাটো একটা বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ। একটা পর্যায়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে বললেন, ‘বাংলাদেশ ভালো খেললে অনেক বড় দলের বিপক্ষে অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশ অনেকটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ-পাকিস্তানের মতো (আগাম বলা যায় না কী করবে), একদিন তারা ভীষণ ভালো খেলে তো আরেক দিন মোটেও ভালো ক্রিকেট খেলে না। আশা করি, এই টুর্নামেন্টে তারা ধারাবাহিক ভালো খেলবে। অন্যবারের তুলনায় এবার টুর্নামেন্টের ফরম্যাট ভিন্ন। অনেক খেলা হবে এবার। এই দলটা অবশ্য আগের চেয়ে অনেক স্থিতিশীল, অনেক ধারাবাহিক। আশা করি ভালো করবে।’

গ্রিনিজ ‘আপসেট’ শব্দটাই ব্যবহার করেছেন। হঠাৎ হঠাৎ ভীষণ শক্তিশালী দলকে বাংলাদেশ যখন হারিয়ে দিত, একটা সময় আপসেট বা অঘটন শব্দটা ব্যবহার হতো। কিন্তু গত চার-পাঁচ বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে ধারাবাহিক সাফল্যে মাশরাফিরা যেভাবে নিজেদের পরিচিত করেছেন, তাতে অঘটন বা আপসেট শব্দটা ব্যবহারে অনেকেই আপত্তি করবেন। আজ আপসেট ঠিক কোন অর্থে বুঝিয়েছেন, গ্রিনিজ সেটির বিশদ ব্যাখ্যাও দিলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক ভালো করছে। তবে অধারাবাহিকও বটে। আসলে এখন আপনি বলতে পারবেন না, অমুক দলটা ছড়ি ঘুরাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বে। বেশির ভাগ দল এক-দুই বছর শীর্ষে থাকছে আবার নিচে নেমে যাচ্ছে। পুরো টুর্নামেন্টে মনে হচ্ছে প্রতিটি দলই ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে শেষ চারে যেতে। একজন দর্শক হিসেবে বিনোদনদায়ী ম্যাচই দেখতে চাইব। হ্যাঁ, অবশ্যই দেখতে চাইব বাংলাদেশ ভালো করুক।’

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আগেই বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভালো করেছিল। গত ২০ বছরে বদলেছে অনেক কিছু। বদলেছে বাংলাদেশও। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে যে দলটা খেলতে গিয়েছিল, তাদের কাছে খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না। ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যে দলটা খেলতে যাবে, তাদের কাছে তাই থাকবে বিপুল প্রত্যাশা। ওয়ানডে ক্রিকেটে এই দলটা যে ভীষণ অভিজ্ঞ। গ্রিনিজের কাছে ১৯৯৯ ও ২০১৯—দুই দলের পার্থক্য করতে বললে আত্মসমর্পণের সুরে বললেন, ‘এবার বিশ্বকাপ খেলতে কোন দলটা যাচ্ছে, সেটা জানি না। তাদের সঙ্গে আমি যেহেতু কাজ করি না। আমার পক্ষে দল সম্পর্কে কিছু বলা কঠিন। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ভীষণ পরিশ্রম করেছিলাম আমরা। এখনকার দল সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা নেই। আমার কাছে অনেকে নতুন, যাদের ঠিক চিনি না। আশা করি, তারা ভালো করবে। ভালো করতে ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে খেলোয়াড়েরা উন্মুখ। তাদের জন্য শুভকামনা থাকবে।’

শুভকামনা জানালেন বটে, তবে গ্রিনিজ কিন্তু বাস্তবতাও মনে করিয়ে দিলেন। এবার বিশ্বকাপ যে ধাঁচে হবে, এক-দুই ম্যাচ জিতেই পরের পর্বে যাওয়া যাবে না। শেষ চারে যেতে হলে ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলেই যেতে হবে।