মিনহাজুলের গায়ে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ব্লেজার কেন?

>কাল মিনহাজুলের ব্লেজার এভাবে স্মৃতিকাতর করে তুলবে, কে ভেবেছিল? প্রধান নির্বাচক পরে এসেছিলেন ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ব্যবহৃত বাংলাদেশ দলের ব্লেজার। একদিন যাঁর বিশ্বকাপ দলে জায়গা হচ্ছিল না, কাল তাঁর কণ্ঠেই ঘোষিত হলো বিশ্বকাপের দল! মিনহাজুলের পরনের ব্লেজার ফিরিয়ে আনল সেই স্মৃতিও
কাল ২০ বছর আগের ব্লেজার পরে এসেছিলেন মিনহাজুল। ছবি: প্রথম আলো
কাল ২০ বছর আগের ব্লেজার পরে এসেছিলেন মিনহাজুল। ছবি: প্রথম আলো

মিনহাজুল আবেদীনের ব্লেজারটা বড্ড স্মৃতিকাতর করে তুলল কাল। বুকপকেটের সেলাই করা ব্যাজে লেখা, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ ইংল্যান্ড-৯৯’। ২০ বছর আগে বিসিবির সেই পুরোনো লোগো, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া—টাইম মেশিনে চড়ে সবাই যেন ফিরে গেলেন ২০ বছর আগে। মিনহাজুলও বলছেন, ’৯৯ বিশ্বকাপের কথা মনে করেই গায়ে চাপিয়েছেন ব্লেজারটি।

১৯৯৯ সালেও বিশ্বকাপ হয়েছিল ইংল্যান্ডে। বাংলাদেশ সেবারই প্রথম খেলে বিশ্বকাপে। কিন্তু ওইবার নির্বাচকদের দলে প্রথমে জায়গা পাননি মিনহাজুল। এর দুই বছর আগে আইসিসি ট্রফি জেতার পর সংবাদমাধ্যমকে উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমি অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছি আগামী বিশ্বকাপের দিকে। এত দিন জাতীয় দলে খেলার পর বিশ্বকাপ খেলার গৌরব থেকে বঞ্চিত হতে চাই না।’ অথচ তিনিই একটু হলেই হতে বসেছিলেন ‘বঞ্চিত’ই!

ওই সময়ের তো বটেই, বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়েও মিনহাজুলকে কেন রাখা হয়নি বিশ্বকাপের দলে, এ প্রশ্নের উত্তরে শোনা যায়, কোচ গ্রিনিজের ‘ইয়াং ব্লাড’ তত্ত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁকে দলের বাইরে রাখেন নির্বাচকেরা। মিনহাজুলকে কেন শুরুতে বিশ্বকাপ দলে রাখা হয়নি, এই প্রশ্নটা কোচ গ্রিনিজকে করা হয়েছিল বিশ্বকাপ চলার সময়। তাঁর উত্তর ছিল, ‘বাংলাদেশ শুধু এই বিশ্বকাপের কথাই ভেবেছে। অথচ আমি মনে করি ভাবা উচিত ছিল আগামী ১০ বছরের কথা।’

বিশ্বকাপে রওনা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত কানাঘুষা চলে, জনতার দাবিতে মিনহাজুল দলে যোগ দিচ্ছেন কি না। ১৩ এপ্রিল সফর-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনেই আসে একজন ক্রিকেটারের আজন্মলালিত স্বপ্নপূরণের ঘোষণা। মানুষের অসীম আস্থা-ভালোবাসা, সর্বোপরি প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের চাপে তাঁকে দলভুক্ত করা হয় শেষ মুহূর্তে। বিশ্বকাপ দল ইংল্যান্ডে রওনা হওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে আইসিসির অনুমোদনে মিনহাজুল অন্তর্ভুক্ত হন বাংলাদেশের ১৫ খেলোয়াড়ের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে।

দলে সুযোগ পান উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জাহাঙ্গীর আলমের জায়গায়। স্বপ্নের বিশ্বকাপে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৯৯৯ সালের ১৪ এপ্রিল, পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় এমিরেটসের উড়ানে ইংল্যান্ডে রওনা দেয় বাংলাদেশ। সান্ত্বনা হিসেবে দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয় জাহাঙ্গীরকেও ।

মিনহাজুলও আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। এডিনবরায় স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৬৮ রান করে হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ম্যাচের পর মিনহাজুলকে ফোন দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপরাজিত ৫৩ রান করেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচেও। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৮ রানের ইনিংসটা খেলে ড্রেসিংরুম ফেরার পর প্যাড-গ্লাভস খুলতে খুলতে মনে জমে থাকা সব ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন মিনহাজুল। বলতে চাইছিলেন, ‘আমাকে বাদ দেওয়া? দেখিয়ে দিলাম!’ সেদিন ক্ষোভটা কার ওপর ঝেড়েছিলেন, গ্রিনিজের ওপর? ২০ বছর আগের স্মৃতি মনে করে মিনহাজুল হাসেন, ‘না, গ্রিনিজ নয়; ক্ষোভ ঝেড়েছিলাম ওই সময় বিসিবির দুই প্রভাবশালী কর্মকর্তার ওপর।’

সেই দুই প্রভাবশালী কর্মকর্তার নাম নাই-বা বলা হলো। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ দুই সংগঠকের অবদানও যে কম নয়! মিনহাজুল অতীতের স্মৃতি পেছনে রেখে ফিরে আসেন বর্তমানে, ‘এবার আমাদের দলটা যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ হয়েছে, আশা করি ভালো কিছুই হবে।’ কী কাকতালীয়, ২০ বছর পর বাংলাদেশ দল যখন ইংল্যান্ডে আরেকটি বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ খেলতে যাচ্ছে, তখন সেই মিনহাজুলই প্রধান নির্বাচক! একদিন যাঁর বিশ্বকাপ দলে জায়গা হচ্ছিল না, কাল তাঁর কণ্ঠেই ঘোষিত হলো বিশ্বকাপের দল!