যে কারণে প্রস্তুতি ম্যাচে হারতে চান মাশরাফি

প্রস্তুতি ম্যাচে হারলে সুবিধা, মনে করেন মাশরাফি। ছবি: এএফপি
প্রস্তুতি ম্যাচে হারলে সুবিধা, মনে করেন মাশরাফি। ছবি: এএফপি
>

বাংলাদেশের অধিনায়ক মনে করেন, প্রস্তুতি ম্যাচে হারলে নিজেদের ভুলগুলো খুব ভালোভাবে চোখে পড়ে, আসল ম্যাচের যেটা শুধরে নেওয়া যায়।

মাশরাফি বিন মুর্তজা কী ‘জিনিস’, এই কদিনে বুঝে গেছেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের নিরাপত্তাকর্মীরা! কাল সকালে যেমন আকসুর (দুর্নীতি দমন ইউনিট) এক কর্মকর্তা সোফিয়া গার্ডেনে এসেই জড়িয়ে ধরলেন বাংলাদেশ অধিনায়ককে। আকসুর ওই কর্মকর্তার সঙ্গে যখন ঠাট্টা-রসিকতায় মেতে উঠেছেন মাশরাফি, ওপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন এক নারী নিরাপত্তাকর্মী। অধিনায়ক আকসুর কর্তাকে সাবধান করলেন, ‘আমাকে যেভাবে জড়িয়ে ধরলে, ওকে আবার একইভাবে ধোরো না!’

শুনে আকসু কর্তা হেসেই বাঁচেন না! অথচ আকসু শব্দটা শুনলেই এখন ক্রিকেটাররা কেন যেন শক্ত হয়ে যান। যতই সৎ থাকুন, ঘাড়ের কাছে বন্দুকের নল তাক করা থাকলে একটু ভয় কাজ করবেই। মাশরাফির কাছে আকসু কিংবা পাথুরে মুখের নিরাপত্তাকর্মী-কিছুই ভীতিকর নয়। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের দেখিয়ে যেমন নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে রসিকতা করেন, ‘দে আর ব্যাড গাইজ, হার্মফুল ফর আস! কিপ আইস অন দেম।’ মাশরাফির কথা শুনে নিরাপত্তাকর্মীরা শুধু হো হো করে হাসেন। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের নির্ভার চেহারাটা দেখে বোঝার উপায় নেই, আজ ভারতের বিপক্ষে একটা ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। অবশ্য ম্যাচটা শুধুই প্রস্তুতি নেওয়ার। মাশরাফি হয়তো বলবেন, এ ম্যাচ নিয়ে এত সিরিয়াস হওয়ার কী আছে?

প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে তিনি কখনোই সিরিয়াস নন, বরং একটা সংস্কার লালন করছেন দীর্ঘদিন। মাশরাফি প্রস্তুতি ম্যাচ হারতেই চান! কেন চান, সেটির দুটি যুক্তি আছে তাঁর কাছে। প্রথমত, হারলে নিজেদের ভুলগুলো খুব ভালোভাবে চোখে পড়ে, আসল ম্যাচের আগে যেটা শুধরে নেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, মানসিক জড়তা কেটে যায়। আরেকভাবে বললে, ‘কুফা’ কেটে যায়!

অনুশীলনের ফাঁকে ড্রেসিংরুমের নিচে দাঁড়িয়ে মাশরাফি মনে করিয়ে দেন ২০১৫ বিশ্বকাপের কথা। ব্রিসবেনে প্রায় দুই সপ্তাহ প্রস্তুতি ক্যাম্পের পর বাংলাদেশ টানা চারটা প্রস্তুতি ম্যাচ হেরেছিল। বাংলাদেশকে তাই ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু করতে হয়েছিল টানা হারের যন্ত্রণা নিয়ে। ‘টানা হেরেছিলাম বলে অনেক কথা উঠেছিল। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, আমি খুব খুশি হয়েছিলাম! প্রস্তুতি ম্যাচ হেরেছিলাম বলেই তো বিশ্বকাপটা ভালো খেলেছিলাম!’ -মাশরাফি ফিরে যান চার বছর আগে।

এই ইংল্যান্ডে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও বাংলাদেশ ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচই হেরেছিল। এবার অবশ্য কমই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। আজ কার্ডিফে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর শুরু হবে তাদের ২০১৯ বিশ্বকাপ অভিযান। মাশরাফি অবশ্য এত প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার প্রয়োজনীয়তাও দেখেন না, ‘পাঁচটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পর প্রস্তুতি ম্যাচ না খেললেও চলে। হ্যাঁ, কোচের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কিছু খেলোয়াড়কে দেখতে চান। কয়েকটি পজিশন নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে চান। তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে প্রস্তুতি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খেলোয়াড়েরা তো টানা খেলার মধ্যেই আছে। জানেন, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বারবার বৃষ্টিতে ম্যাচ পেছাচ্ছিল বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুরুত্বপূর্ণ অনেক খেলোয়াড়কে মাঠেই নামাতে চায়নি। যদি চোটে পড়ে যায় কেউ! চোটে পড়ার আশঙ্কা তো আমাদেরও ছিল।’

মাশরাফির কাছে এখন মানসিকভাবে চিন্তামুক্ত আর শতভাগ ফিট থাকাটাই বড় টনিক। তাই বলে আজ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারতে মাঠে নামবে? যে ম্যাচই হোক, হারতে কোনো দল খেলতে নামে না। মাশরাফিরাও নামবেন না। তবে হ্যাঁ, চাপমুক্ত হয়ে খেলবেন। যে ম্যাচে জয়-পরাজয়ের গুরুত্ব নেই, সেটিতে আবার চাপ কী!