বিশ্বকাপে দলগুলোর ভাগ্য গড়ে দিতে পারে যে পাঁচটি বিষয়

গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর বাংলাদেশ দল। এবার ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপে ভালো সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। ছবি: টুইটার
গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর বাংলাদেশ দল। এবার ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপে ভালো সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। ছবি: টুইটার
>

ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হচ্ছে ৩০ মে থেকে। জমকালো এই টুর্নামেন্টে সব দলই এগোবে নিজ নিজ শক্তিমত্তা মাথায় রেখে। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে দলগুলোর ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে বেশ কিছু বিষয়

বিশ্বকাপের বাকি মাত্র মাস দেড়েক। দলগুলো ব্যস্ত সম্ভাব্য সেরা স্কোয়াড বাছাইয়ে, নিউজিল্যান্ড তো এরই মধ্যে চূড়ান্ত দলও ঘোষণা করে দিয়েছে। সব দলই এগোবে নিজ নিজ শক্তিমত্তাকে মাথায় রেখে, তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে দলগুলোর ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে বেশ কিছু বিষয়:

ইংলিশ কন্ডিশন
আইসিসি ইভেন্টে ব্যাটিংবান্ধব পিচে বানানো হয়, এমন একটি সাধারণ ধারণা প্রচলিত আছে। তবে এবারের বিশ্বকাপটা ইংল্যান্ডে বলেই কি না, হাই স্কোরিং-ম্যাচই হবে, সেই নিশ্চয়তা ঠিক দেওয়া যাচ্ছে না। ইংলিশ কন্ডিশন যে বরাবরই ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে ভালোবাসে!

উইকেট যতই ব্যাটিংবান্ধব হোক, আকাশে মেঘ থাকলে নতুন বলে বোলাররা নিশ্চিতভাবেই সুইং পাবেন। আর ঠান্ডা আবহাওয়ায় সুইং বোলিংয়ের সামনে ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্ব নতুন কিছু নয়। সে ক্ষেত্রে রাবাদা-বোল্টদের মতো সুইং বোলারদের সামনে খাবি খেতে হতে পারে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যাটসম্যানদেরও।

তবে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় সবশেষ আইসিসি ইভেন্টের পরিসংখ্যান বলছে, নতুন বলের তোপ সামলে নিতে পারলে এই কন্ডিশনেও রানবন্যা ছোটাতে পারেন ব্যাটসম্যানরা। ইংল্যান্ডে ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ১৫ ম্যাচে ৭ বার ৩০০ ছাড়ানো ইনিংস খেলেছিল দলগুলো। অথচ তার চার বছর আগে, ২০১৩ সালে এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ১৫ ম্যাচে ৩০০ ছাড়ানো স্কোর হয়েছিল মাত্র ২ বার!

ইংল্যান্ডে ভালোই সমর্থন পাবে বাংলাদেশ দল। ছবি: রয়টার্স
ইংল্যান্ডে ভালোই সমর্থন পাবে বাংলাদেশ দল। ছবি: রয়টার্স


টুর্নামেন্টের ফরম্যাট
এই বিশ্বকাপের অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠতে পারে ফরম্যাট। এবার বিশ্বকাপে নেই কোনো গ্রুপিং। অর্থাৎ, নকআউটে পর্বে যাওয়ার আগে প্রতিটি দলই একে অন্যের মুখোমুখি হবে একবার করে। ৯টি করে ম্যাচ শেষেই নির্ধারিত হবে কোন চার দল পাবে সেমিফাইনালের টিকিট।

আর এই সূচির কারণেই চমক উপহার দিতে পারে এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ৯ ম্যাচ ধরে ছন্দ ধরে রাখা মোটেও সহজ কাজ নয়। যে কারণে ভালো শুরু করেও শেষের ব্যর্থতায় যেমন কপাল পুড়তে পারে, তেমনি শুরুটা ভালো না হলেও পরপর কয়েক ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফিরে আসার সুযোগ থাকছে।

পরিবর্তিত এই সূচিতে ইনজুরির বিষয়টিও দারুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ফুটবলের ক্ষেত্রে যেমনটা দেখা যায়, দীর্ঘ লীগ শেষ করতে করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ই ইনজুরিতে পড়ে যায়। এবার বিশ্বকাপেও তেমন পরিস্থিতির উদ্রেক হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। খেলোয়াড়দের ফিটনেসের ব্যাপারটাও তাই দিন শেষে দলগুলোর ভাগ্য ঠিক করে দিতে পারে।

সবশেষ এই সূচিতে খেলা হয়েছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপে। সেবার বিদায়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। এবারও সে রকম চমকজাগানিয়া কিছু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না মোটেও।

উপমহাদেশের দর্শক
খেলা যদিও হবে ইংল্যান্ডে, কিন্তু উপমহাদেশের দলগুলোর মনে হলেও হতে পারে, তারা নিজেদের ঘরের মাঠেই খেলছে। মনে হবে না-ইবা কেন, যুক্তরাজ্যে উপমহাদেশের দলগুলো কী ব্যাপক সমর্থন পায়, সে কথা তো আর কারোর অজানা নয়! উপমহাদেশের প্রচুর লোক বাস করেন যুক্তরাজ্যে, মাঠে তাই দর্শক সমর্থনের অভাব হয় না বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো দলগুলোর। দর্শক সমর্থনের বিষয়টি তাই বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে উপমহাদেশের চার দলকে।

লর্ডসের কন্ডিশন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে ব্যাটসম্যানদের জন্য। ছবি: টুইটার
লর্ডসের কন্ডিশন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে ব্যাটসম্যানদের জন্য। ছবি: টুইটার


আগ্রাসী ব্যাটিং
২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ গিয়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর থেকে যেন ওয়ানডে ক্রিকেটে বিপ্লবের মিশনে নেমেছে ইংলিশরা! ওয়ানডে ব্যাটিং খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে দলটি। শুরুতে দেখে খেলে শেষে মেরে খেলার যে ‘অলিখিত নিয়ম’ ছিল ওয়ানডেতে, সেটি ভেঙে দিয়েছে ইংল্যান্ড। যার প্রমাণ মিলবে পরিসংখ্যানেও। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ৩৪ বার ৩০০ ছাড়ানো ইনিংস খেলেছে ইংল্যান্ড! অন্য যেকোনো দলের তুলনায় যা অনেক বেশি। ওয়ানডেতে দলীয় সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটিও নতুন করে লিখেছে দলটি। একমাত্র দল হিসেবে গত চার বছরে চারবার ৪০০-র বেশি স্কোর করেছে ইংল্যান্ড। চার বছর আগের তুলনায় ব্যাটিং যে এখন অনেক বেশি আগ্রাসী, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই ইংল্যান্ডই।

শুধু ইংল্যান্ড নয়, আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে অন্য দলগুলোও কিন্তু পিছিয়ে নেই। ৩০০ ছাড়ানো ইনিংসে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কাছাকাছি আছে ভারত। গত বিশ্বকাপের পর থেকে মোট ২১ বার ৩০০-এর বেশি স্কোর করেছে তারা। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮ বার করে ও নিউজিল্যান্ডও ১৫ বার ৩০০-এর বেশি স্কোর করেছে।

ব্যাটসম্যানদের এই আগ্রাসী হয়ে ওঠার পেছনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অবদানও কম নয়। যত বেশি টি-টোয়েন্টি খেলছেন ব্যাটসম্যানরা, তত নতুন নতুন কৌশল রপ্ত করছেন দ্রুত রান তোলার। আগে তাই ক্রিজে এসেই শট খেলা কঠিন হলেও এখন পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়েই উইকেটে আসামাত্রই হাত খুলতে হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই দিকটি প্রভাব ফেলেছে ওয়ানডেতেও। দলগুলোর আগ্রাসী ব্যাটিং তাই ঘুরিয়ে দিতে পারে যেকোনো ম্যাচের মোড়।

লেগ স্পিনারদের রহস্য
ব্যাটসম্যানদের আগ্রাসী ব্যাটিং থামাতে অধিনায়কদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে পারেন লেগ স্পিনাররা। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিটি দলই তাই অন্তত একজন করে লেগ স্পিনার তৈরি করে রেখেছে, ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে লেগ স্পিনারদের সাফল্যও চোখে পড়ার মতো। তাই অনেক নামী ব্যাটসম্যানদের ভিড়ে যদি রশিদ খান, ইমরান তাহির, কুলদীপ যাদব, অ্যাডাম জাম্পা বা ইশ সোধির মতো লেগ স্পিনার টুর্নামেন্টের নায়ক হয়ে উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।